Loading Now

গণপরিষদে অনড় এনসিপি, জামায়াত চায় গণভোট

অনলাইন ডেক্স ।।

গণপরিষদকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সর্বোত্তম ও গণতান্ত্রিক উপায় বলে মনে করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গণপরিষদ না হলে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে না বলেও জানিয়েছে দলটি। অন্যদিকে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটকে প্রাধান্য দিচ্ছে জামায়াত।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে গতকাল শুক্রবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে মতামত জমা দেয় এনসিপি। গতকাল পর্যন্ত বিএনপি, এনসিপিসহ ২৭টি দল সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে মতামত জমা দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী আজ শনিবার মতামত জমা দেবে বলে জানা গেছে।

এদিকে আগামীকাল রোববার দলগুলোর মতামত নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তার ভিত্তিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে একটি সমন্বিত সুপারিশ তৈরি করবে কমিশন, যা জুলাই সনদের সঙ্গে দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে।

সূত্রে জানা গেছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে এক পাতার একটি মতামত পাঠানো হয় এনসিপির পক্ষ থেকে, যেখানে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সর্বোত্তম ও গণতান্ত্রিক উপায় গণপরিষদ গঠন বলে উল্লেখ করা হয়। গণপরিষদের পক্ষে তিনটি যুক্তি তুলে ধরে এনসিপি। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, জুলাই সনদ জনগণের সর্বজনীন অভিমতের প্রতিফলন, তাই বাস্তবায়নপ্রক্রিয়া সরাসরি গণপ্রতিনিধিত্বশীল একটি সংস্থা (গণপরিষদ) দ্বারা হওয়া অপরিহার্য।

এনসিপির পক্ষ থেকে বলা হয়, গণপরিষদ দেশের সর্বস্তরের জনগণ, রাজনৈতিক দল ও সামাজিক শক্তিকে প্রতিনিধিত্ব করবে এবং প্রস্তাবিত সংস্কার ও সনদ বাস্তবায়নের জন্য সাংবিধানিক কাঠামো প্রদান করবে। পদ্ধতিটি গণতন্ত্রের মৌলিক চেতনাকে সংরক্ষণ করবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক বিতর্ক বা বৈধতা-সংকট এড়াতে গণপরিষদ সহায়ক হবে বলেও মনে করে দলটি। সর্বশেষে এনসিপি আশা প্রকাশ করে, কমিশন তাদের প্রস্তাবটি বিবেচনা করে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় গণপরিষদ গঠনের সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করবে।

রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই ধাপের সংলাপ শেষে জুলাই সনদের সমন্বিত খসড়া তৈরি করে। গত ১৬ আগস্ট রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তা পাঠানো হয়। সেখানে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে ৮ দফা অঙ্গীকারনামা দেওয়া হয়; যার একটিতে বলা হয়, রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষরিত জুলাই সনদ সংবিধানের ওপরে স্থান পাবে। সনদের কোনো বিষয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না বলেও উল্লেখ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিএনপিসহ কয়েকটি দল এটির কঠোর সমালোচনা করছে। অন্যদিকে জামায়াত, এনসিপিসহ কয়েকটি দল কমিশনের প্রস্তাবিত অঙ্গীকারনামার পক্ষে মত দিয়েছে।

গণপরিষদের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হলে সংবিধানের ওপর জুলাই সনদকে স্থান দেওয়ার বিতর্ক এড়ানো যাবে বলে মনে করে এনসিপি। দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, জুলাই সনদ সংবিধানের কোথায় থাকবে, তা নিয়ে বিতর্কের জায়গা আছে। এটার বৈধতা ও বাস্তবায়ন আদৌ হবে কি না, তা নিয়েও বিতর্ক আছে। এসব বিতর্ক এড়াতে এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণপরিষদ হলো সবচেয়ে ভালো উপায়।

জাতীয় নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে অনড় রয়েছে এনসিপি। এটি বাস্তবায়ন ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে যাওয়া যাবে না বলে মনে করে দলটি। জাবেদ রাসিন বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের অন্যতম পদ্ধতি হিসেবে গণপরিষদ না থাকলে সনদে আমরা স্বাক্ষর করব না। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতির বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনার পক্ষে এনসিপি।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দাবি করে আসছে জামায়াতে ইসলামী। গণভোট বা রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে দলটি। রাষ্ট্রপতির আদেশের পক্ষে শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সময়কালের তিনটি নজিরের কথা উল্লেখ করেছে দলটি। ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক আদেশ জারি করা হয়েছিল। জিয়াউর রহমান ও এরশাদের সময়কালে সাংবিধানিক ফরমান জারি করা হয়েছিল। এটার ভিত্তি বিদ্যমান সংবিধানের ৭ (১) ও ৭ (২) অনুচ্ছেদ। বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা না থাকলে জুলাই সনদে স্বাক্ষরে কোনো লাভ হবে না বলে মনে করে জামায়াত; এ ক্ষেত্রে স্বাক্ষর নাও করতে পারে দলটি।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে মতামতের ড্রাফট তৈরি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। আজ শনিবার তা কমিশনে জমা দেওয়া হতে পারে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট বা রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক আদেশের পক্ষে দলটির অবস্থান এখনো রয়েছে। আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জামায়াত গণভোটকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।’

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED