তজুমদ্দিনে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ: পৈশাচিকতার স্মৃতি ভুলতে পারছেন না গৃহবধূ
অনলাইন ডেক্স ।।
ভোলার তজুমদ্দিনে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের বর্বর, পৈশাচিকতার স্মৃতি ভুলতে পারছেন না গৃহবধূ। বারবার আত্মহত্যার চেষ্টা করছেন। বুধবার দুপুরেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তার স্বামী ও পরিবার। বিকালে সাংবাদিকদের গৃহবধূর স্বামী বলেন, ভয় হয় কখন আমার স্ত্রী কী করে ফেলে। সে কারও কাছে মুখ দেখাতে চাইছে না। শ্বশুর-শাশুড়িসহ স্বজনরা তাকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এদিকে তাকে নির্যাতনকারী ও স্ত্রীর ধর্ষকদের দলীয় পরিচয় থাকায় তজুমদ্দিন থানার ওসির শিথিল আচরণের কারণে ধর্ষকরা পালাতে সক্ষম হয় বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। গৃহবধূর স্বামী বলেন, তাদের রোববার রাতভর থানায় আটকে রাখেন ওসি। অভিযোগ নিয়ে গড়িমসি করেন। ওই রাতে না পাঠিয়ে পরদিন দুপুরে ধর্ষণের আলামত পরীক্ষার জন্য তার স্ত্রীকে ভোলা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে পাঠান। এখনো তিনি (স্বামী) চাপের মধ্যে আছেন বলেও জানান। র্যাব-৮ এর ভোলা ক্যাম্প কমান্ডার লেফটেন্যান্ট শাহরিয়ার রিফাত অভি জানান, বুধবার দুপুর ২টা ১০ মিনিটের দিকে ইলিশ ঘাট দিয়ে ঢাকাগামী লঞ্চে পালিয়ে যাওয়ার সময় মামলার ৫নং আসামি কামার পট্টির মৃত নূরুল হক মাঝির ছেলে মো. মানিককে গ্রেফতার করা হয়। র্যাব ধর্ষকদের গ্রেফতারে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে বলেও জানান তিনি। অপরদিকে তজুমদ্দিন থানার ওসি বলেন, ধর্ষণের শিকার নারীর স্বামীর প্রথম স্ত্রীকে ধর্ষণে সহায়তা করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে ধর্ষণ ও নির্যাতনকারী হিসাবে অভিযুক্ত উপজেলা শ্রমিক দলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক পদ থেকে ফরিদ উদ্দিনকে বহিষ্কারের পর কলেজ ছাত্রদল আহ্বায়ক রাসেল ও যুগ্ম আহ্বায়ক সজিবকে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল বহিষ্কার করেছে বলে জানান উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ওমর আসাদ রিন্টু। তবে তিনি দাবি করেন, রাসেল ও সজিব এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। থানার ওসির বক্তব্যও অনুরূপ। তবে মামলার বাদী ধর্ষণের শিকার নারীর স্বামী নির্যাতিত হোটেল বাবুর্চি বলেন, তার শরীরে প্রথম পাইপ দিয়ে আঘাত করে ছাত্রদল নেতা রাসেল। প্রতিটি আঘাতে তার শরীরে রক্ত জমে কালো হয়ে আছে। তাকে যখন ৪ জন ধরে বাইরে নিয়ে যায়, তখন ঘরের সামনের খাটে ৩ জন ও ভেতরের খাটে তার স্ত্রী বসা ছিল। ওই ঘরে ছিল ফরিদ, আলাউদ্দিনসহ ৩-৪ জন। একপর্যায়ে তিনি বাইরে থেকে ছুটে এসে দরজা ধাক্কা দিতে থাকলে তখন আলাউদ্দিন বের হয়ে তাকে সজোরে চড় মারে। গালিগালাজ করতে থাকে। একপর্যায়ে ধর্ষকরা একে একে বের হয়ে আসতে থাকে।
মির্জা ফখরুলের নিন্দা : কেন্দ্রীয় বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক মুহাম্মদ মুনির হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ পৈশাচিক ঘটনায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। মির্জা ফখরুল বলেন, দৃষ্কৃতকারীরা সোমবার চাঁদার দাবিতে স্বামীকে ব্যাপক মারধর ও স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করার ঘটনা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ও কাপুরুষোচিত। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও দেশে এখনো নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারায় লিপ্ত রয়েছে দুষ্কৃতকারীরা। ভোলায় নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, পুরো দেশের মানুষ হতভম্ব। নারী সমাজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এসব দুষ্কৃতকারীকে কঠোর হস্তে দমনের বিকল্প নেই। ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল।
ছাত্রদলের বহিষ্কারাদেশ : তজুমদ্দিনে এক ব্যক্তিকে নির্যাতন ও স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলার আসামি ছাত্রদলের দুই নেতাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে। মঙ্গলবার রাতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বহিষ্কৃত দুজন হলেন তজুমদ্দিন ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. রাসেল ও যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন ওরফে সজিব। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ছাত্রদলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বহিষ্কৃতদের সঙ্গে কোনোরূপ সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মো. রাসেল ও জয়নাল আবেদীনের বিষয়ে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ এবং অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
শনিবার রাত ও রোববার দিনভর ৪ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে ঢাকার একটি হোটেলে চাকরি করা এক বাবুর্চিকে পিটিয়ে নির্যাতন করার পাশাপাশি আটকে রেখে তার স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে সোমবার রাতে মামলা করেন তিনি। মামলায় চিহ্নিত ৭ জন ও অজ্ঞাত ৪-৫ জনের কথা উল্লেখ করেন। অভিযুক্ত আসামিদের ৬ জনই বিএনপির শ্রমিক দল, যুবদল ও ছাত্রদলের রাজনীতিতে জড়িত বলে স্থানীয়রা জানান।
জামায়াতে ইসলামীর বিক্ষোভ : বুধবার বিকালে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার দাবি করে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। এ সময় বক্তব্য রাখেন উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুর রব, সেক্রেটারি মো. মহিউদ্দিন, উপজেলা রুকন মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ।
তজুমিদ্দনে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ : এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেফতার দাবিতে বুধবার বিক্ষোভ সমাবেশ চলাকালে ছাত্রদলের দুই গ্রুপ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় আহত হন ৫-৬ জন। তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। স্থানীয়রা জানান, ঘটনার সঙ্গে কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক জড়িত থাকার বিষয়টি এক পক্ষ মেনে নিতে পারছে না। তারা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার দাবি জানান। অপর পক্ষ তাকে নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছে মাওলানাকান্দির যুবদল নেতা মো. আলাউদ্দিন (৪০), উপজেলা শ্রমিক দলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মো. ফরিদ উদ্দিন, হোটেল বাবুর্চির দ্বিতীয় স্ত্রী ঝর্ণা বেগম (৪০), মাওলানাকান্দির মো. আলমগীর হোসেন (৪২), একই এলাকার মো. মানিক (৩৫), কামারপট্টির মো. আব্দুল হালিমের ছেলে মো. মামুন, এক সময় কামারপট্টি বর্তমানে তজুমদ্দিন সদরের কলেজ ছাত্রদল নেতা মো. রাসেল।
সূত্র যুগান্তর
Post Comment