Loading Now

নিত্যপণ্যের বাজারে নেই সুখবর, হতাশ ক্রেতা!

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

নিত্যপণ্যের বাজারে দফায় দফায় দাম বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ডিম, মাছ, মুরগি ও সবজির বাজারে লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি ক্রেতাদের নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছে। বাজার করতে গিয়ে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য মাসের বাজেট সামলানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

সরকার নির্ধারিত তালিকার বাস্তবে প্রতিফলন দেখা যায় না বাজারে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) নির্ধারিত দামে নিত্যপণ্যের তালিকা প্রকাশ করে, কিন্তু বরিশাল সহ বিভিন্ন কাঁচাবাজারে সে দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য নেই। ফলে সাধারণ ক্রেতাদের পকেটে চাপ দিন দিন বাড়ছে এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।

তবে বেশ কয়েকমাস পর বাজারে চালের দাম সামান্য নিম্নমুখী। মূলত ভারত থেকে আমদানি বাড়ায় এর প্রভাব পড়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। অন্যদিকে পেঁয়াজ আদার দামও স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে আসেনি।
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে বরিশালের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

আগের তুলনায় কিছুটা কমলেও এখনো প্রায় বেশিরভাগ সবজি কিনতে গুনতে হচ্ছে প্রতি কেজিতে ৭০ থেকে ১০০ টাকা। যা আগে আরও বেশি ছিল।

চাল বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ভারত থেকে এখন সরু বাসমতি ও মোটা কয়েক পদের চাল আমদানি হচ্ছে। ওসব চালের দাম কমেছে। তবে আগের মতোই রয়েছে জনপ্রিয় মিনিকেট চালের দাম।

 

এখন বাজারে প্রতি কেজি চাল বিক্রি হচ্ছে ৮৪ থেকে ৮৬ টাকায়, যা আগে ৯০-৯২ টাকা ছিল। অন্যদিকে, মোটা পায়জাম ও স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬০ টাকা, যা কেজিপ্রতি ৪-৫ টাকা কমেছে। তবে মিনিকেট চাল আগের দামেই ৭৮ থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

পুরান বাজারের একাধিক চাল বিক্রেতা বলেন, ভারত থেকে প্রচুর চাল আসছে, তাই দাম কমছে। তবে দেশি যেগুলো মিনিকেট আছে, সেগুলো আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। আমদানি বাড়লে দাম আরও কমতে পারে।

বাজারের আর এক চাল বিক্রেতা হোসেন মিয়া বলেন, মোকামে চালের দাম প্রতি বস্তায় (২৫ কেজি) ১০০ থেকে ১২০ টাকা কমেছে। এখন প্রতি বস্তার দাম ২০০০ টাকার মধ্যে এসেছে, যা আগে ২২০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।

তবে বাজারে প্রচলিত প্রায় সব ব্র্যান্ডের মিনিকেট চালের দামই একই আছে। আবার পুরোনো কোনো চালের দামও এখনো কমেনি।

 

বিক্রেতারা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন পর বাজারে চালের দাম কমছে। বছরের শুরুতে চালের দাম বেড়েছিল, এরপর প্রায় চড়া ছিল বাজার।

বরিশালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি বাজারে সবজির দাম কিছুটা কমলেও এখনো স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে আসেনি খুচরা বাজারে। প্রায় প্রতিটি সবজি ৭০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি প্রতি কেজি পটোল, ঢ্যাঁড়শ, ঝিঙার কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা। করলা, বেগুন, বরবটি, চিচিঙ্গা কিনতে খরচ করতে হচ্ছে কেজিতে ৮০ থেকে ১২০ টাকা। তবে পেঁপে ৪০ টাকা এবং আলু ২০/ ২৫ টাকা দরে কেনা যাচ্ছে।

তবে বাজারের পেঁয়াজের দাম সামান্য কমেছে। আগে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হলে এখন ৬৫ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে পাড়া-মহল্লায় আগের দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ।

এদিকে, মাছের বাজারেও বেশ চড়াভাব দেখা গেছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বর্তমানে চাষের মাছের সরবরাহ কিছুটা কম। এতে নদীর কিছু মাছের দাম বেড়েছে।

বাজারে ইলিশসহ চিংড়ি মাছের দাম চড়া। প্রতি ৭০০ গ্রামের একহালি ইলিশ ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ প্রতি পিস দুই থেকে তিন হাজার টাকা দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা।

অন্যদিকে, দাম বেড়ে প্রতি কেজি চাষের চিংড়ি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা এবং নদীর চিংড়ি ১০০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

এছাড়া, কই, শিং, শোল, ট্যাংরা ও পুঁটির দাম বাড়তি। চাষের রুই, তেলাপিয়া ও পাঙ্গাশও আগের চেয়ে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। প্রতি কেজি চাষের রুই, কাতলা ৪৫০-৫৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০-৩৫০ টাকা ও পাঙ্গাশ ২৫০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তবে, বাজারে এখন মুরগি ও ডিমের দাম অপরিবর্তিত আছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি ১৮০ থেকে ১৯০ এবং সোনালি জাতের মুরগি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা দামে।

এদিকে দেশি মসুর ডাল কেজিপ্রতি ১৫৫ টাকা, ভারতীয় মসুর ১০০ টাকা, মুগ ডাল ১৫০–১৬০ টাকা, খেসারি ১১০–১১২ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা এবং বুটের ডাল ১৩০–১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ১৮৫–১৯০ টাকা এবং সুপার তেল ১৭০ টাকায় অপরিবর্তিত রয়েছে। মসলার বাজার তুলনামূলক স্বস্তিদায়ক হলেও কিসমিসের দাম বেড়ে কেজিপ্রতি ৮০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। জিরা ৬৫০ টাকা, এলাচ ৪,৮০০–৫,২০০ টাকা, লবঙ্গ ১,৬০০–১,৭০০ টাকা, দারুচিনি ৬০০ টাকা ও গোলমরিচ ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। শুকনো মরিচ কিছুটা কমে কেজিপ্রতি ৪০০–৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি আদা ১৫০ টাকা, চায়না আদা ১৬০/১৭০ টাকা, দেশি রসুন ১১০ টাকা এবং চায়না রসুন ১৪০ টাকা কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছে।

 

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED