Loading Now

ববি অধ্যাপককে অব্যাহতির প্রতিবাদে বরিশালে মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এর উপাচার্য হওয়ার যোগ্যতা অর্জনের কারণেই অধ্যাপক মুহসিন উদ্দিনকে সরিয়ে দিতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র চলছে বলে দাবী করেছেন বরিশালের ছাত্র জনতা এবং সাংষ্কৃতিক অঙ্গনের লোকজন। ববির ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মুহসিন উদ্দিনকে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যপদ থেকে অপসারণ এবং উপাচার্য শুচিতা শরমিনসহ ফ্যাসিবাদের দোসর শিক্ষকদের পুনর্বাসনের প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশে এ দাবী করেন ছাত্র-জনতা। এতে ববির শিক্ষার্থীরাও অংশগ্রহন করেন এবং দাবী পূরণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ৪৮ ঘন্টার সময়সীমা বেধে দেন । এই ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ক্ষমা চেয়ে অধ্যাপক মুহসিন উদ্দিনকে স্ব-পদে ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

গত ২৬ এপ্রিল শনিবার বরিশালের অশ্বিনী কুমার টাউনহলের সামনে এই মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে ছাত্র শিক্ষক জনতার পক্ষে বক্তব্য রাখেন, সরকারি বিএম কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মহিউদ্দিন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রেজা শরীফ, বরিশালের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে বক্তব্য রাখেন কবি ও গবেষক সাইফুল আহসান বুলবুল, জাসদ বরিশালের সভাপতি শহীদুর ইসলাম মিরণ, কবি আসমা চৌধুরী, জয়নাল আবেদীন, ফয়সাল বরী, ভাস্কর সাইফুল্লাহ নবীন, মিনতী দাস, আবদুর রহমান, উপন্যাসিক জান্নাতুল ফেরদৌস শিশির, কবি শফিক আমিন সহ আরো অনেকে।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, অধ্যাপক মুহসিন উদ্দিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র অধ্যাপক যিনি জুলাই আন্দোলনে সরাসরি ছাত্রদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। যার প্রমাণ পাওয়া গেছে জুলাই বিপ্লবের ভিডিও রেকর্ড ফাঁস হওয়ার ঘটনায়। সেখানে স্পষ্ট শোনা ও দেখা গেছে তিনি ছাত্র জনতার পক্ষে ছিলেন এবং ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। অথচ আজ তৎকালীন ফ্যাসিবাদের দোসরই তাকে ‘স্বৈরাচারের দোসর’ আখ্যা দিয়ে অব্যাহতি দিয়েছে, যা সম্পূর্ণ অন্যায় ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
রেজা শরীফ বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের সময় অধ্যাপক মুহসিন উদ্দিন আমাদের পাশে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন এবং ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে উদ্ভূত। ইতিপূর্বে তিনি নিজেই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন, তখন তাকে অব্যাহতি দেওয়া যেত। এখন এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের জন্য নেওয়া হয়েছে। আসলে আগামীতে তিনিই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হবার যোগ্য। তাই তাকে সরিয়ে দিতে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে বলে জানান রেজাসহ একাধিক শিক্ষার্থী।

বিএম কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মহিউদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীদের যেকোনো যৌক্তিক আন্দোলনে কিংবা বিপদে শিক্ষকরা তাদের পাশে থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। যার অনন্য উদাহরণ স্থাপন করেছেন মুহসিন উদ্দিন। গোপন যে ভিডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে, সেখানে তা স্পষ্ট হয়েছে যে শেষ মুহূর্তে ৪ আগস্টও তিনি ছাত্রদের পক্ষ নিয়ে কথা বলেছেন। সেখানে তাকে ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিয়ে সম্মানহানি সহ বিভিন্ন দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রতিবাদ জানাতে আমিও এখানে এই প্রতিবাদী মানববন্ধনে অংশ নিয়েছি।

সাহিত্যিক ও গবেষক সাইফুল আহসান বুলবুল, কবি আসমা চৌধুরী, শফিক আমিন বলেন, বিগত ১৫ বছর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের একমাত্র অধ্যাপক মুহসিন উদ্দিন ফ্যাসিবাদের দ্বারা নির্যাতিত ও জাতীয়তাবাদী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে কোনঠাসা ছিলেন। অথচ তিনি একজন মুক্তমনা সুসাহিত্যিক। ঐ সময় তিনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কবি জীবনানন্দ গবেষণা কেন্দ্র তৈরি করেছেন। তিনি একমাত্র শিক্ষক যার কাছে দলমত নির্বিশেষে শিক্ষার্থীরা সবরকম সহযোগিতা পেতেন। সেই তাকে বিগত সময়ে জামাত-শিবিরের ট্যাগ দেওয়া হয়েছে, আর এখন তাকে ফ্যাসিবাদের দোসর বলার চেষ্টা চলছে। এটা এজন্য যে তিনিই এখন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হবার যোগ্য। তাই যেকোনো কৌশলে তাকে সরিয়ে দিতে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে।

জানা গেছে, অধ্যাপক ড. মো. মুহসিন উদ্দিনকে পতিত সরকারের সমর্থক ও দোসর উল্লেখ করে ১৩ এপ্রিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এসময় বর্তমান উপাচার্য শুচিতা শরমিন তাকে ফ্যাসিস্ট বলে দাবী করেন। এর প্রতিবাদে চারদফা দাবীতে আন্দোলন করছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা উপাচার্য শুচিতা শরমিনসহ ফ্যাসিবাদের দোসর সব শিক্ষকদের পদত্যাগ দাবী এবং অধ্যাপক মুহসিন উদ্দিনকে স্ব-পদে বহাল রাখার আহ্বান জানান।

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED