দেশে বড় ধরনের ভূমিকম্পের শঙ্কায় উদ্বেগ বাড়ছে!
অনলাইন ডেক্স ।।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গত দুইদিনে বেশ কয়েকবার ভূমিকম্পের পর নতুন করে বড় ধরনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ধারাবাহিকতা, দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় ফাটল রেখার নড়াচড়া এবং বিশেষজ্ঞদের জরুরি সতর্কতা সব মিলিয়ে বড় ধরনের ভূমিকম্প নিয়ে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ এমন এক ভূ-টেকটোনিক অঞ্চলে অবস্থিত, যেখানে বড় কম্পন যেকোন সময় ঘটতে পারে।
২০১৬ সালে প্রকাশিত কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় একটি গোপন ফল্ট রয়েছে, যা বাংলাদেশে ৯ মাত্রার মতো ভূমিকম্প সৃষ্টি করতে পারে। এ প্রতিবেদনে গোপন এ ফল্টকে মেগাথার্স্ট ফল্ট নামে উল্লেখ করে বলা হয়, মাইলের পর মাইল বিস্তৃত পললের নিচে এটি অবস্থিত। দুই প্লেটের সাবডাকশন জোন বা দুই প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত এ মেগাথার্স্ট।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (বুয়েট), রাজউক এবং আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থার সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে উঠে এসেছে যে, ভারতীয় প্লেট প্রতিনিয়ত পূর্ব দিকে সরে যাচ্ছে এবং সেই চাপ মিয়ানমার ও বাংলাদেশের ওপর জমা হচ্ছে। ভারত, ইউরেশিয়া ও বার্মা, মোট তিনটি দৈত্যাকৃতির টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত বাংলাদেশ। প্লেটগুলো এখন আটকানো অবস্থা থেকে খুলে যাচ্ছে। ফলে যেকোনো সময় আরো উচ্চমাত্রার ঝুঁকিতে পড়তে পারে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা এ চাপ হঠাৎ মুক্তি পেলে বড় ধরনের ভূমিকম্পে গড়াতে পারে বিপর্যয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকা শহরের ঘনবসতি ও অনিয়ন্ত্রিত ভবন নির্মাণ বড় কোনও ভূমিকম্প হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ করে তুলবে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বহু ভবন নির্মাণ বিধিমালা মেনে নির্মান করা হয়নি। পাশাপাশি, অনেক পুরোনো ভবনের ওপর নতুন করে কয়েক তলা তৈরি করে বহুতল ভবন করা হয়েছে। সেগুলো রাজউক কখনো তদারকি করেনি। যার ফলে নগরী জুড়ে ভয়াবহ শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
যে কোনো সময় ভয়াবহ ভূমিকম্প হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী।
তিনি বলেন, পুরো ঢাকায় ভবন নির্মান হয়ে অকেজো হয়ে আছে। ঢাকার জন্য আলাদা কোন ম্যাপ নেই যে, ঢাকার এ এলাকার অবস্থা খারাপ। পুরো ঢাকায় বাসা বাড়ী হয়ে অকেজো হয়ে আছে। বাসা বাড়িগুলোর একেবারে অবস্থা খারাপ। যে ভবনগুলোর কোন অনুমোদন নেই। বড় ভূমিকম্প হলে পুরো ঢাকার অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। রাজউকের কোনো মাথা ব্যথা নেই। ভবন নির্মাণ করার সময় যে রাজউক তদারকি করবে এমন অবস্থায় তারা নেই। তাদের দক্ষ জনবল নেই যে তারা ভবনগুলো তদারকি করবে। মূলত রাজউকের অবহেলা ও সাধারণ মানুষের মধ্যে অসচেতনতার অভাবে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গত দুদিনে দেশে অন্তত চারবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এর চেয়েও বড় কথা হলো, ধীরে ধীরে ভূমিকম্পের মাত্রা বাড়তেও পারে। এখনো সবকিছু বলার সময় হয়নি। আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। এ কয়েক দিনের মধ্যে যদি ৫ দশমিক ৭ মাত্রার চেয়েও বড় কোনো ভূমিকম্প হতে পারে। আবার দেখা গেছে, সেটি দশ বছর পরেও হতে পারে। তবে, সে অনুযায়ী আমাদের দেশে কোন প্রিপারেশন নাই। আমাদের দেশে প্রিপারেশনের অভাব।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কক্সবাজার থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত যে ফল্ট লাইন রয়েছে, সেখানকার শক্তি ১৭৬২ সালে বের হয়ে গেছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, সেখানে নতুন করে শক্তি সঞ্চয় হচ্ছে। টেকনাফ থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত প্রায় ৪০০ কিলোমিটার জায়গায় যে ফল্ট লাইন রয়েছে সেখানে ৮ দশমিক ৫ মাত্রার বেশি শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়েছিল। এর ফলে সেন্টমার্টিন আইল্যান্ড তিন মিটার উপরে উঠে আসে। এর আগে সেন্টমার্টিন আইল্যান্ড ছিল ডুবন্ত দ্বীপ। ওই ভূমিকম্পের কারণে বঙ্গোপসাগরে সুনামি হয় এবং ৫০০ মানুষের মৃত্যু হয়।
এক গবেষনায় দেখা গেছে, হিমালয়ের নিচে থাকা টেকটোনিক প্লেট টাইমস অব ইন্ডিয়া ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছেএমন প্রতিবেদন প্রকাশের একদিন পর ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের কবলে পড়ল বাংলাদেশ। এ আশঙ্কা সত্য হলে, অদূর ভবিষ্যতে আরো তীব্র ভূমিকম্পের কবলে পড়তে পারে এ দেশ। কারণ তিনটি আলাদা প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত হওয়ায় ভূতাত্ত্বিকভাবে জটিল এক অঞ্চলে অবস্থান বাংলাদেশের। তবে পুরো পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে আরও তথ্য ও গবেষণা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
তথ্য সূত্র : ঢাকা মেইল,,,,



Post Comment