গাভী নিয়ে গেছেন বিএনপি নেতা, বাছুর কোলে আদালতে নারী
ঝালকাঠি প্রতিনিধি ।।
স্বামীর কাছে ঋণের টাকা পাবেন বলে এক নারীর শেষ সম্বল দুধের গরুটি নিয়ে গেছেন এক বিএনপি নেতা। গরুর বাছুরটিকে কোলে করে বিচার চাইতে ঝালকাঠির আদালতে আসেন অসহায় ওই নারী। টাকা পরিশোধ করলে গরু দিয়ে দিবেন বলে জানান অভিযুক্ত বেল্লাল খান।
ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার শুক্তাগর ইউনিয়নের গৃহবধূ নারগিস বেগম। গার্মেন্টসে চাকরি করে অর্থ জমিয়ে সম্প্রতি তিনি একটি দুধের গরু কেনেন। সেই গরুটির এক মাসের একটি বাছুরও রয়েছে। দুধ বিক্রি করেই চলছে তার সংসার। গত কয়েক মাস ধরে তার স্বামী আবু বকর এলাকা ছাড়া। স্ত্রীর খোঁজ খবরও রাখছেন না। এ অবস্থায় এক রকমের অসহায় দিন যাপন করছেন ওই নারী।
তার স্বামীর কাছে ২০ হাজার টাকা পাওনা দাবি করে স্থানীয় শুক্তাগড় ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. বেলাল খান বুধবার সকালে দুধের গরুটি নিয়ে যায়। কিন্তু মা গরুটিকে নিয়ে যাওয়ায় বুকের দুধ না খেতে পেরে অসুস্থ হয়ে পড়েছে বাছুরটি।
গরু নিয়ে যাওয়ায় তিনি বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার (১৫ মে) দুপুরে ঝালকাঠির আদালতে আসেন। আদালত চত্বরে বসে বোতলে করেই বাছুরটিকে পানি খাওয়ান নারগিস। খবর পেয়ে ওই বিএনপি নেতা লোকজন নিয়ে আসেন সেখানে। ওই নারী যাতে মামলা করতে না পারে, তাই তাকে নানাভাবে বুঝাচ্ছেন বিএনপি নেতার লোকজন। তবে এ ঘটনায় আদালতে কোন মামলা হয়নি।
পরে স্থানীয়দের মধ্যস্ততায় মা গরুটির ছানাটিকে (বাছুর) দুধ খাওয়ানোর জন্য বিএনপির নেতা বেলাল খানের বাড়িতে যাবেন বলে জানিয়েছেন গৃহবধূ নারগিস। আদালতে আসা ওই নারীর গ্রামের কয়েকজন মানুষ গরু নিয়ে যাওয়ার প্রতিবাদ করেন।
তারা বলেন, স্বামীর কাছে টাকা পাবে, তার কাছ থেকে নিবে। অসহায় ওই নারীর গরু নিয়ে আসা উচিৎ হয়নি বিএনপি নেতা বেল্লাল খানের। এ ঘটনার বিচার দাবি করেন তারা। নারগিস বেগম বলেন, বেল্লাল কোলা (মাঠ) থেকে আমার গরু নিয়া গেছে। আমি জানতে চাইলে সে আমার কাছে ২০ হাজার টাকা চাইয়া কয়, ‘আমি তোমার স্বামীর কাছে ২০ হাজার টাকা পামু, টাকা দিলেগরু দিমু, নাইলে দিমু না।’ আমি তারে অনেকবার বুঝানোর চেষ্টা করছি, সে আমাকে গালাগালি করে।
এখন আমি বিচারের জন্য আদালতে আইছি। কিন্তু কেউ আমারে সাহায্য করে নায়। খবর পাইয়্যা বেল্লাল লোকজন নিয়া আইস্যা আমারে বাড়ি চইল্ল্যা যাইতে কয়। আমি বাছুর নিয়া বেল্লালের বাড়িতে যামু। বাছুর দুধ খায়নায় একদিন, ও নাইলে বাঁচবে না। ওই গৃহবধূ আরো বলেন, টাকা পাইবে আমার স্বামীর কাছে, তিনি এহন কোমনে আছেন, আমরা জানি না। আমার দুধের গরু না দিলে আমি কেমনে সংসার চালামু!
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শুক্তাগড় গ্রামের এক অটোচালক বলেন, স্বামীর কাছে টাকা পাবে, তার কাছ থেকে নেবে। কিন্তু অসহায় এই নারীর গরু আনা ঠিক হয়নি। এ ঘটনার বিচার হওয়া দরকার। অভিযুক্ত বেলাল খান বলেন, ৯ বছর আগে একটি বাড়ি একটি ঘামার প্রকল্প থেকে নার্গিসের স্বামী আবু বকরকে ২০ হাজার টাকা তুলে দেন তিনি। যা এখন সুদে আসলে ৩০ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। আমার টাকা না দেয়ার কারণে আমি গরু নিয়েছি। টাকা পরিশোধ করলে গরু দিয়ে দিবো।
Post Comment