ঐতিহ্যবাহী রকেট স্টিমার সার্ভিস নিয়ে অনিশ্চয়তা!
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
রাজধানীর সাথে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের নিরাপদ নৌ যোগাযোগ পুন:স্থাপনের বিষয়ে রাষ্ট্রীয় নৌ-বানিজ্য প্রতিষ্ঠান বিআইডব্লিউটিসি’র উদাসীনতা ও রহস্যঘেরা কর্মকান্ডে সাধারণ মানুষের মাঝে চরম হতাশার সাথে ক্ষোভও সৃষ্টি হচ্ছে। করোনা মহামারী শুরু এবং পদ্মা সেতু চালুর আগে থেকেই নানা অজুহাতে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি অনানুষ্ঠানিকভাবে ঐতিহ্যবাহী রকেট স্টিমার সার্ভিসটি বন্ধ করে দেয় । ১৮৭৪ সালে বাস্পীয় প্যাডেল হুইল জাহাজের মাধ্যমে যে রকেট স্টিমার সার্ভিস চালু হয়েছিল, এমনকি নানা খোড়া যুক্তি দেখিয়ে সংস্থাটি এখন কতিপয় সুবিধাভোগীদের স্বার্থে ইজারা বানিজ্য করছে বলেও অভিযোগ উঠছে। এমনকি সংস্থাটির হাতে পুনর্বাসন ও আধুনিকায়নকৃত ৪টি প্যাডেল হুইল নৌযান থাকার পরেও বিগত ৫টি বছর তা বসিয়ে রাখা হয়েছে। অতি সম্প্রতি ‘পিএস মাহসুদ’ নামের একটি মাত্র নৌযানকে পুনর্বাসন করার পরে তা যাত্রী পরিবহনের চেয়ে পর্যটক সার্ভিস পরিচালনে সংস্থার দায়িত্বশীলদের আগ্রহ বেশী বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ গত মাসেই বরিশালে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ারজেনারেল (অব:) সাখাওয়াত হোসেন ‘অক্টোবর থেকেই বরিশাল ঢাকা নৌপথে যাত্রী পরিবহনে প্যাডেল স্টিমার যুক্ত হচ্ছে’ বলে জানিয়েছিলেন।
এ ব্যাপারে সংস্থার পরিচালক (বানিজ্য) আশিকুজজ্জামান ‘পিএস মাহসুদ-এর মেরামত ও পুনর্বাসন’ শেষে ইতোমধ্যে সংস্থার ঢাকা ঘাটে নিয়ে আসা হয়েছে’ বলে জানিয়ে বলেন, আমরা সপ্তাহে দুদিন পর্যটকদের নিয়ে ঢাকা থেকে বরিশাল পর্যন্ত যাব’।
অপরদিকে সংস্থার চেয়ারম্যান ও অতিরিক্ত সচিব সলিম উল্লাহর সাথে তার সেলফোনে আলাপ করা হলে তিনি বলেন, ‘আপাতত পিএস মাহসুদ সপ্তাহে একদিন সাধারন যাত্রী নিয়ে বরিশালে যাবে ও অপর একদিন ঢাকায় ফিরবে। অবশিষ্ট দিনগুলো ঢাকা থেকে বা চাহিদামাফিক সুবিধাজনক স্থান থেকে পর্যটকদের নিয়ে চলাচল করবে বলে জানান তিনি।
অপরদিকে প্রায় ৫ বছর আগে বিনা দরপত্রে সংস্থার ঐতিহ্যবাহী প্যাডেল স্টিমার ‘পিএস অস্ট্রিচ’ ইজারা প্রদানের পরে সম্প্রতি সংস্থার জিম্মায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ইজারাদার টানা ৫টি বছর ঢাকার অদূরে ফেলে রেখে নৌযানটির উপরি কাঠামোর অভ্যন্তরীণ অংশ সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলেছে। চুক্তি মোতাবেক নৌযানটি ভাড়াও পরিশোধ করেনি। দীর্ঘ কালক্ষেপনের পরে পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে নৌযানটি ফেরত আনা হলেও তাকে মূল আদলে ফিরিয়ে আনতে ৫ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি দায়িত্বশীল সূত্র। কিন্তু কি কারণে যাত্রী পরিবহন থেকে সরিয়ে বিনা দরপত্রে নৌযানটি ইজারা প্রদান করা হয়েছিল, তার উত্তর এখন সংস্থাটির কেউ দিতে পারছেন না। তবে ‘বকেয়া ভাড়া আদায়ে আদালতে মামলা করে পাওনা আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছে’ বলে চেয়ারম্যান জানিয়েছেন।
অপরদিকে পিএস অস্ট্রিচ পুনরায় ইজারা প্রদানের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে দরপ্রস্তাব গ্রহণ করে একটি পক্ষের সাথে আলাপ আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। সংস্থার বহরে থাকা ‘পিএস টার্ণ ও পিএস লেপচা’ নামের অপর দুটি প্যাডেল জাহাজও দীর্ঘদিনের অবহেলা ও রক্ষনাবেক্ষনহীন অবস্থায় পড়ে আছে। এদুটি নৌযানের ভবিষ্যত নিয়ে চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি বলেন- পর্যায়ক্রমে এসব নৌযান মেরামত ও পুনর্বাসন করা হবে। তবে প্যাডেল জাহাজগুলো বরিশাল-ঢাকা-বরিশাল নৌপথে সার্ভিসে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তিনি কোন সুসস্পষ্ট মন্তব্য করেননি।
এদিকে প্রায় ৫৭ কোটি টাকা ব্যায়ে ২০১৪ সালে সংগ্রহ করা ‘এমভি মধুমতি ও এমভি বাঙালী’ জাহাজ দুটির মধ্যে একটি ঢাকা থেকে চরফ্যাশনের বেতুয়া রুটে ইজারা প্রদানের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে। অপর একটি নৌযান ছাড়াও চলতি মাসেই সংস্থার হাতে পাবার পরে ‘এমভি রূপসা ও এমভি সুগন্ধা’ নৌযান দুটিও ঢাকা-ইলিশা ও ঢাকা-হাতিয়া রুটে ইজারা প্রদানের প্রস্তুতি চলছে। তবে দেশের সর্ববৃহৎ অভ্যন্তরীণ নৌপথ, ঢাকা-চাঁদপুর-বরিশাল হয়ে মোড়েলগঞ্জ বা খুলনা রুটে ঐতিহ্যবাহী রকেট স্টিমার সার্ভিসটি পুনরায় ফিরবে কিনা এ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
Post Comment