Loading Now

নারীর প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্যর জন্য রাষ্ট্র দায়ী: বাঁধন

বিনোদন ডেক্স ।।

অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন, নাটক, মডেলিং ও সিনেমায় একের পর এক চমক দিয়ে দর্শকদের নজর কেড়েছেন তিনি। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে অভিনয়ের দ্যুতি ছড়িয়েছেন বলিউডেও। কান চলচ্চিত্র উৎসবেও প্রশংসা কুড়িয়েছেন।

জুলাই আন্দোলনে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে রাজপথেও সরব ছিলেন এই অভিনেত্রী। কিন্তু এরপর মাস কয়েক নিজেকে আড়াল করে নিয়েছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়াতেও ছিল না কোনো আনাগোনা। সম্প্রতি আড়াল ভেঙেছেন তিনি। আবারও সরব হয়েছেন। অভিনয় থেকে কিছুটা দূরে থাকলেও সামাজিক মাধ্যমে ভক্তদের সংস্পর্শে থাকছেন বাঁধন।

আর তাই সমসাময়িক ইস্যুতে নিজের স্পষ্ট অবস্থান জানাতে পিছপা হন না অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর, সাহসী অবস্থান আর স্পষ্ট বক্তব্যের জন্য বহুবার হয়েছেন আলোচনায়। আবারও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।

শনিবার (৩ মে) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নতুন করে একটি পোস্ট করেছেন এ অভিনেত্রী। বাঁধন তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আমি পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বসবাস করি, কিন্তু আমি সেখানে মরতে রাজি নই। আমি এমন পৃথিবী দেখতে চাই না, যেখানে অধিকার নির্ধারিত হবে ক্ষমতার ভিত্তিতে, আর স্বাধীনতা হবে শর্তসাপেক্ষ। আমি এমন ভবিষ্যতে বিশ্বাস করি, যেখানে প্রতিটি মানুষের কথা বলার অধিকার থাকবে, থাকবে নিজের জীবন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা—যা কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারো নেই।’

সম্প্রতি বেশ কয়েকটি স্ট্যাটাসেই উঠে এসেছে বাঁধনের প্রতিবাদী কণ্ঠ। হঠাৎ কেন এমন উপলব্ধি তার? অভিনেত্রী বললেন, ‘এটা আমার আজকের উপলব্ধি নয়। সব সময়ের। এমন সমাজেই কিন্তু আমরা বসবাস করি। বড় হয়েছি। এ ধরনের পরিবারে আমি বেড়ে উঠেছি। এমন নয় যে আমার পরিবার খুবই প্রোগ্রেসিভ চিন্তাভাবনার। আমার পরিবারও পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার একটা অংশ। আমার পরিবার, আমার বাচ্চা, বাচ্চার বাবা—সব মিলিয়ে এমন উপলব্ধি।’

কথা প্রসঙ্গে বাঁধন বললেন, ‘আমার মনে হয়, প্রত্যেকটা মেয়ে প্রতিটা মুহূর্তে অনুভব করে, তাদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। হচ্ছেও। নারীদের দমিয়ে রাখার এই চেষ্টা হয়ে আসছে সব সময়। আগে হয়তো কেউ বলত না সেভাবে, এখন সমস্যাগুলো প্রকাশ্যে আসছে। নারী তার অধিকার চাচ্ছে, আবার মানুষেরাও নারীর প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ করছে। আমি চাই যে আমার মেয়ে এই দেশের আলো–বাতাসে বেড়ে উঠবে। আমার জীবদ্দশায় দেখতে চাই, আমাদের দেশটা সাম্যের, সৌহার্দ্যের, সম্প্রীতির হবে। নারী-পুরুষ বা অন্য কোনো লিঙ্গের মানুষে কোনো বৈষম্য থাকবে না। মানুষকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। মানুষকে মর্যাদা দেওয়া হবে। মানুষ তার অধিকার পাবে। স্বাধীনতা পাবে। আমিও আশা করি, সেই সমাজ আমরা পাব।’

বাঁধন বললেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়াতে আমাকে অনেকে বলে, মন্তব্যের ঘর বন্ধ করে রাখতে; কিন্তু আমি তা করিনি। করতে চাইও না। আমাকে অনেকে এ–ও বলেছে, এত বাজে বাজে মন্তব্য। কুৎসিত সব কথাবার্তা। বিকৃত মন্তব্য—পড়ে দেখলে বোঝা যায়। আমি বন্ধ করি না আসলে এই কারণে, আমরা কোন সমাজব্যবস্থায় বাস করি, সেটার একটা প্রতিপলন এই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। মানুষ কী চিন্তা করছে, প্রকাশ্যে বলতে না পেরে অনেকে ফেক আইডি দিয়ে ফেসবুকে লিখছে। মানুষের প্রতি বিদ্বেষ, বিশেষ করে নারীর প্রতি বিদ্বেষ সেটি প্রকাশ করছে। এসব আমি দেখতে চাই। প্রমাণও রেখে দিতে চাই যে কেমন সমাজে বাস করি।’

কীভাবে এখান থেকে উত্তরণ সম্ভব, জানতে চাইলে বাঁধন বললেন, ‘আমাদের চারপাশে সামাজিক প্রতিবন্ধকতা প্রচুর আছে। আছে আইনি প্রতিবন্ধকতাও। এসব দূর করতে হবে সবার আগে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দায়টা সবচেয়ে বেশি। রাষ্ট্রের উচিত, সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের পথ দেখানো। এরপর মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কটা সম্পূরক। সত্যি বলতে, নারী সংস্কার কমিশনে যে প্রস্তাব রয়েছে, তা আমি জানি এবং সেগুলোর বেশির ভাগের সঙ্গে আমি একমত। এগুলোর প্রয়োগে সমাজে ইতিবাচক কিছু ঘটবে বলে বিশ্বাস করি।’

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED