Loading Now

বরগুনায় ১৪ খেয়াঘাটে ২৫ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি, যাত্রীদের ক্ষোভ!

বরগুনা প্রতিনিধি ।।

নদীবেষ্টিত বরগুনার এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম খেয়া পারাপার। খরস্রোতা পায়রা ও বিষখালী নদী পাড়ি দিয়ে যেতে হয় বরগুনার চারটি উপজেলায়। সম্প্রতি এই দুটি নদীর ১৪টি খেয়াঘাটে ২৫ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করে ২০ টাকার ভাড়া ২৫ টাকা নির্ধারণ করেছে বরগুনা জেলা পরিষদ।

জ্বালানি তেলসহ দ্রব্যমূল্যের দাম কমার পরও ভাড়া বাড়ানোয় ক্ষুব্ধ স্থানীয় সচেতন নাগরিকসহ যাত্রীরা। এজন্য মানববন্ধনও করেছেন তারা। জেলা পরিষদ বলছে, স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়ম মেনেই ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।

জেলা পরিষদ জানায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি তিন বছর পরপর ভাড়া পুনঃনির্ধারণ কিংবা যৌক্তিকরণ করার বিধান রয়েছে। এছাড়া সবশেষ তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ইজারা মূল্যের ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করে দরপত্র আহ্বান করতে হয়। এবছর পুরাকাটা-আমতলী খেয়া ঘাট থেকে সর্বোচ্চ ১ কোটি ৬৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা ইজারা আদায় করা হয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে বড়ইতলা-বাইনচটকি ঘাট থেকে ১ কোটি ১৮ লাখ ২৫ হাজার, চালিতাতলী-বগী ঘাট থেকে ৮৬ লাখ ৪৬ হাজার টাকা, ফুলঝুরি-রামনা ঘাটে ৬৫ লাখ ৭৮ হাজার ৫১৫, নিশানবাড়িয়া-পাথরঘাটে ৫৪ লাখ ৮০ হাজার ৭৫০, বামনা-বদনিখালী ঘাটে ৪১ লাখ ৩২ হাজার, গোলবুনিয়া-পচাঁকোড়ালিয়া ঘাটে ১৫ লাখ ৬২ হাজার, লতাকাটা-নকরী ঘাটে ৯ লাখ ৭১ হাজার ৫০০, পোটকাখালী-ঘম ঘাটে ৬ লাখ ৭১ হাজার,বালিয়াতলী-তালতলী ঘাটে ৩ লাখ ১১ জাহার ৫০০, কাকচিড়া-গুলিশাখালী ঘাটে ৩ লাখ ১হাজার, কালমেঘা-বান্দরগাছীয়া ঘাটে ২ লাখ ৩৫হাজার, পোটকাখালী বাজার-কুমরাখালী ৩৬ হাজার এবং আয়লা-গুলিশাখালী ঘাটে ২২ হাজারঙঘূডঢ ২০০ টাকা ইজারা আদায় করা হয়েছে।

এবছর ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ায় পরীক্ষামূলকভাবে নিজেদের তত্ত্বাবধানে ১৫ দিন খেয়া পরিচালনা করে জেলা পরিষদ। এতে এক দিনে পুরাকাটা-আমতলী ঘাট থেকে ৫১ হাজার, চালিতাতলি-বগি ঘাটে ২৮ হাজার, বড়িইতলা-বাইনচটকি থেকে ৪০ হাজার ৫০০, ফুলঝুরি-রামনা ঘাটে ১৮ হাজার ৫০০ এবং নিশানবাড়িয়া-পাথরঘাটা থেকে ১১ হাজারসহ মোট ১৩ লাখ ৭১ হাজার ৫০০ টাকা রাজস্ব আদায় হয়। নতুন নির্ধারিত ভাড়া আগামী তিন বছর কার্যকর থাকবে।

প্রতিবছর সবমিলিয়ে বরগুনায় কয়েক কোটি টাকা ইজারা আদায় হলেও ঘাট ও যাত্রী সেবার মান উন্নয়নে তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না বলে অভিযোগ যাত্রীদের। অনেক ঘাটেই ওঠানামার জন্য নির্দিষ্টভাবে আলাদা কোনো ঘাটের ব্যবস্থা না থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। বিভিন্ন ঘাটে নির্মিত যাত্রীছাউনি দখল হয়ে যাওয়াসহ প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে সৃষ্টি হয়েছে বেহাল দশার।

সরেজমিনে বরগুনার বিভিন্ন খেয়া ঘাটে দেখা যায়, যাত্রী ও মোটরসাইকেলবোঝাই করে ঘাটে ভিড়ছে ট্রলার। কোনো ট্রলারেই নেই জীবন রক্ষাকারী লাইফ জ্যাকেট বা বয়া। আমতলী-পুরাকাটা ও বড়ইতলা-বাইনচটকি ফেরিঘাটকে খেয়াঘাট হিসেবে ব্যবহার করায় একদিকে ফেরিতে বিভিন্ন গাড়ি ওঠানামা করছে, অন্যদিকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একই পথে খেয়ায় ওঠানামা করছেন যাত্রীরা। এতে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। এছাড়া অনেক ঘাটে নেই যাত্রীছাউনি ও টয়লেট। যেগুলো আছে তার অনেকগুলোই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে ভাঙা অবস্থায়।

যাত্রীছাউনি না থাকায় যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হয় রাস্তায় অথবা পাশে থাকা বিভিন্ন চায়ের দোকানে। এতে পুরুষ যাত্রীরা বিভিন্ন জায়গায় বসে সময় পার করলেও বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন নারী এবং শিশু যাত্রীরা। ফলে ঘাটে আসা যাত্রীদের পড়তে হয় ভোগান্তিতে। এছাড়া সময় নির্ধারণ করা না থাকায় একরকম সিন্ডিকেট করেই চলছে প্রতিটি খেয়াঘাটে ইজারাদারদের খামখেয়ালি। যতক্ষণ না যাত্রী বোঝাই হবে ততক্ষণ কোনো খেয়াই ছাড়া হয় না।

বরইতলা-বাইনচটকি খেয়াপাড়া পারাপারের সময় রিয়াজ নামের পাথরঘাটার একজন যাত্রী বলেন, ‌‘আমি ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাই। এজন্য প্রায় দিনই খেয়া পারাপার করতে হয়। এখন হঠাৎ করেই ২০ টাকার ভাড়া ২৫ টাকা করা হয়েছে। আর এখানে একটি নিয়ম চলে—মানুষও ২৫ টাকা, মোটরসাইকেলেরও ২৫ টাকা ভাড়া। তেলের দাম কমেছে, তারপরও কেন এই ভাড়াটা বাড়ানো হয়েছে আমি বুঝতে পারছি না।’

যাত্রীদের সঙ্গে কোনো রকমের আলোচনা ছাড়াই ভাড়া বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে বরগুনা যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম টিটু বলেন, তেলের দামসহ জিনিসপত্রের দাম কমে গেলেও ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এটা অযৌক্তিক। এ বিষয়ে আমরা প্রতিবাদ জানাই।

জানতে চাইলে বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ভাড়া বৃদ্ধিতে মানুষের ওপরে চাপ পড়লেও বিদ্যমান নীতিমালার ভিত্তিতেই এটি করা হয়েছে। এখান থেকে প্রাপ্ত অর্থ খেয়াঘাটের উন্নয়নসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যয় করা হবে। সবকিছু সমন্বয় করার জন্যই ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED