Loading Now

তিন ঘণ্টা পর শেবাচিম হাসপাতালে পুলিশি পাহারায় জরুরি চিকিৎসা সেবা চালু

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

তিন ঘণ্টা পর বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশি পাহাড়ায় জরুরি চিকিৎসা সেবা চালু করা হলো। চিকিৎসককে উপর হামলা ও নিরাপত্তা না থাকায় দুপুর ২টা থেকেই কর্মস্থল ত্যাগ করেন সকল চিকিৎসকরা। এর প্রেক্ষিতে টানা তিন ঘণ্টা চিকিৎসা বঞ্চিত হন রোগীরা। অতঃপর হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে এম মশিউল মুনীর’র বিশেষ অনুরোধ ও পুলিশের কড়া নিরাপত্তার প্রেক্ষিতে বিকেল ৫টা থেকে জরুরি সেবা চালু করা হয়। তবে বিকেল ৩টার পর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।

শেবাচিম হাসপাতালের ৪থ শ্রেণির কর্মচারী রাব্বি আল মামুন ফয়সাল জানান, আজ রোববার বেলা ১২টার দিকে সদর রোড থেকে বেশ কিছু স্কুলকলেজের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে হাসপাতালের সামনে আসে। এসময় তারা হাসপাতালের প্রতিটি গেটের সামনে স্কুলকলেজের মার্কিং করে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের গালিগালাজ করেন । তাদের বেশ কয়েকজনের হাতে ধারালো অস্ত্র ও লাঠি ছিল। দুপুর ২ টার দিকে আমাদের মেডিসিন বিভাগের মেডিকেল অফিসার দিলিপ রায় স্যার ডিউটি শেষে বেড় হওয়া মাত্র তাকে টেনে হিঁচড়ে বেদম মারধর করে। পরে পুলিশ তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করেন। এর কিছুক্ষণ পরই হাসপাতালের দিকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন হামলাকারীরা। এতে আমাদের বাহাউদ্দিন নামের এক কর্মচারী আহত হন।

এদিকে চিকিৎসকের উপর হামলা ও কর্মস্থলে নিরাপত্তা না থাকায় বিকেল ৩ টার পর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে ইর্ন্টান চিকিৎসকরা। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা জানান, কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে আমরা গত ১৪ আগস্ট কর্মবিরতিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু হাসপাতাল পরিচালক স্যারের অনুরোধ ও রোগীর দুর্ভোগের কথা বিবেচনায় কর্মবিরতি প্রত্যাহার করি। এসময় পরিচালক মহোদয়কে ৪৮ ঘণ্টার সময় দেয়া হয়। কিন্তু আজকে ১৭ আগস্ট আবার আন্দোলনের নামে কিছু দুষ্কৃতকারী আমাদের মেডিসিন বিভাগের ইনডোর মেডিকেল অফিসার ডা. দিলীপ রায় স্যারের উপর অতর্কিত হামলা করে। এছাড়া হাসপাতালের স্টাফদের উপর হামলা করে। হাসপাতাল ভবনকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে পুরো হাসপাতালে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এই ঘটনায় উসকানিদাতা এবং জড়িতদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের দাবি জানাই। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মস্থলে নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ায় আজ ১৭ আগস্ট রোববার বিকাল ৩টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ঘোষণা করছি।

মিড লেভেল ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. শাখাওয়াত হোসেন সৈকত বলেন, আজ রোববার মহিউদ্দিন রনির নেতৃত্বে বরিশালে বেশ কিছু স্কুলকলেজের শিক্ষার্থীরা হাসপাতালের প্রবেশ পথে অবস্থান নিয়ে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের হুমকি দেয়। বেলা ২টার দিকে আমাদের মেডিসিন ইউনিট-২ এর মেডিকেল অফিসার ডা. দিলিপ রায়কে বেদম মারধর করে। চিকিৎসকের উপর এমন নির্যাতন ও হাসপাতালের সামনে তারা অবস্থান নেয়ায় রোগীরা যেমনি ভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, তেমনি আমাদের চিকিৎসকরা কর্মস্থলে নিরাপত্তা না থাকায় ঘটনার পর থেকেই কর্মস্থল ত্যাগ করেন। এর কারণে হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হয়। তবে হাসপাতাল পরিচালক স্যারের বিশেষ অনুরোধে ও পুলিশের করা নিরাপত্তায় এবং মুমূর্ষু রোগীদের স্বার্থে আমরা মিড লেভেল চিকিৎসকরা বিকেল ৫ টার পর থেকে শুধু মাত্র জরুরি সেবা চালিয়ে যাচ্ছি।

এদিকে দুপুর ২ টা বিকেল ৫টা পর্যন্ত টানা তিন ঘণ্টা চিকিৎসা বঞ্চিত হন রোগীরা। জরুরি বিভাগ থেকে ভর্তি হয়ে ওয়ার্ডে এসে চিকিৎসা না পেয়ে রোগীর স্বজনরা দিশেহারা হয়ে পরেন। তারা ছুটে যান হাসপাতাল পরিচালকের কাছে।

শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে এম মশিউল মুনীর বলেন, ঘটনার পর পরই হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফরা আমার কাছে বিচার চেয়েছেন। তাদের শান্ত হয়ে নিজ নিজ কর্মস্থলে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসককে মারধর করায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা। তাই চিকিৎসকরা দুপুর ২টার পর ভয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করেছেন। চিকিৎসা না পেয়ে রোগী ও রোগীর স্বজনরা কান্না করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের অনুরোধ জানিয়ে পুলিশের সহযোগিতায় তাদের কর্মস্থলে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। যে কয়েক জন চিকিৎসক এসেছেন তাদের দিয়ে আপাতত জরুরি সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED