Loading Now

গভীর নিম্নচাপটি রাতেই ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে, ডেঞ্জার অ্যালার্ট

 

অনলাইন ডেক্স ।।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপটি আজ মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। নিম্নচাপটি আরও শক্তি ধারণ করে উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। এটি কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৬৬০ কিলোমিটার দূরে আছে। বুধবারের (২৩ অক্টোবর) মধ্যে সেটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে এর নাম হতে পারে ‘ডানা’। নামটি প্রস্তাব করেছে কাতার। আরবিতে এর অর্থ অতি সুন্দর ও মূল্যবান মুক্তা।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক কালবেলাকে বলেন, নিম্নচাপটি মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় গবীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি দক্ষিণ-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও পাশ্বর্বর্তী এলাকায় অবস্থান করছে। গভীর নিম্নচাপটি শক্তি বাড়িয়ে বুধবার সকালে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এখন পর্যন্ত এটি উত্তর উড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ বরাবর অভিমুখ করে আছে। ঘূর্ণিঝড়টি কোন উপকূল অতিক্রম করবে বুধবার সকালে তা স্পষ্ট হবে।

ঘূর্ণিঝড়টি পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িশ্যা উপকূল অতিক্রম করলে অগ্রভাগের ডানপাশে থাকবে বাংলাদেশের অবস্থান। উপকূলীয় এলাকা খুললা, বরিশাল অঞ্চল ও রাজশাহী অঞ্চলে অস্থায়ীভাবে দমকা বাতাস ও ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। বুধবার বিকেল থেকেই এই বৃষ্টি শুরু হতে পারে। এর প্রভাব শুক্র ও শনিবার পর্যন্ত থাকতে পারে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়, পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর আন্দামান সাগর এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৭৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭৫৫ কিমি, দক্ষিণ-দক্ষিণপর্বে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল। এটি আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।

গভীর নিম্নচাপে কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। যে কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার সব নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে, যাতে স্বল্প সময়ের নোটিশে নিরাপদ আশ্রয় যেতে পারে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বুধবার রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুএক জায়গায় বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এদিন সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে। বৃহস্পতিবার খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা ১-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে।

উপকূলে জোয়ারের উচ্চতা বাড়ার আভাস : পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর এবং সংলগ্ন উত্তর আন্দামান সাগর এলাকায় যে নিম্নচাপ অবস্থান করছে, সেটির প্রভাবে বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় নদীতে জোয়ারের উচ্চতা বাড়তে পারে বলে আভাস মিলেছে।

আগামী ৩ দিন এ দশা থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, নিম্নচাপের প্রভাবে ৩ বিভাগে অধিক উচ্চতার জোয়ার পরিলক্ষিত হতে পারে। তবে এতে ওই অঞ্চলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা নেই। এসব অঞ্চলে জোয়ারের উচ্চতা কত ফুট হতে পারে, সেটিও এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না।

কেন্দ্রের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন উত্তর আন্দামান সাগর এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এ কারণে আগামী ৩ দিন বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় নদীতে স্বাভাবিক সময়ের চাইতে অধিক উচ্চতার জোয়ার দেখা যেতে পারে। দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ৩ দিন দেশের কোথাও বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির শঙ্কা নেই।

ভারতের আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস বলছে, নিম্নচাপটি মঙ্গলবারই গভীর নিম্নচাপে এবং বুধবার ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এরপর আরও শক্তিশালী হয়ে তা প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিতে পারে এবং বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় দুপুরের দিকে ভারতের পুরি ও সাগর দ্বীপের মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে উত্তর ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

সবশেষ গত ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ বাংলাদেশ উপকূল ও পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানে। ওই ঝড়ের তাণ্ডবে বাংলাদেশ ও ভারতে মোট ৭৬ জনের মৃত্যু হয়।

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED