ছাত্র আন্দোলন: তৈরি হয়নি নিহত ও আহতদের তালিকা
নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে চোখে গুলিবিদ্ধ হন বরিশাল বিএম কলেজ থেকে মাস্টার্স শেষ করা মো. রহমতুল্লাহ। তখন থেকে ধারের টাকায় কোনোভাবে চিকিৎসা চালিয়ে আসছেন। এখন তিনি এক চোখে দেখেন না, অপরটিতে কম দেখেন। একমাত্র উপার্জনক্ষম হওয়ায় চোখ হারালে তার পরিবারকে পথে বসতে হবে বলে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন তিনি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে তার মতো এমন অনেক আহতের পরিবার চিকিৎসার খরচ চালাতে গিয়ে আর্থিক সংকটে পড়েছেন। পাচ্ছেন না সরকারি সহায়তা।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় বরিশাল প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা তুলে ধরা হয়। এ সময় আহত-নিহতদের পরিবারের সহায়তায় ১০ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
এ সময় উপস্থিত আহত ও নিহতদের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, তিন মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও সরকারি সহায়তার জন্য বরিশাল বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসন থেকে নিহত ও আহতদের তালিকা তৈরি করা হয়নি। এমনকি তাদের পরিবারের কোনও খোঁজ-খবরও নেওয়া হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আন্দোলনে বরিশাল জেলার ৩০ জন নিহত হন এবং গুরুতর আহত হন চার শতাধিক। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলেও তাদের কোনও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে না। সম্মেলনে দাবি জানানো হয়, যেন দ্রুত আহতদের তালিকা তৈরি করে দেশে এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
ঢাকায় আন্দোলনে নিহত সেলিম তালুকদারের বাবা সুলতান তালুকদার জানান, তার পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল সেলিম। আগে ছেলের স্ত্রী-সন্তানসহ ঢাকায় বাসা নিয়ে বসবাস করতেন তারা। ছেলের মৃত্যুর পর বাসা ছেড়ে ঝালকাঠীর নলছিটিতে চলে আসতে হয়েছে। বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তিনি সরকারের নিকট আর্থিক সহায়তার আবেদন জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আহত ছাত্রদের প্রতিনিধি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রহমাতুল্লাহ সাব্বির নিহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও আহতদের চিকিৎসার দাবিসহ ১০ দফা তুলে ধরেন। উত্থাপিত দাবি বাস্তবায়নে দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-সড়কের নামকরণ, এককালীন অনুদান প্রদান, মাসিক ভাতার ব্যবস্থা, নিহতের পরিবারের একজনকে সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া, আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় খেতাব প্রদান ইত্যাদি।
Post Comment