টাকা থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি বাদ!
অনলাইন ডেক্স ।।
বাংলাদেশ ব্যাংককে নতুন নোট ছাপাতে বলেছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তবর্তীকালীন সরকার। এই নোটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাদ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র। প্রাথমিকভাবে ৪টি নোট নতুন ডিজাইনে আসছে। এসব নোটে জুলাই-আগস্টের সরকার পতনের আন্দোলন সম্পর্কিত ছবি ও ধর্মীয় স্থাপনার ছবি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে আগামী ইদুল আজহার আগে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছাড়া এসব নোট বাজারে আসবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে ১০, ৫০, ১০০ এবং ৫০০ টাকার চারটি নোটের ডিজাইন পরিবর্তন করা হবে। পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে অন্যান্য নোটেও পরিবর্তন আনা হবে। নতুন নোটগুলোতে বঙ্গবন্ধুর ছবি থাকবে না বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের নির্দেশনায় নতুন ডিজাইন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। মুদ্রা ও নকশা উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার জানিয়েছেন, নতুন নোট তৈরির কাজ অনেকটাই এগিয়ে গেছে। তবে বঙ্গবন্ধুর ছবি বাদ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেওয়া হয়নি।
বর্তমানে প্রচলিত ১, ২, ৫, ১০, ২০, ৫০, ১০০, ২০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার কাগুজে নোটের প্রতিটিতে বঙ্গবন্ধুর ছবি রয়েছে। ধাতব মুদ্রাগুলোতেও বঙ্গবন্ধুর ছবি সংযুক্ত আছে। বঙ্গবন্ধুর ছবি বাদ দেওয়ার এই সিদ্ধান্তে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর ছবি বাদ দেওয়াকে ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’ বলছেন বিশ্লেষকরা। এটি কেবল একটি নকশা পরিবর্তনের বিষয় নয়, বরং ইতিহাস ও জাতীয় পরিচয়ের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। তবে সরকারপক্ষ দাবি করছে, নতুন নোটের ডিজাইনে ‘জনস্বার্থ ও আধুনিকতার’ বিষয়টি বিবেচনা করা হয়েছে।
নতুন নোটগুলোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হবে জুলাই বিপ্লবের সময়কার বিভিন্ন গ্রাফিকস ও ধর্মীয় স্থাপনার চিত্র। এতে ঐতিহাসিক স্থাপত্যের নান্দনিকতা ও দেশের ইতিহাসের একটি অধ্যায় তুলে ধরা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, ‘নতুন নোট ছাপানোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সব ঠিক থাকলে খুব শিগগিরই এগুলো বাজারে আসবে। বঙ্গবন্ধুর ছবি বাদ দেওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত গোপনীয়। তবে আমরা আশা করছি, জনসাধারণ এই পরিবর্তন ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করবে।’
প্রতি বছর নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ছাপানো হয় এবং সেগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে সংরক্ষণ করা হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলো বাজারে ছাড়া হয়। বাংলাদেশ টাকশাল বা দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন (বাংলাদেশ) লিমিটেডে এই নোটগুলো ছাপানো হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালে মুদ্রণযোগ্য নতুন নোটের জন্য প্রয়োজনীয় নকশা ও কাঁচামালের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নতুন নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যও অধিকতর উন্নত হবে। এতে নকল নোট তৈরির ঝুঁকি কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে বঙ্গবন্ধুর ছবি বাদ দেওয়ার বিষয়ে সমালোচনা এবং বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। এক অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ছবি কেবল একজন ব্যক্তির প্রতীক নয়। এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের প্রতীক। ছবিটি সরিয়ে নেওয়া জাতীয় ইতিহাসের প্রতি অসম্মানজনক।’
তবে, সরকারের যুক্তি হলো— দেশের অর্থনৈতিক চাহিদা এবং আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন নোটের ডিজাইন করা হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ মনে করছেন, এটি একটি ইতিবাচক উদ্যোগ, যা দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে আরও ভালোভাবে উপস্থাপন করবে। তবে অনেকে এটিকে ‘জাতীয় নেতার প্রতি অশ্রদ্ধা’ হিসেবে দেখছেন।
Post Comment