পাচার ও যৌনতার শিকার শিশুদের সুরক্ষায় মত বিনিময় সভা
নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
বাংলাদেশের অভ্যান্তরীণ পাচার এবং যৌনতার শিকার শিশুদের সুরক্ষা শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের আওতায় ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের সুরক্ষায় আইনী সেবাসহ সমন্বিত পরিষেবা নিশ্চিতকরণে জেলা আইন সহায়তা কমিটি’র সাথে মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সম্মেলন কক্ষ অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন বিজ্ঞ সিনিয়ার জেলা ও দায়রা জজ শেখ ফারুক হোসেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন লিগ্যাল এইড কমিটি সিনিয়র সহকারী জজ রেজওয়ানা আফরিন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক এ কে এম আখতারুজ্জামান তালুকদার, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর উপপরিচালক মেহেরুন্নাহার মুন্নি, মানব পাচার ট্রাইব্যুনাল পাবলিক প্রসিকিউটর এ্যাড. এস এম সরোয়ার হোসেন, নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর
এ্যাড. আব্দুল মান্নান মৃধা সহ বিভিন্ন পেশা ও শ্রেনীর নেতৃবৃন্দ।
সভায় বক্তারা বলেন, শিশু সুরক্ষায় আইন প্রয়োগের পাশাপাশি আইনি সহায়তা বাড়ানো জরুরি। বর্তমানে অনেক শিশু আইনি সহায়তার অভাবে বিচারের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শিশু কল্যাণ বোর্ড গঠন করা হলেও তা কার্যকরভাবে কাজ করছে না। এতে শিশুরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
শিশুর প্রতি যৌন নির্যাতন শুধু শারীরিক ক্ষতির কারণ নয়, এটি তার মানসিক বিকাশেরও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। অনেক সময় শিশুরা এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে নিজেদের অবাঞ্ছিত বা মূল্যহীন মনে করে, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
শিশুদের সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য অভিভাবকদের আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, শিশুরা কী করছে, কোথায় যাচ্ছে, কাদের সঙ্গে মেলামেশা করছে– এসব বিষয়ে অভিভাবকদের নজরদারি রাখা উচিত। এছাড়া শিশুরা ইন্টারনেট ব্যবহারে কতটা সচেতন, তারা পর্নোগ্রাফির মতো ক্ষতিকর কনটেন্টের সংস্পর্শে আসছে কিনা এ বিষয়েও অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হবে।
সভায় বক্তারা আরও বলেন, শিশু সুরক্ষায় বিদ্যমান আইনগুলোর আরও কার্যকর প্রয়োগ, অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তারা বলেন, শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আইনি কাঠামো শক্তিশালী করার পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ। কারন শিশুর প্রতি যৌন নিপীড়ন নানাভাবে ঘটতে পারে, আবার এই শিশুদের পারিবারিক ও সামাজিক অবস্থানের বিষয়টি মাথায় রেখে বিভিন্ন চক্র পাচারের ফাঁদে ফেলে থাকে। হোক গ্রাম কিংবা শহরের যেকোনো সামাজিক অবস্থান এবং যেকোনো বয়সের শিশুরা যৌন নিপীড়ন ও পাচারের শিকার হতে পারে। তবে প্রতিবন্ধী শিশু, কর্মজীবী শিশু, পথে বসবাসকারী শিশুসহ কিছু শিশু তাদের অবস্থার কারণে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে।
তাই শিশু যৌন নিপীড়নের ঘটনা প্রকাশ্যে আনা জরুরি। পরিবার ও সমাজ একে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে, যা অপরাধীদের উৎসাহিত করে। শুধু কন্যাশিশুরাই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে ছেলে শিশুরাও যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। শিশু সুরক্ষায় ও আইনি সহায়তা বৃদ্ধিতে সরকার ডিএনও টেস্ট ল্যবরোটারিকে আরও কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে।
এছাড়াও প্রকল্পের করণীয় দিকগুলোর বিষয় তুলেধরে মুক্ত আলোচনা করা হয়।
Post Comment