Loading Now

জেলেদের জন্য ট্রলারে সুরক্ষা সরঞ্জাম দেবে সরকার

 

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

“জলবায়ূ বিপদাপন্ন উপকূলীয় জেলে সম্প্রদায়ের সরকারি সুরক্ষা সেবায় প্রবেশাধিকার ও চ্যালেঞ্জ” শীর্ষক সেমিনার ৪ ডিসেম্বর বুধবার সকাল ১০ টায় নগরীর রিভার ক্যাফে চাইনিজ রেস্টুরেন্ট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন আইসিডিএ’র প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক ও বর্তমান কার্যকরী পরিষদ’র সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব আনোয়ার জাহিদ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রনজিৎ কুমার সরকার, জেলা ত্রান ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা বরিশাল।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রিপন কান্তি ঘোষ, জেলা মৎস কর্মকর্তা, বরিশাল। জনাব ড. বিমল চন্দ্র দাস, জেলা মৎস্য অধিদপ্তর বরিশাল’র মৎস কর্মকর্তা (ইলিশ)। তাছাড়া বরিশাল জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর’র উপ পরিচালক শামিম চৌধুরি, জেলা মহিলা অধিদপ্তর’র উপ পরিচালক মেহেরুন নাহার মুন্নি উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন বরিশাল সদর উপজেলা প্রানিসম্পদ অধিদপ্তর’র উপ সহকারী প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা মো: মহিউদ্দিন খান, ডা: সুশান্ত দাস, জেলা ট্রেনিং অফিসার, জেলা প্রানিসম্পদ অধিদপ্তর, বরিশাল এবং জেলা সমাজসেবা কার্যালয় বরিশাল’র সমাজসেবা অফিসার (রেজি:) ইসমত আরা খানম।

শুরুতেই সমবেত কন্ঠে মহান জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে সেমিনার আরম্ভ হয়।

আইসিডিএ’র বাস্তবায়নে সিসিআরপি প্রকল্পের কমিউনিটি মবিলাইজার মো: আবু হাসনাত হাসিব’র সঞ্চালনায় সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন উন্নয়ন সংগঠক ম্যাপ’র নির্বাহী পরিচালক শুভংকর চক্রবর্তীর, সবুজ আন্দোলন’র আহবায়ক কাজী মিজানুর রহমান, টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ’র প্যানেল চেয়ারম্যান মো: নূর হোসেন, চড়বাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ’র প্রশাসনিক কর্মকর্তা শামিম আহমেদ।

সমন্বিত সমাজ উন্নয়ন সংস্থা (আইসিডিএ)’র নির্বাহী পরিচালক কাজী নওশাদ রাসেল’র উপস্থাপিত অবস্থানপত্রের আলোকে মুক্ত আলোচনায় আরও অংশ নেন টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়ন’র স্থানীয় জেলে মো: আল আফসার মোল্লা, ইয়াকুব মোল্লা, রাশেদা ও চরবাড়ীয়া ইউনিয়ন’র স্থানীয় জেলে মো: আশিক ব্যাপারী, সাজেদা আক্তার এবং মিন্টু ভুইয়া এবং টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়ন’র ভাসমান জেলে মুন্নি আক্তার প্রমুখ।

সেমিনারের প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন এটি একটি যুগ উপযোগী সেমিনার, যেখানে সাধারণ জেলেদের বিভিন্ন সমস্যা বিভিন্ন প্রশ্ন তাদের জীবন জীবিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। “জাল যার, জলা তার”, এই নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। অভিযান চলাকালীন সময়ে ড্রোন’র ব্যবহার করা গেলে মাছ ধরা অনেকাংশে কমানো যাবে। এটি একটি সময়ের চাহিদা। তাছাড়া মাছ ধরার পাশাপাশি জেলেদের অন্যান্য প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে।

সেমিনারের সভাপতি সমন্বিত সমাজ উন্নয়ন সংস্থা (আইসিডিএ)’র প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক ও বর্তমান কার্যকরী পরিষদ’র সভাপতি আনোয়ার জাহিদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব খুব ভয়াবহ, এই জলবায়ুর পরিবর্তন মানবসৃষ্ট। এজন্য আমরা নিজেরাই দায়ী। আমরা নিজেরাই পরিবেশের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। সরকার যখন কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করে তখন তা পরিপূর্নভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলেই আমাদের জলাশয় নদী রক্ষা হবে। এ বিপর্যয় ঠেকাতে আমাদের দায়িত্ব বা কর্তব্য রয়েছে তা সঠিকভাবে পালন না করলে এ সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। সমুদ্রে যাওয়া জেলেদের নৌকায় পর্যাপ্ত সুরক্ষা সরঞ্জাম আছে কিনা সে বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে। অতএব সুবিধাবঞ্চিত জেলে সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য সরকারের বিশেষ ভূমিকা পালনের আহবান জানাচ্ছি।

বরিশাল জেলা মৎস্য অধিদপ্তর’র মৎস কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস বলেন যুগোপযোগী এই সেমিনারের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ দীর্ঘদিন যাবত আমি এ সেক্টরে আছি, চাকরির সুবাদে অনেক জায়গায় যেতে হয়েছে, পর্যবেক্ষন করে দেখলাম যে প্রকৃত মান্তা/ভাসমান জেলেদের চেয়ে ইচ্ছাকৃত মান্তা বেশি। তারা নিজেদের সুবিধার জন্য এ পথ বেছে নিয়েছে, যার কারণে প্রকৃত মান্তা সম্প্রদায় প্রাধান্য কম পাচ্ছে। জেলেদের নিয়ে ভাবতে হবে। বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ তারা খুব বিপদে আছে। তিনি আরও বলেন ইলিশ মাছ যে পরিমান ডিম ছাড়ে তা যদি পরিপূর্ণ মাছে রুপান্তরিত হতে পারে তবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। যেখানে এখনো জিডিপির এক পারসেন্ট ইলিশ থেকে আসে। যদি সঠিক সময়ে মাছ সরবরাহ করা হয় তবে সেটি আমাদের অর্থনীতিকে আরও চাঙ্গা করে তুলবে।

বিশেষ অতিথি জেলা মৎস কর্মকর্তা, বরিশাল রিপন কান্তি ঘোষ বলেন সরকারকে জলবায়ু পরিবর্তন’র সাথে সাথে অন্যান্য কার্যক্রম করে যেতে হবে। সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে জেলেদের জন্য কাজ করতে হবে। জেলেদের প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে। অবরোধের সময় যেন মাছ ধরা না হয় সেজন্য ড্রন ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা মৎস্যজীবীদের উপর নজর রাখি কিন্তু সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে আমাদের নিজেদের সচেতন হতে হবে। আমরা জানি নদীর নাব্যতা দিন দিন কমে যাচ্ছে, নদী হারাচ্ছে তার প্রাণ। এমন অবস্থায় জেলেদের উচিত মাছ ধরার পাশাপাশি অন্যান্য কাজ করার মাধ্যমে নিজেদের জীবিকার জন্য অন্য পথ তৈরি করা। জেলেরা বাঁচলে আমরা বাঁচবো কারন তারাই মাছ সরবরাহ করে বাজারে নিয়ে আসে যাতে সাধারণ মানুষ মাছ দিয়ে ভাত খেতে পারে। আমাদের উচিত তাদের নিয়েই কাজ করা এবং আমরা তা করছি। আমরা বিভিন্ন উপজেলায় বিকল্প জীবিকা হিসেবে ছাগল দিয়েছি কিন্তু তা পরিমানে খুবই কম। ভবিষ্যতে আমাদের চেষ্টা থাকবে বরিশাল জেলার প্রত্যেকটি উপজেলায় যারা মৎসজীবি আছেন তাদের প্রত্যেককেই এভাবে সহযোগীতা করার আশা রাখি। মৎস্যজীবিরা যেন সামনে এগিয়ে যেতে পারে এ কামনা করি।

মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়ন’র স্থানীয় জেলে মো: ইয়াকুব মোল্লা বলেন আমরা যারা সমুদ্রে মাছ ধরতে যাই আমাদের ট্রলারে পর্যাপ্ত সমুদ্র সুরক্ষা সরঞ্জাম থাকেনা তাই অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময় বিপদের সম্মুখিন হতে হয়।

সেমিনারে টুঙ্গিবাড়িয়া ও চরবাড়িয়া অঞ্চলের জেলেদের দ্বারা তৈরিকৃত অনিবন্ধিত জেলেদের তালিকা তালিকা মৎস কর্মকর্তা (ইলিশ) মহোদয়ের নিকট হস্তান্তর করা সেমিনার এর সভাপতি আইসিডিএ কার্যকরী পরিষদ’র সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার জাহিদ অতিথি, আলোচক, ও অংশগ্রহণকারীবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে সেমিনার কার্যক্রমের সমাপ্তি ঘোষনা করেন।

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED