বরিশালে ওসি-এসআই’র সহযোগিতায় জমি দখল ও ধান কাটার অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
বরিশালের কাজিরহাট থানার প্রাক্তন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান ও সাব-ইনস্পেক্টর (এসআই) মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে জমি দখল ও ধান কেটে নিয়ে যাওয়ায় সহযোগিতা ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগীরা। এ সময় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
আজ মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১২ টায় বরিশাল রিপোর্টার ইউনিটি কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বরিশাল জেলার কাজিরহাট থানাধিন আদর্শ নগর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা মোঃ আরিফ হোসেন।এ সময়ে তার সাথে ভুক্তভোগী আরো তিনজন উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে মোঃ আরিফ হোসেন অভিযোগ করেন, কাজিরহাট থানার প্রাক্তন ওসি মিজানুর রহমান ও এসআই মেহেদীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তাদের পরিবারের দীর্ঘদিনের ভোগদখলকৃত ৩০ একর সম্পত্তির অন্তত ৫ একর,স্থানীয় আলমগীর সরদার দুলাল বেপারী ও ও আমির হোসেন ব্যাপারীর নেতৃত্বে , ৫০/৬০ জন সন্ত্রাসী অবৈধভাবে দখল করে আমন ধান কেটে নিয়ে গেছে।
বিবদামান জমি নিয়ে, গত চার মাস ধরে, উত্তেজনা দেখা দিলে, আদালত ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে, দুর্বৃত্তদের, ধান কেটে নেয়ার সুযোগ করে দেয়, ওসি মিজানুর রহমান ওএসআই মেহেদী হাসান। এছাড়া তারা, আমাদের কাছ থেকেও, নগদ ও বিকাশে, বিভিন্ন মাধ্যমে এক লক্ষ টাকা ঘুষ নিলেও প্রতিপক্ষকে ধান কেটে, নিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয় ‘গত ৬-৭ ডিসেম্বর, দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত ৫০- ৬০ জন দুর্বৃত্ত এই ধান কেটে নিলে আমরা লিখিতভাবে থানায় অভিযোগ করি -কিন্তু পুলিশ তারপরেও দুর্বৃত্তদের বাধা না দিয়ে তাদের ধান কেটে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয় “
সংবাদ সম্মেলনে আদালতের আদেশ অমান্যের গুরুতর অভিযোগও তোলেন আরিফ হোসেন। তিনি বলেন, উক্ত জমি নিয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এমপি মামলা চলমান রয়েছে। ওই মামলায় আদালত ১০ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত শুনানি চলাকালীন কোনো পক্ষ ধান কাটতে পারবে না—এমন সুস্পষ্ট নির্দেশ প্রদান করেছিলেন। তবুও আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ওসি ও এসআই-এর প্রত্যক্ষ প্রশ্রয়ে বিবাদীরা ধান কেটে নিয়ে যায় বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এছাড়া তিনি জানান, গত কয়েক মাস ধরে বিবাদী পক্ষ বিভিন্ন সময় মিথ্যা মামলা দিয়ে তার পরিবারকে হয়রানী করছে বলে অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান। এ বিষয়ে তিনি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইজিপি, বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি, বরিশাল জেলা পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন।
এ সময় তিনি চার দফা দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো— ১. কাজিরহাট থানার ওসি ও এসআই-এর বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত ও কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ। ২. তার ও তার পরিবারের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ৩. তাদের ভোগদখলকৃত সম্পত্তি রক্ষা এবং আদালতের নির্দেশ কার্যকর করা। ৪. সন্ত্রাসী হামলা ও ধান লুটের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার।
এ বিষয়ে কাজিরহাট থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, ধান কেটে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা একটি অভিযোগ দিয়েছিল। ইতিমধ্যে আমি বদলি হয়ে ভোলার দুলারহাট থানায় চলে এসেছি। এ বিষয়ে সর্বশেষ অবস্থা আমার জানা নেই। তবে ঘুষ গ্রহণের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
ওসি আরও জানান, কাজিরহাট থানা এ ধরনের ঘটনা আরো ঘটেছে অন্তত তিনটি, ধান কেটে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবছর এই মৌসুমে এই ঘটনাগুলো ঘটে থাকে -আমরা সাধ্য মতো চেষ্টা করছি।
কাজিরহাট থানার নবাগত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নবীউল ইসলাম জানান, আমি আজকে যোগদান করেছি। এখনো পুরো বিষয়টি জানিনা, জেনে বলতে পারবো।



Post Comment