এসএসসি পরীক্ষা: মাঠে থাকছে বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের ১৬ ভিজিলেন্স টিম
নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কঠোর নজরদারির মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু ও নকলমুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিভাগের এসএসসি (সমমান) পরীক্ষা। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবারে দৃষ্টান্তমুলক কড়া ব্যবস্থাপনায় নগর থেকে তৃণমূলের বিদ্যালয়গুলোতেও যথাযথ নিয়ম মেনে পরীক্ষা সম্পন্ন হচ্ছে। যার কারনে অসাদুপায় অবলম্বন কিংবা অবৈধ সুবিধা পাচ্ছে না কোন শিক্ষার্থী। এছাড়া কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্তরাও শিক্ষাবোর্ডের সহায়তায় শৃঙ্খলা বজায়ে সক্রিয় রয়েছেন।
সুষ্ঠু ও নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা সম্পন্নে মাঠে নেমেছেন খোদ বোর্ড চেয়ারম্যানও। তিনি নিজে বিভাগজুড়ে নানামাধ্যমে কঠোর মনিটরিং করছেন। একইসাথে পরীক্ষা অনুষ্ঠিতের দিনগুলোতে নিজে দুর-দুরান্তের কেন্দ্রগুলোতে নিরলস ছুটছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ অনুষ্ঠিত ৪র্থ পরীক্ষার দিনে বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নে তালুকদার হাট হাই স্কুল এন্ড কলেজ , জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরামদ্দি ইউনিয়নে চরামদ্দি ডব্লিউ’কে মাধ্যমিক বিদ্যালয় , চরাদি ইউনিয়নের ফজলুল হক মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও শেষে সদর উপজেলার সিংহেরকাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা চলাকালীন পরিদর্শন করেছেন খোদ বোর্ড চেয়ারম্যান ড. ইউনুস আলী সিদ্দীকি নিজেই। এর আগে গত সপ্তাহ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত তিনটি পরীক্ষাগুলোতে নিজের দুরদর্শীতাকে কাজে লাগিয়ে প্রত্যেক কেন্দ্রে ছুটছেন প্রতিনিয়ত। পরীক্ষার প্রথম দিনেই বোর্ড চেয়ারম্যান বরিশাল নগরী ও সদর উপজেলার প্রত্যেকটি কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। দ্বিতীয় দিনে রাজাপুর উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্র ও তৃতীয় দিনে উজিরপুর উপজেলার প্রত্যেকটি পরীক্ষা কেন্দ্রে সব ধরণের অসদুপায় বন্ধ ও নির্বিঘ্নে পরীক্ষা অনুষ্ঠিতে স্ব-শরীরে পরিদর্শন করেছেন। এর মধ্যে তিনি কয়েকজনকে পরীক্ষায় অবৈধ পহ্না অবলম্বনের দায়ে শাস্তির সম্মুখিনও করেছেন। এছাড়া বাকি পরীক্ষাগুলোতেও বিভাগজুড়ে শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানের পরিদর্শন অব্যাহত থাকবে বলেও জানা গেছে।
এদিকে শুধু পরিদর্শনই নয়, বিভাগজুড়ে কেন্দ্রগুলো কোন অপ্রিতিকর ঘটনা ঘটলে ফোন পাওয়া মাত্রই সাথে সাথে প্রেরণ করা হচ্ছে ভিজিলেন্স টিম। শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানের তত্ত্বাবধানে পরীক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায়ে গঠন করা হয়েছে প্রায় দুই’ শত জন শিক্ষক নিয়ে ১৬ ভিজিলেন্স টিম। যেখানে শুধু মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকরাই নন, যুক্ত আছেন কলেজের সিনিয়র শিক্ষকরাও। কোন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অনিয়ম কিংবা অবৈধ পহ্না অবলম্বনের খবর পাওয়া মাত্রই প্রতিরোধ ও দোষীদের আইনের আওতায় আনতে ছুটে যাচ্ছেন সেই ভিজিলেন্স টিমের স্ব স্ব জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক সদস্যরা।
এছাড়া এতসব আয়োজনের পরেও পরিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায়ে মুঠোফোনের মাধ্যমে বিভাগের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা অভিযোগের সমাধান ও নিরসন করছেন বোর্ড চেয়ারম্যান ইউনুস আলী। তিনি খবর পাওয়া মাত্রই গ্রহণ করছেন যথাযথ ব্যবস্থা।
এবারের এসএসসি পরীক্ষার এমন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন সচেতন মহুল। এরমধ্যে রয়েছে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা, অভিভাবক ও সমাজের দায়িত্বশীল বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা।
একাধিক শিক্ষক জানান, বিগত বছরের তুলনায় কড়া নজরদারির মধ্যে শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে। বোর্ডের কঠোর নজরদারিতে কোন অবৈধ পহ্নার সুযোগ পাচ্ছে না কেউ। এসব ব্যবস্থাপনায় তারা মনে করছেন, শিক্ষাব্যবস্থা একদিকে উন্নীতে দিকে ধাবিত হবে। অন্যদিকে প্রকৃত মেধাবীরা তাদের অর্জনের মধ্য দিয়ে দেশকে সমৃদ্ধে অগ্রসর ভুমিকা পালন করবে।
একাধিক অভিভাবক জানান, পরিক্ষা কেন্দ্রগুলো এমনই হওয়া উচিত যেখানে আমাদের সন্তানরা তাদের যোগ্যতা ও মেধা দিয়ে নিজের পরীক্ষা নিজে দিবে। এবারে সেই প্রতিফলন ঘটছে নজরদারির মাধ্যমে। এর মাধ্যমে আমাদের সন্তানরা তাদের মেধাকে পরিস্ফুটিত করতে পারবে। এসময় অভিভাবকরা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিস্টদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
মাধ্যমিক পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বোর্ড চেয়ারম্যান স্যার অত্যন্ত পরিশ্রমী ও দক্ষ একজন কর্মকর্তা। তিনি নিজে পরীক্ষার কেন্দ্রগুলো সরাসরি মনিটরিং করছেন। এছাড়া কোন কেন্দ্রে অবৈধ পহ্না অবলম্বনের তথ্য পেলেও জড়িত সংশ্লিষ্টদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসছেন। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক স্তরের গুরুত্বপুর্ণ এ পরীক্ষাটি সুরক্ষিত হচ্ছে। যার ফলস্বরুপ প্রকৃত মেধাবীরাই ভাল ফলাফলে উন্নীতের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখবে বলেও সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। এছাড়া পরীক্ষার পরিবেশও অটুট থাকছে।
শিক্ষাবোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মোঃ কামরুজ্জামান কামাল বলেন, বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীন ১৯৪টি কেন্দ্রের পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য গত ২১ এপ্রিল ১৬টি ভিজিলেন্স টিমে প্রায় ২০০জন কর্মকর্তা গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলিতে পরীক্ষা চলাকালীন পূর্ণ সময় উপস্থিত ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, গতকাল কলাপাড়ার ধানখালী কেন্দ্র সম্পর্কে অভিযোগ আসার পর রাতেই ভিজিলেন্স টিম গঠন করে ধানখালী কেন্দ্র পরিদর্শনের জন্য টিম পাঠানো হয়েছে। আজ সকালে পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর কেন্দ্র সম্পর্কে অভিযোগ শোনা মাত্রই ৪জন সদস্যকে বোর্ডের নেতৃত্বে সার্বক্ষণিক পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের অধীন সকল কেন্দ্রে নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে চেয়ারম্যান প্রফেসর ইউনুস আলী সিদ্দিকী স্যারের অধীন পরীক্ষা শাখা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, যেখান থেকেই অভিযোগ আসছে, সেখানেই তাৎক্ষণিকভাবে ভিজিলেন্স টিম পৌছে যাচ্ছে। এই কাজ সম্পাদনের জন্য শুধু ভিজিলেন্স টিমের কর্মকর্তা নয় কক্ষে দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষকদের নৈতিকভাবে সৎ হতে হবে। আগামী দিনগুলোর পরীক্ষা নকলমুক্ত ও সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।
শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউনুস আলী সিদ্দিকী জানান, পরীক্ষার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এর মধ্যে খোলা হয়েছে একটি বিশেষ কন্ট্রোল রুম। পাশাপাশি পরীক্ষা সুষ্ঠু ও নকলমুক্ত করতে ১৬টি ভিজিলেন্স টিমসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া বিভাগের প্রত্যেকটি পরীক্ষা কেন্দ্র নকলমুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কেন্দ্রের নির্দেশনানুযায়ী কঠোর নজরদারীর ব্যবস্থা করেছে শিক্ষাবোর্ড।
উল্লেখ্য, পরীক্ষার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে খোলা হয়েছে একটি বিশেষ কন্ট্রোল রুম। পাশাপাশি পরীক্ষা সুষ্ঠু ও নকলমুক্ত করতে ১৬টি ভিজিলেন্স টিমসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে বরিশাল শিক্ষাবোর্ড। এবার বিভাগের ছয় জেলার মোট ১,৪৯১টি বিদ্যালয় থেকে ৮৪ হাজার ৩০৩ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছে। এর মধ্যে ছাত্র ৩৯ হাজার ৩৩৫ জন এবং ছাত্রী ৪৪ হাজার ৯৬৮ জন। মোট ১৯৪টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে । এছাড়া পরীক্ষা চলাকালে ১৩ মে পর্যন্ত সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা বোর্ড।
Post Comment