বরিশালে অবৈধ বালু উত্তোলনে নদী ভাঙ্গন, আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ
নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
বরিশালের বাবুগঞ্জের সন্ধ্যা নদী ও আড়িয়াল খাঁ নদের তীরে ভাঙনে দিশেহারা কেদারপুর ইউনিয়নের শতাধিক পরিবার। শনিবার (১৭ মে) সন্ধ্যায় ১ ঘণ্টার মধ্যে ৮টি বসতঘরসহ বেশ কিছু স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
গত কয়েক দিনে নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ভাঙন বেড়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে মোল্লারহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ আরও শতাধিক বাড়িঘর ও আশপাশের এলাকা। এতে আতঙ্কে রয়েছেন উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের পূর্ব ভূতেরদিয়া, মোল্লারহাটসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার বিকেলে হঠাৎ করে আড়িয়াল খাঁ নদের মোহনায় কেদারপুর ইউনিয়নের পূর্ব ভূতেরদিয়া গ্রামের মোল্লারহাট এলাকার বেশ কিছু অংশ দেবে যায়। সন্ধ্যার মধ্যে ৮টি বসতবাড়ি নদে বিলীন হয়ে যায়। যে কোনো সময় নদে বিলীন হতে পারে মোল্লারহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ভাঙনে দেবে যাওয়ার আশঙ্কায় ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছেন অনেকেই। ভাঙনকবলিত মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
রোববার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ও নদী ভাঙনের আশঙ্কায় থাকা পরিবারগুলো তাদের ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা শাহাবুদ্দিন জানান, শনিবার দুপুরে তাদের বাড়ির সামনে বিশাল ফাটল দেখা দেয়। সন্ধ্যা নাগাদ চোখের পলকে ৮টি বসতবাড়ি ও ফসলি জমিসহ সন্ধ্যা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, ‘সন্ধ্যা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় দুই বছর আগে মোল্লারহাট নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। মোল্লার হাটের কিছু অংশ রক্ষার্থে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জরুরি কাজের নামে অর্থ ব্যয় করলেও কাজের কাজ হয়নি।’
বর্তমানে ভাঙন তীব্র হওয়ায় ঝুঁকিতে রয়েছে ওই গ্রামের বড় একটি অংশ। হুমকিতে পড়েছে এলাকার দক্ষিণ ভূতেরদিয়া তাবলিকুল ইবতেদায়ি মাদরাসা, একটি মসজিদ, স্থানীয় একটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক।
ভাঙন আতঙ্কে নদের তীরের মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মোহাম্মদ আলী চৌকিদার বলেন, ‘গতকাল দুপুরে হঠাৎ তাঁদের বাড়িঘরসহ বিশাল এলাকার মাটিতে ফাটল ধরে দেবে যেতে থাকে। বিকেলের মধ্যে এসব এলাকা ও বসতঘর বিলীন হয়ে যায়। দিনের বেলা হওয়ায় কোনোরকমে তাঁরা প্রাণে বেঁচে গেছেন। সর্বস্ব হারিয়ে তারা এখন নিঃস্ব।’
ভাঙনে হুমকিতে থাকা পরিবারগুলোর সদস্যরা জানান, ২ থেকে ৩ বছর আগে মোল্লার হাট বাজারটি রক্ষার জন্য পাউবো জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৩০ লাখ টাকার প্রকল্পের মাধ্যমে বালুর বস্তা (জিও ব্যাগ) ফেলে। আড়িয়াল খাঁ নদ, সুগন্ধা নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করা না হলে ভাঙন ঠেকানো যাবে না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে আমরা অর্থ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেছি। আর স্থায়ীভাবে ওই এলাকার ভাঙন রোধের জন্য একটি কারিগরি কমিটি করা হয়েছে। কমিটি ওই ভাঙনের কারণ এবং আরও যেসব এলাকা ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে, সেটা নিরূপণ করবে। এরপর মন্ত্রণালয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠাব।’,,,,,,,
Post Comment