Loading Now

আদা-রসুনে বড় লোকসানে আমদানিকারকরা, খুচরায় অত্যধিক লাভ

অনলাইন ডেক্স ।।

মৌসুম না হওয়ায় বাজারে দেশি আদা নেই। চীন থেকে আমদানি করে মেটানো হচ্ছে চাহিদা। রসুনও এখন আমদানিনির্ভর। এসব আদা-রসুনে বড় অঙ্কের লোকসান গুনছেন আমদানিকারকরা। আর খুচরা বিক্রেতারা লাভ করছেন কয়েক গুণ বেশি।

 

ভোগ্যপণ্যে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। বাজারের আড়তদার ব্যবসায়ীরা বলছেন, খাতুনগঞ্জের আড়তগুলোতে ক্রেতা একেবারে কম। আর এতে পাইকারিতে আদা-রসুনের দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছে। আমদানিকারকরা বলছেন, প্রতি কেজি আদা-রসুনে ৩০-৪০ টাকা ক্ষতি হচ্ছে। এখন যে লোকসান গুনছেন, তা ব্যবসা করে আগামী ১০ বছরেও পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দেশে বছরে রসুনের চাহিদা প্রায় সাত লাখ টনের মতো। এর মধ্যে পাঁচ লাখ টনের কিছু বেশি রসুন দেশে উৎপাদিত হয়। অবশিষ্ট রসুন আমদানি করতে হয়। আমদানি করা রসুনের ৯৫ শতাংশের বেশি আসে চীন থেকে। দেশে বার্ষিক আদার চাহিদা তিন লাখ টনের বেশি। এর মধ্যে অর্ধেকের মতো আদা আমদানি করে দেশের চাহিদা মেটাতে হয়। বর্তমানে খাতুনগঞ্জের বাজারে শুধু চীনের আদা-রসুন পাওয়া যাচ্ছে।

আমি নিজেই যে আদা-রসুন আমদানি করি, সেগুলো ধরতে পারি না। বন্দর থেকে ট্রাকযোগে আড়তে চলে যায়। আবার আড়তদাররা এসব বস্তা হিসেবেই বিক্রি করেন। খুচরা বাজার থেকে কিনতে গেলে এসব আদা ১৭০-১৮০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।- আমদানিকারক মীর মোকাররম হোসেন

খাতুনগঞ্জের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এমএসএ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল আদা ও রসুন আমদানি করে। খাতুনগঞ্জ বাদে রাজধানী ঢাকার শ্যামবাজারসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে সরবরাহ করেন প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার মীর মোকাররম হোসেন।

মোকাররম হোসেন বলেন, ‘গত বছর ১৮০ কনটেইনার মাল (আদা-রসুন) নামছে, তাও আমরা বাজার (সঠিক মূল্য) পেয়েছি। এখন মাল নামছে ৩০ কনটেইনার, তারপরেও আমরা বাজার পাচ্ছি না। হয়তো অর্থনীতির সাইকেলটা স্টপ হয়ে আছে। এতে এ সমস্যা হচ্ছে। ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘আদা-রসুনে বিগত ৫০ বছরের ব্যবসার ইতিহাসে এমন লোকসান হয়নি। রসুনে বর্তমানে একেক কনটেইনারে (২৭ টন) ১৫-১৬ লাখ টাকা নাই (লোকসান)। একেক কেজিতে ৩০-৩৫ টাকা নাই। বন্দরে চলতি সপ্তাহে আসা ১২ কনটেইনার রসুনে দুই কোটি ৪০ লাখ টাকা লস হয়েছে। রসুনের কস্টিং (আমদানিমূল্য) হয়েছে কেজিপ্রতি ১৪৪ টাকা, কিছু কিছু রসুন খাতুনগঞ্জের আড়তে ৯৮-৯৯ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।’

 

আদার দরপতনের বিষয়ে আমদানিকারক মীর মোকাররম হোসেন বলেন, ‘আদায় প্রতি কেজিতে ৩৫ টাকা করে লস। জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর আসা পর্যন্ত আমরা ধারাবাহিক লস দিয়ে যাচ্ছি। এখন বন্দরে আমার যে ৮ কনটেইনার আদা এসেছে, তাতে ৭৬ লাখ টাকার বেশি লস হবে। এ ৭৬ লাখ টাকা পুষিয়ে উঠতে আমার কমপক্ষে ১০ বছর লাগবে। বর্তমানে আদার কস্টিং হচ্ছে ১৩৮ টাকা, কিন্তু খাতুনগঞ্জের আড়তে ১০৫-১০৮ টাকায় সরবরাহ দিতে হচ্ছে। তারা (আড়তদাররা) হয়তো কেজিতে ২-৩ টাকা যুক্ত করে খুচরা দোকানিদের কাছে বিক্রি করছেন।’

তিনি বলেন, ‘আমি নিজেই যে আদা-রসুন আমদানি করি, সেগুলো ধরতে পারি না। বন্দর থেকে ট্রাকযোগে আড়তে চলে যায়। আবার আড়তদাররা এসব বস্তা হিসেবেই বিক্রি করেন। খুচরা বাজার থেকে কিনতে গেলে এসব আদা ১৭০-১৮০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।’

খাতুনগঞ্জের মেসার্স শেলি এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার রনি বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের আড়তে ১০৮ টাকায় আদা বিক্রি করছি। আমাদের দোকানভাড়া, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ছাড়াও নানান খরচ রয়েছে। মূলকথা হচ্ছে, বাজারে ক্রেতা একেবারে কমে গেছে। যে কারণে বাজারে প্রতিনিয়ত দাম কমছে।’

পাশের হামিদউল্লাহ মিয়া বাজারের আদা-রসুন ব্যবসায়ী আবু তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা পাশের আড়ত থেকে বস্তা হিসেবে কিনে খোলা বিক্রি করি। আশপাশের ছোট মুদি দোকানিরা আমাদের কাছ থেকে খোলা আদা রসুন কিনে নিয়ে যায়। আমরা প্রতি কেজি আদা ১১৫-১২০ টাকা এবং রসুন ১০৮-১১০ টাকায় বিক্রি করছি।’

তিনি বলেন, ‘একই আড়ত থেকে হকার কিংবা উপজেলাগুলোর বড় মুদি দোকানিরা আদা-রসুন কেনেন। কিন্তু হকারদের কোনো খরচ নেই। খুচরায় কোথাও ১৪০ টাকার নিচে আদা-রসুন বিক্রি হয় না। কোথাও কোথাও রসুন ১৬০ টাকা, আদা ১৮০-১৯০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।’

 

‘মোট কথা হচ্ছে- আড়তে কিংবা খাতুনগঞ্জে যে দামে আদা, রসুন বিক্রি হচ্ছে, আসল ভোক্তারা সে সুফল ভোগ করতে পারছে না। ভোক্তা পর্যায়ে যেতে এসবের দাম বেড়ে যাচ্ছে।’

আমদানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সাধারণ পাইকারি বিক্রেতারা অনেক বেশি লাভবান হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

খাতুনগঞ্জের আড়ত থেকে কিনে পাঁচ মিটার দূরত্বে পাশেই ফুটপাতের দোকানে কেজিতে ৩০ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে আদা-রসুন। ওই দোকানের এক তরুণ খুচরা বিক্রেতা নিজের নাম প্রকাশ না করে বলেন, আমি দোকানে নিয়মিত বসি না। এখন আদা ১৩৫-১৪০ টাকা, রসুন ১৪০ টাকা, পেঁয়াজ ৮০-৮৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি।

 

চাক্তাইয়ের আড়তদার ব্যবসায়ী মেসার্স বশর অ্যান্ড সন্সের আবুল বশর বলেন, ‘দেশের উত্তরাঞ্চলের মোকামগুলোতে এখনো দেশি পেঁয়াজ রয়েছে। মৌসুম শেষের দিকে হওয়ায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। তবে ভারতে এখন পেঁয়াজের দাম আমাদের দেশের তুলনায় অনেক কম। সরকার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য কিছু আইপি (ইমপোর্ট পারমিট) ছেড়েছিল। এতে গত দুই সপ্তাহে কিছু পেঁয়াজ স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে দেশে এসেছে। এখন আবার আইপি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যে কারণে আমাদের বাজারে পেঁয়াজের দাম কমছে না। বর্তমানে আড়তগুলোতে মানভেদে ৬৫ থেকে ৭৮ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘চাক্তাই খাতুনগঞ্জের আড়তে এখন প্রচুর পেঁয়াজ রয়েছে। প্রতিদিন কয়েক ট্রাক পেঁয়াজ এখানে আসছে। তবে অনুপাতিকহারে আদা-রসুনের দাম অনেক কম।’

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গত ১ সেপ্টেম্বর তারিখের বাজারদর পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ঢাকার কয়েকটি খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আমদানি করা আদা বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২৭০ টাকা কেজিতে। এক সপ্তাহ আগে ১৫০-২৭০ টাকায় এবং এক মাস আগে ১২০-২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। গত বছর এই সময়ে একই আদা বিক্রি হয়েছিল ২০০-২৬০ টাকা।

তথ্য সূত্র: জাগো নিউজ,,,,,

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED