Loading Now

নগরবাসী সাবধান ; কলাপসিবল গেট ভেঙ্গেও চুরি হচ্ছে মোটরসাইকেল

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

বরিশাল নগরীর জর্ডন রোড এলাকায় সড়কের পাশে প্রায় পৌনে তিন লাখ টাকা মূল্যের মোটরসাইকেল রেখে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে মেতে থাকেন নগরীর সিকদাপাড়ার বাসিন্দা মামুন সিকদার। এ সময় তার গাড়ির ঘাড়লক করা ছিল। ৩ থেকে ৪ ঘন্টা পর তিনতলা ভবন থেকে নেমে গাড়িটি না দেখে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন তিনি। ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে এ গাড়িটি চুরি যায়।

এরপর বন্ধুদের সাথে নিয়ে নগরীর বিভিন্ন স্থানে খুঁজে বেড়ালেও গাড়ির সন্ধান আজো মেলেনি। এ ঘটনায় মামুন সিকদার কোতোয়ালী মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। পরবর্তীতে মামলা দায়ের করতে গেলে থানা পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করেন বলে জানান। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ৬ অক্টোবর বিকালে বরিশাল সাব রেজিস্ট্রি অফিস সংলগ্ন এলাকা থেকে এক আইনজীবী সহকারির একটি মোটরসাইকেল চুরি হয়। ওই মোটরসাইকেলেরও ঘাড়লক করে তার আইনজীবীর সাথে কর্মব্যস্ত সময় পার করছিলেন। কাজ শেষ করে এসে দেখেন যেখানে গাড়িটি রাখা ছিল সেখানে তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি নেই। এখন তার পক্ষে আবারো মোটরসাইকেল ক্রয় করা সম্ভব নয় বলে জানান। গাড়ি ফেরত পাবেন না জেনেও ও গাড়ি দিয়ে কোন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হলে তাকে অপরাধী সনাক্ত করা হতে পারে আশংকায় থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছেন। ওই দিনই বরিশাল সার্কিট হাউজের সামনে থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় ব্যবসায়ীদের ধাওয়ার মুখে চোর মোটরসাইকেল রেখে পালিয়ে যায়। এভাবে বরিশাল নগরী থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায়ে পর্যন্ত বেড়েছে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা।

আয়কর দপ্তরের কর্মকর্তা নগরীর দরগাহবাড়ির বাসিন্দা মো. আতিক বলেন, যাতায়াত ব্যবস্থার সুবিধা এবং সন্তানদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আনা-নেয়ার জন্য মোটরসাইকেল ক্রয় করেন। প্রতিদিন সিঁড়ির রুমে কলাপসিবল গেটে তালা মেরে এবং মোটরসাইকেলে তালা মেরে ঘুমাতে যান। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেন তার মোটরসাইকেলটি নেই। কলাপসিবলের গেটের তালা কেটে মোটরসাইকেলটি চুরি করে চোরচক্র।

তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন, তারমতে বাংলাদেশে আছে কিনা তার জানা নেই। তারপরও থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। যদি কোনদিন সন্ধান পাওয়া যায় তাহলে ওই অভিযোগটি কাজে লাগতে পারে। তবে এ আশা তিনি করেন না।নগরীর কালু খান বাড়ির বাসিন্দা মো. সাইদ বলেন, তিনি কষ্ট করে একটি মোটরসাইকেল ক্রয় করেছেন। যা তিনি তার সিঁড়ির রুমে কলাপসিবল গেটে তালা মেরে রাখেন। তারপর চোর যাতে গাড়িতে হাত লাগালেই টের পান এ জন্য এ্যালার্ম সংযুক্ত তালা লাগিয়েছেন। এছাড়া লোহার শিকল দিয়ে আরো ৪টি তালা মেরে রাখেন। যাতে করে কোনভাবেই চোর তার মোটরসাইকেল চুরি করতে না পারে। আর কোন সময় সড়কের পাশে গাড়ি রাখলে তালা মারার সাথে এ্যালার্ম দিয়ে রাখেন। তারপরও বারবার দেখে আসেন মোটরসাইকেলটি আছে কিনা।

নগরীর উপজেলা কার্যালয়ের পিছনের বাসিন্দা আরিফ এনামুল বলেন, তিনি মোটরসাইকেল কেনার সাথে সাথে ঘাড়েতালা মারার ব্যবস্থা করেছেন। বাসা থেকে বের হয়ে কোথাও গাড়ি রাখলে তালা মেরে তারপর যান। এরপরও তাকে চিন্তায় থাকতে হয় মোটরসাইকেলটি চুরি হলো কিনা।চোরের কাছ থেকে মোটরসাইকেল উদ্ধার পাওয়া সাদিকুর রহমান বিপু বলেন, তার বন্ধুর মায়ের জন্য ওষুধ নিয়ে বরিশাল নৌ বন্দরে যান। সেখানে গাড়ির ঘাড়লক করে লঞ্চে বন্ধুর মাকে ওষুধ দিয়ে এসে দেখেন গাড়িটি নেই। সাথে সাথে খোঁজ করা শুরু করেন। তার গাড়িতে গোপনীয়ভাবে একটি লক ছিল। ওই লকটি চাপ দিলে তেলের লাইন বন্ধ হয়ে যায়। সিটি মার্কেটের প্রথম গেটে গিয়ে দেখেন গাড়িটি দাঁড় করানো। কারন কিছুদূর চলার পর তেল না পেয়ে গাড়ি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি গাড়িটি উদ্ধার করতে সক্ষম হন। তবে চোর চক্রের কাউকে সনাক্ত করতে পারেননি বিপু। এরপর থেকে তেলের লাইন বন্ধ করার পাশাপাশি গাড়িতে বাড়তি আরো একটি তালা দেন তিনি।নগরীর সিকদারপাড়া এলাকায় বহুতল ভবনের নীচতলায় কলাপসিবল গেটের তালা কেটে তিনটি মোটরসাইকেল চুরি যায়। এ ঘটনায় থানায় সাধারন ডায়েরী করা হলেও পুলিশ কোনভাবেই অভিযুক্তদের সহায়তা করতে পারেননি। তাদের কর্মকান্ড সিসি ক্যামেরা দর্শনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

এছাড়া পশ্চিম কাউনিয়া জামে মামুন মসজিদ সংলগ্ন এলাকার একটি ভবনের কলাপসিবল গেট কেটে ২টি মোটরসাইকেল নিয়ে যায় চোর। এছাড়া নগরীর শেরেবাংলা সড়কে মো. আজাদ ঘরের সামনে মোটরসাইকেল রেখে বাসার ভিতরে যান। বাইরে এসে দেখেন গাড়িটি নেই। এভাবে প্রতিদিন বাড়ছে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা। কিন্তু উদ্ধারের খাতা জিরো বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
একাধিক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, মোটরসাইকেল চুরি রোধে মোটরসাইকেল কোম্পানীগুলোকেও কাজ করতে হবে। বিশেষ করে ঘাড়লকটা এমনভাবে তৈরী করতে হবে যাতে করে চোর কোনভাবেই যেন লকটি ভাঙ্গতে না পারে। এর সাথে বিভিন্ন ধরনের সিকিউরিটি ব্যবহার করা যেতে পারে। এখন বিভিন্ন ধরনের এ্যালার্ম সিকিউরিটির চেয়ে সরাসরি তালা দিয়ে রাখতে বেশী নিরাপদ মনে করেন মোটরসাইকেল চালকরা। এ কারনে মোটরসাইকেলে তালার সিস্টেম করে সেখানে তালা মারেন তারা।এ ব্যাপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, যাদের গাড়ি চুরি হচ্ছে তাদেরকে মামলা করতে বলেন। মামলা হলে সেই সূত্র ধরে গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি দেখা হবে।

ভুক্তভোগী মামুন সিকদার বলেন, তিনি লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরও তার গাড়ির সন্ধান চালাননি পুলিশ। পরবর্তীতে মামলা দায়ের করতে গেলে তারা মামলা নিতে গড়িমসি করেন। কোনভাবেই মামলা দায়ের করতে না পেরে এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তার শরনাপন্ন হলে ১৯ সেপ্টেম্বর মামলা হয়।তিনি বলেন, পুলিশের কাছে যেতে হয়েছে ওই গাড়ি দিয়ে কোন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হলে তার দায়ভার যেন তার কাধে এসে না পড়ে এ জন্য। গাড়ি উদ্ধার কোনদিনই হবে না তা তার জানা।

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED