Loading Now

কুয়াশা সাথে কণকণে ঠান্ডায় দক্ষিণের জনজীবন বিপর্যস্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥

বরিশালে রোববার দিনভরই সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। তাপমাত্রার পারদ আগের দিনের চেয়ে দশমিক ৬ ডিগ্রী ওপরে উঠলেও এখনো স্বাভাবিকের দশমিক ৩ ডিগ্রী নিচে। উত্তর-পূবের হাওয়ার সাথে মাঝারী থেকে ঘন কুয়াশার চাঁদরে ঢেকে ছিল বরিশাল সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল। মেঘে ঢাকা আকাশ আর ভূ-ভাগে ঘন কুয়াশায় বরিশাল সেক্টরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স-এর সকাল সোয়া ১০টার ফ্লাইট বিকেল ৪টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও আকাশে উড়তে না পেরে যাত্রা বাতিল করতে হয়েছে। সকাল ১০টা পর্যন্ত নৌপথের বেশীরভাগই কুয়াশায় ঢাকা থাকায় নৌযোগাযোগও ব্যাহত হচ্ছিল। ঢাকা থেকে বরিশালের মুলাদীগামী ‘এমভি মহারাজ-৭’ নামের একটি যাত্রীবাহী নৌযান সকাল ৯টায় গোসাইরহাটের কোদালপুর এলাকার আড়িয়াল খাঁ নদ অতিক্রমকালে নোঙরে থাকা অপর একটি ছোট আকারের পণ্যবাহী নৌযানের ওপর আছড়ে পড়লে যাত্রীদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। এমভি মাহারাজ-৭ এর দোতালার ডেকের প্রায় ৩০ ফুট অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কেউ হতাহত হয়নি। কুয়াশার কারণে সড়ক পথেও যানবাহন চলাচল স্বাভাবিকের অনেক কম।

 

আবহাওয়া বিভাগের মতে মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করলেও এর একটি বর্ধিতাংশ বরিশাল উপকূল সংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। ৩১ জানুয়ারী পর্যন্ত বরিশাল সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে তাপমাত্রার পারদ প্রতিদিনই সামান্য করে নিচে নামার কথা জানিয়ে আগামী ১ জানুয়ারী তা একটু ওপরে উঠবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। পরবর্তি ৫ দিনে তাপমাত্রা আরো বাড়বে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন আবহাওয়াবীদরা। তবে এর আগে পর্যন্ত কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে শীতের অনুভূতি অব্যাহত থাকার কথাও জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

বরিশালে দিনভরই সূর্যের দেখা না মিললেও মেঘাচ্ছন্ন আকাশের সাথে কুয়াশার দাপটে তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের দশমিক ৩ ডিগ্রী নিচে থাকায়, কনকনে ঠান্ডায় সপ্তাহের প্রথম কর্ম দিবসেই বরিশালে জনজীবন ছিল প্রায় বিপর্যস্ত। অতি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হননি । এমনিক রোববার দিনভরই দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও ছিল স্বাভাবিকের প্রায় ৭ ডিগ্রী নিচে।
অব্যাহত শৈত্য প্রবাহে দক্ষিণাঞ্চলের জনস্বাস্থ্যেও সংকট ক্রমশ ঘনিভূত হচ্ছে। প্রতিদিন শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বরিশাল জেনারেল হাসপাতাল সহ এ অঞ্চলের সবগুলো হাসপাতালেই নিউমোনিয়া ও ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা আশংকাজনক হারে বাড়ছে। কোন হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের মেঝেতেও এখন রোগীর ঠাঁই মিলছে না। ওষুধ সহ চিকিৎসা সামগ্রীর অভাব না থাকলেও রোগীর ভীড়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রাণ ওষ্ঠাগত।

অপরদিকে চলমান শৈত্যপ্রবাহে দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান দুটি অর্থকারী ফসল বোরো বীজতলা ও গোল আলুর ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে। চলতি রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৩.৮৫ লাখ হেক্টরে বোরো আবাদের লক্ষ্যে ২০,৩১৭ হেক্টরে বোরো বীজতলা তৈরীর কাজ শেষ পর্যায়ে। কিন্তু অব্যাহত শৈত্য প্রবাহে বোরো বীজতলা ‘কোল্ড ইনজুরী’র কবলে পড়তে যাচ্ছে। পাশাপাশি প্রায় ১৫ হাজার হেক্টরে যে গোল আলুর আবাদ হচ্ছে, তা ‘লেট ব্লাইট’ নামের এক ধরনের ছত্রাকবাহী রোগে আক্রান্ত হবারও শংকা বাড়ছে। তবে যে প্রায় ৬০ হাজার হেক্টরে গমেরও আবাদ হচ্ছে, শীতের প্রকোপ বৃদ্ধির ফলে তার ফলন বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় প্রায় ১৬ লাখ টন বোরো চাল, ৩ লক্ষাধিক টন গোল আলু ও দুই লক্ষাধিক টন গম উৎপাদেনর লক্ষ্য রয়েছে।

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED