Loading Now

প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত বরিশালের মৃৎশিল্পীরা

 

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

 

শ্রাবণের শেষে নতুনভাবে সেজেছে নৈসর্গিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ ঋতু শরৎ। আকাশের বুকে শুভ্র মেঘের উড়ে বেড়ানো কিংবা মেঘ-রোদের লুকোচুরি খেলায় মত্ত প্রকৃতিতে আগমন ঘটেছে শারদীয় দুর্গাপূজার। তাই শরতের আবহে সেজে দুর্গাপূজার আগমনী বার্তা দিচ্ছে প্রকৃতি। এদিকে প্রতিমা তৈরির মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে গেছে দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় আয়োজন শারদীয় দুর্গোৎসব। আগামী অক্টোবরের ৯ তারিখ থেকে শুরু হতে যাওয়া দুর্গোৎসবের বাকি এক মাসেরও কম সময়। চারদিকে এখনই শুরু হয়েছে উৎসবের আমেজ। এ আয়োজনের অন্যতম অনুষঙ্গ দেবী দুর্গার প্রতিমা। তাই এই উৎসবকে ঘিরে গোটা বরিশালজুড়ে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। এরই মধ্যে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎ শিল্পীরা। শরতের সুনীল আকাশে শ্বেতশুভ্র মেঘের আনাগোনা। আরেক সাদা কাশবন কেবলই ঝলমলে উন্মুখ-উদ্বেল হতে শুরু করেছে নদ-নদীর রুপালি চরবচর। প্রকৃতি এভাবেই জানান দিয়ে জাগিয়ে তুলেছে ভক্তদের। শারদীয় দুর্গোৎসবের এমন বার্তা আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে পরেছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। মর্ত্যলোকের মালাকার পল্লীতে এখনই দুর্গতিনাশিনী রূপে ধরা দিয়েছে দেবী দুর্গা।

জানা যায়, প্রচলিত ধারণামতে বসন্তকালের এ পূজাকেই প্রকৃত পূজা বলে অবিহিত করা হয়। বিপরীতে শরৎকালের শারদীয় পূজাকে বলা হয় অকালবোধন। রামচন্দ্র কর্তৃক প্রবর্তিত অকালের পূজা। কিন্তু বিষয়টি শাস্ত্রীয় দৃষ্টিতে যথাযথ নয়। শ্রীচণ্ডীতে জগন্মাতা দুর্গা নিজেই তাঁর বাৎসরিক পূজা শরৎকালে করতে বলেছেন।

শরৎকালে মহাপূজা ক্রিয়তে যা চ বার্ষিকী।
তস্যাং মমৈতম্মাহাত্ম্যং শ্রুত্বা ভক্তিসমন্বিতঃ।।
(শ্রীচণ্ডী :১২.১২)

“শরতকালে আমার যে বাৎসরিক মহাপূজা অনুষ্ঠিত হয়, সে পূজায় আমার মাহাত্ম্যকথারূপ শ্রীচণ্ডী পাঠ করে সবাই ভক্তিসহকারে শ্রবণ করবে।”

 

প্রতিবারের মতো এবারও দুর্গোৎসবের আয়োজনকে ঘিরে কোনো কিছুর কমতি রাখতে চান না মন্দির কমিটিগুলো। বিগত দিনের থেকেও জাকজমকপূর্ণ আয়োজন করা হবে বেশিরভাগ মন্দিরেই।

জানা গেছে, বরিশাল বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মণ্ডপ থাকছে বরিশাল জেলায়। নগর ব্যতীত বরিশাল জেলার পূজামণ্ডপের সংখ্যা ৫৪৫টি।

আর এর মধ্যে সব থেকে বেশি এ বছর ১৭১টি মণ্ডপে পূজার আয়োজন চলছে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায়। বিভাগের তথ্যানুযায়ী, বরিশাল বিভাগের সবচেয়ে বেশি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে আগৈলঝাড়া উপজেলায়।

জানা গেছে, এ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে চলছে প্রতিমা নির্মাণের কাজ। দেবী দুর্গার সঙ্গে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী প্রতিমা নির্মাণে মহা ব্যস্ত সময় পার করছেন পাল পাড়ার মৃৎ শিল্পীরা।

উপজেলার পাল পাড়ার বাসিন্দা জয়দেব পাল, সঞ্জয় পালসহ মৃৎ শিল্পীরা জানিয়েছেন, এ বছরও তারা অন্য বছরের মতো প্রতিমার আকার ও আয়তন ঠিক রেখেই প্রতিমা নির্মাণ করছেন।

তবে এ বছর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় প্রতিমা নির্মাণের খরচ একটু বেশি পড়বে। প্রতিমা নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের পথে। পূজার এক সপ্তাহ আগে থেকে প্রতিমার গায়ে রং-তুলির আঁচড়ের কাজ শেষ করবেন বলে জানান তারা।

আর আগৈলঝাড়া উপজেলা কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুনীল কুমার বাড়ৈ জানান, এ বছর উপজেলায় মোট ১৭১টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। তবে বিগত সময়ের মতো বড় মন্দির বা মণ্ডপগুলোতে সেচ্ছাসেবকরা নিয়োজিত থাকবেন।

পঞ্জিকা মতে, ২ অক্টোবর মহালয়ের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে মর্তলোকে বেজে উঠবে দেবীর আগমনি বার্তা। ৮ অক্টোবর দেবী দুর্গার মর্তে আগমনী বার্তায় দেবীর বোধন পূজা। ৯ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে দেবীর দুর্গার নবপত্র কল্পারম্ভ। ওইদিন মণ্ডপে মণ্ডপে বেজে উঠবে ঢাক-ঢোল আর কাঁসরের শব্দ। ১০ অক্টোবর মহাসপ্তমী পূজা। ১১ অক্টোবর দেবীর মহাঅষ্টমী পূজা। মহানবমী পূজা ১২ অক্টোবর। দশমী বিহিত পূজা সমাপনান্তে দেবী বিসর্জন ও দশ হরার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পন্ন হবে পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গাপূজার ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

 

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED