Loading Now

চড়া বাজারে ক্রেতার আক্ষেপ, নিয়ন্ত্রণে উদাসীন কতৃপক্ষ!

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

গত বছর ৫ আগস্টের পরে কয়েক মাস নিত্যপণ্যের বাজার সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও। সম্প্রতি খাদ্যদ্রব্যের দাম আবারও অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কতৃপক্ষ। ফলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফার লোভে
সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মধ্যস্বত্বভোগীরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তাদের তৈরি ‘মেকানিজমের’ কারণেই বাজার প্রতিনিয়ত ঊর্ধ্বমুখী। এতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার ক্ষেত্রে ভীষণভাবে বিপাকে পড়ছেন। দাম বৃদ্ধির জন্য সাধারণভাবে সড়ক-মহাসড়কে চাঁদাবাজিকে দায়ী করা হলেও গোয়েন্দা সংস্থা ও ক্যাবের একটি আলোচনা সভার প্রতিবেদনে স্পষ্ট উঠে এসেছে, আসল কলকাঠি নাড়ছে মধ্যস্বত্বভোগীরাই। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে দ্রব্যমূল্য কখনোই স্থিতিশীল হবে না।

শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) বরিশালের বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব ধরনের সবজি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বাড়তি। এসব বাজারে বেগুন প্রতি কেজি মান ভেদে ৮০/ ১২০ টাকা, বরবটি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, পটল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ধুন্দল ৬০ থেকে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, কচুর লতি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, করোল্লা ৮০/১০০ টাকা, কাঁচামরিচ প্রকারভেদে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা এবং পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে প্রতি পিস লাউ ৭০ থেকে ৯০ টাকা, শসা ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। কাঁচা কলা হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০/৫০টাকা, চাল কুমড়া ৫০ টাকা পিস, কাঁকরোল ৮০/ ১০০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা ও মিষ্টি কুমড়া মান ভেদে ৪০/ ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে বাজার করতে আসা সাবিনা আক্তার আক্ষেপ করে বলেন,ডিম-দুধসহ আমিষ জাতীয় খাবার খাওয়া তো ছেড়ে দিতে হয়েছে দামের কারণে। ৪০ টাকা ডিমের হালি এখন ৫০ টাকা। শাক খাবেন, তারও উপায় নেই। একটা লাউ শাকের ডগা কিনতে লাগে ৮০/১০০ টাকা৷ ২০/৩০ টাকার নিচে কোনো শাকের আঁটি পাওয়া যায় না। গরিব মানুষ খুব কষ্টে আছে। বাজার করতে তাদের নাভিশ্বাস উঠছে।’

শুধু তিনি নন, বর্তমান ঊর্ধ্বমুখী বাজারে সংসারের খরচ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন তার মতো অসংখ্য সীমিত আয়ের মানুষ। কারণ বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে চড়া দামে চাল, সবজি, মাংস ও মাছ কিনছেন ক্রেতারা। এবার সেই মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় যুক্ত হয়েছে আটা, ময়দা, মসুর ডাল ও চা পাতার মতো আরও কিছু প্রয়োজনীয় মুদিপণ্য।

বাংলা বাজারে পণ্য কিনতে আসা অটোরিকশাচালক আলম হোসেন জানান, এক বেলায় তার ৩০০-৪০০ টাকা আয় হয়। এই পুরো টাকা দিয়েও একদিনের বাজার হয় না। চাল-তেল কেনার পর মাছ বা মাংস কিনতে গেলে সবজি নিতে পারেন না। যে দিন আবার পেঁয়াজ, আদা বা রসুন লাগে, ওই দিন মাছ কিংবা মাংস কেনা যায় না। এভাবে টেনেটুনে কত দিন চলা যায়-প্রশ্ন রাখেন তিনি।

নতুন বাজার, নতুল্লাবাত বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বাজার, পোট রোড বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চালের দাম এখনো বাড়তি। অবশ্য গত দুই সপ্তাহে মিনিকেট চালের দাম কেজিতে এক–দেড় টাকা কমেছে। বর্তমানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট ৭২-৮৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ব্রি-২৮ চাল ৬২ টাকা ও মোটা ধরনের স্বর্ণা চাল ৫৮-৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে এখন এক কেজি প্যাকেটেজাত আটা কোম্পানি ভেদে ৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৫-৬০ টাকা। খোলা আটার দাম ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকায়। একইভাবে বিভিন্ন কোম্পানির ময়দার দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০-৭৫ টাকা। খোলা ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকায়।

ভালো মানের মসুর ডাল ১৩৫-১৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও এখন দাম উঠেছে ১৪৫-১৫৫ টাকায়। প্রতি প্যাকেট চায়ের দাম বেড়েছে প্রায় ১০/১৫ টাকা।

 

আমদানি বেশি হলেও পেঁয়াজের দামে সেভাবে কমেনি। এখনো খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮৫ টাকা কেজি দরে। যদিও বাজারে পাইকারিতে প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজের দাম রাখা হচ্ছে ৬০-৬২ টাকা। যেখানে দেশি পেঁয়াজ ৬৫-৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বেশ কয়েকটি বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন, ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ-মরিচের দামও বেশি। ফলে এ আমদানি দাম কমায় কোনো প্রভাব ফেলতে পারছে না।

ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকার মধ্যে। সোনালি মুরগি পাওয়া যাচ্ছে ৩২০-৩৩০ টাকা কেজি দরে। আগের সপ্তাহেও একই দামে এগুলো বিক্রি হয়েছে। মুরগির ডিম প্রতি ডজন আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৫৫ টাকা দরে।

অন্যদিকে গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। বাজারগুলোতে এক কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার ৫০০ টাকা, ১৫০ থেকে ২০০ গ্রামের ইলিশ ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে এক কেজি শিং মাছ চাষের (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৭৫০ টাকা, দেশি শিং ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, প্রতি কেজি রুই দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, দেশি মাগুর ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা, মৃগেল ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ২৫০ থেকে ৩৩০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, পোয়া ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা, পাবদা আকার ভেদে ৫০০ থেকে ৬৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০ টাকা, কই ২৫০ থেকে ৩০০ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে গরুর মাংস কেজি প্রতি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা ও খাসির মাংস কেজি প্রতি ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED