Loading Now

ববি উপাচার্যের স্বেচ্ছাচারিতা : ‘বিতর্কিত’ সিদ্ধান্তে পদায়ন-রদবদল!

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই একের এক বিতর্কিত নিয়োগ দিয়ে সমালোচিত হচ্ছেন অধ্যাপক শুচিতা শরমিন। একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট সভার তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন পদ থেকে ডজনখানেক কর্মকর্তাকে সরিয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই এমন ব্যক্তিদের পদায়নের অভিযোগও উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। এ ছাড়া মতের মিল না হওয়ায় সিন্ডিকেট থেকে সরিয়ে দিয়েছেন এক অধ্যাপকসহ তিন শিক্ষককে। এসব নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

 

সরকারের পতনের পর মাত মাস আগে গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর ববির প্রথম নারী উপাচার্য (ভিসি) হিসেবে দায়িত্ব পান শুচিতা শরমিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনিয়ম দূর করার লক্ষ্যেই এ নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে সেই অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। উল্টো শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাঁর অনিয়মের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন। সর্বশেষ সিন্ডিকেট থেকে তিন শিক্ষককে সরিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।

 

পদায়নে যত অনিয়ম

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব শাখার উপপরিচালক বরুণ কুমার দেকে ১৫ এপ্রিল তাপসী রাবেয়া ছাত্রীনিবাসে উপরেজিস্ট্রার পদে বদলি করা হয়। কিন্তু ওই হলে সেকশন অফিসারের ওপরে আর কোনো পদই নেই। নিয়মবহির্ভূতভাবে এই পদায়ন করা হয়েছে। বরুণ কুমার বলেন, মহিলা কর্মকর্তা থাকার পরও মহিলা হলে পুরুষ কর্মকর্তাকে কেন দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, বুঝতে পারছেন না।

এই অর্থ ও হিসাব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অতিরিক্ত পরিচালক সুব্রত কুমার বাহাদুরকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের রুটিন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। উপরেজিস্ট্রার বাহাউদ্দিন গোলাপকে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির উপলাইব্রেরিয়ান করা হয়েছে। যদিও এই পদে যাওয়ার জন্য যে উচ্চতর ডিগ্রি দরকার, তা তাঁর নেই। একইভাবে সহকারী রেজিস্ট্রার হাবিবুর রহমানকে হলের দায়িত্বে পাঠানো হয়েছে। সহকারী রেজিস্ট্রার সাকিজ উদ্দিন সরকারকে পাঠানো হয়েছে সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে।

কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘কর্মকর্তাদের রদবদলের কারণ রুটিনওয়ার্ক। উপাচার্যের নির্দেশে তা করা হয়েছে।’

এর আগে সহকারী রেজিস্ট্রার মনোয়ার হোসেনকে সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে, উপরেজিস্ট্রার দিদার হোসেন খানকে রেজিস্ট্রার দপ্তরে, ভিসির একান্ত সচিব বোরহান উদ্দিনকে উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে এবং ভিসির পিএ-২ রুহুল আমিনকে টিএসসিতে বদলি করা হয়। জানা গেছে, উপাচার্যের বিরুদ্ধাচরণ করলেই শাস্তি হিসেবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে পাঠানো হয়। ওই দপ্তরের অন্তত পাঁচজনকে বদলি করা হয়েছে, যাঁদের বসার জায়গা নেই। এ প্রসঙ্গে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের রুটিন দায়িত্ব পাওয়া সুব্রত কুমার বাহাদুর বলেন, তিনি আসার আগপর্যন্ত এ দপ্তরে কয়েকজনের বসার জায়গা ছিল না। তাঁর বসারও কক্ষ নেই। তিনি এখন বসার ব্যবস্থা করছেন।

এদিকে কোনো কারণ ছাড়াই সিন্ডিকেট থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীন, সহকারী অধ্যাপক মো. মোস্তাকিম রহমান এবং প্রভাষক মো. ফরহাদ উদ্দিনকে। এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ প্রসঙ্গে মুহসিন উদ্দীন বলেন, তিনিসহ তিন শিক্ষককে পুরোপুরি বেআইনিভাবে সিন্ডিকেট থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এখন ভিসি কীভাবে সিন্ডিকেট চালাবেন, তা তিনিই জানেন।

এর আগে তিনবার প্রক্টর পরিবর্তন করেছেন উপাচার্য ড. শুচিতা শরমিন। সব হলে নিয়োগ দিয়েছেন নিজস্ব প্রভোস্ট। অভিযোগ উঠেছে নতুন দায়িত্ব পাওয়া অনেকেই পতিত সরকারের দোসর ছিলেন। জানতে চাইলে ট্রেজারার মামুন অর রশিদ বলেন, ববিতে ভাইস চ্যান্সেলর ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন করছেন। ছাত্র আন্দোলনের সময় কাইউমের হুকুমে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হলো। অথচ সেই শিক্ষক কাইউমকে নানা দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। মুহসিন উদ্দীন বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র অধ্যাপক। তাঁকে অনৈতিকভাবে নির্বাহী আদেশে সিন্ডিকেট থেকে সরানোর সুযোগ নেই।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য শুচিতা শরমিন বলেন, ‘অধ্যাপক মুহসিনকে সিন্ডিকেট থেকে বাদ দেওয়ার কারণ তিনি সভা বয়কট করেছেন। এর আগে পদত্যাগও করেছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে ওই সময় নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন।’

তবে সহ-উপাচার্য গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘কোনো শিক্ষককে যদি একাডেমিক কাউন্সিল কিংবা সিন্ডিকেট থেকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে তা একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমেই হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে এককভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া আইনবহির্ভূত।’

 

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED