বরিশালে ছাত্র আন্দোলন নস্যাতের মাস্টার মাইন্ডরা ধরাছোঁয়ার বাহিরে!
নিজস্ব প্রতিবেদক :
গত জুলাই ২০২৪ ইং মাসে দেশব্যাপী শুরু হওয়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রতিহত করতে সারা দেশে আওয়ামীলীগ ও তার অংগ সংঘঠনের নেতা কমীর্রা বিভিন্ন প্রকার দেশী বিদেশী অস্ত্র হাতে নিয়ে ছাত্র—জনতার উপর হামলা, মারামারি ও মিছিলসহ নাশকতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে। এসময় বরিশাল নগরের একাধিক স্থানে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে মিছিলে নেতৃত্ব দিয়ে ছাত্র—জনতার উপর চড়াও হতে দেখা গেছে যে সকল ২য় সারির নেতাদের তাদের মধ্যে অন্যতম হল বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র জিয়াউর রহমান বিপ্লব। এই ব্যক্তি বরিশাল আওয়ামী লীগের ১ম সারির অর্থাৎ শামিম,সাদিক,খোকন,জাহাঙ্গীর, মামুনের পর সবচেয়ে বেশি দাপট দেখিয়েছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সম্নান ক্ষুন্নকারী বিপদগ্রস্ত কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের ভাই এটাই ছিল তার বড় পরিচয়। কথিত আছে ছাত্রদের এই আন্দোলন নস্যাত করতে তিনি তার একাধিক অনুসারীদের হাত তুলে দিয়েছিলেন দেশি বিদেশী একাধিক অস্ত্র। আবার কেউ বা বলে নিজের বিশস্ত ১০ জন ব্যক্তিকে বিএম কলেজ ও নতুল্লাবাতে ছাত্রদের দমনে তুলে দেন ১০ টি গুলিভর্তি শর্টগান,যেগুলো লাইসেন্সবিহীন।এই বিপ্লব নগরের ২০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর।ছিলেন না আওয়ামী লীগের কোন দায়িত্বশীল পদে। তবুও তার দাপটে তটস্থ থাকতে হতো থানার ওসি থেকে শুরু করে যেকোনো ব্যক্তিকে।গত ১৭ জুলাইয়ে বরিশালের নতুল্লাবাতে পুলিশের সংগে ব্যপক সংঘর্ষ হয় ছাত্র জনতার। ঐ সময়ে পুলিশের পাশাপাশি এই বিপ্লব ওরফে ল্যাটো বিপ্লবের নেতৃত্বে তার সাঙ্গপাঙ্গরা গুলি ছোড়েন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। গত ৫ আগস্টের আগে তিনি সিটি মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত এর বাসভবনে গভীর রাত অবধি আন্দোলন ঠেকাতে বিশেষ বৈঠক করতেন কাউন্সিলরদের ও তাদের অনুসারীদের নিয়ে। নগরের কলেজ এভিনিউ, বৈদ্যপারা খ্রিস্টান কলোনির বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রদের ম্যাচে গিয়ে তার লোকেরা নৈরাজ্য চালাত।যদিও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বরিশাল ছেড়ে পালিয়ে গেছেন বিপ্লব।প্রকাশ্যে আসার সাহসও নেই।কারন গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছেন প্রকাশ্যে পাওয়া গেলে ছাত্ররা শুধু নয় বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতাকর্মীদের রোষানলে পড়তে পারেন এই প্যানেল মেয়র। তবে তাকে আটক করতে পারলে মেজর জেনারেল জিয়ার অনেক গোপন তথ্য এবং জিয়া ও বিপ্লবের অনেক অবৈধ অর্থ ও অস্ত্রের সন্ধান পাওয়া যাবে।
এনামুল হক বাহার : কাউন্সিলর বিপ্লবের পরে বরিশালে ছাত্রদের উপর চড়াওয়ে আরো যে কাউন্সিলরদের নাম এসেছে তা হলো ২৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এনামুল হক বাহার। তিনি চলতেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম ও মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতের দাপটে। গত ৩ আগষ্ট বরিশাল সিটি করপোরেশনের সামনে থেকে ছাত্র ও আইনজীবীদের গায়ে হাত তুলেছিলেন এই নেতা।নগরের চৌমাথা এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের কুপিয়ে জখম করার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড এই বাহার।যদিও উচ্চআদালত থেকে বিএনপির অফিস পোড়ানো মামলায় এজাহার নামীয় আসামি থাকায় ৪ সপ্তাহের জামিনে আছেন বাহার।তবে তাকে আটক করে রিমান্ডে নিতে পারলে বরিশাল আওয়ামীলীগের অনেক সন্ত্রাসের গোপন তথ্য এবং অস্ত্রের সন্ধান পাওয়া যাবে।
জসিম উদ্দিন : ছিলেন বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি। সেখান থেকে বিতর্কিত নির্বাচনে হয়েছেন সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান।গত ১৯ জুলাই বরিশাল নগরীর চৌমাথা এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষের সময় দলবল সহকারে মোটরসাইকেল বহর নিয়ে এসে চৌমাথা পোলে দাড়িয়ে প্রকাশ্যে ১ / ২ রাউন্ড গুলি ছোড়ে এই ভাইস চেয়ারম্যান। একটি কালো রংয়ের শর্টগান থেকে এই গুলি ছোড়েন বলে প্রতক্ষদর্শীরা নিশ্চিত করেছেন। ঐ শর্টগানটি লাইসেন্সকৃত ছিল কিনা তা জানা যায় নি।তাকে আটক করে রিমান্ডে নিতে পারলে বরিশাল আওয়ামীলীগের বিশেষ করে খোকন সেরনিয়াবাত মেয়র হবার পরে অনেক নব্য সন্ত্রাসের গোপন তথ্য এবং তাদের কাছে সাপ্লাইকৃত অস্ত্রের সন্ধান পাওয়া যাবে।
সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত :সাবেক মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর বিশস্ত সিপাহশালার বিএম কলেজ এলাকার ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপর একাধিকবার হামলা চালিয়েছে। প্রকাশ্যে কুপিয়েছে বিএনপির কর্মীদের। সাদিক আবদুল্লাহর পাশে দাড়িয়ে দা হাতে তার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে পালিয়ে গেছেন সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত।
তাকে আটক করে রিমান্ডে নিতে পারলে বরিশাল আওয়ামীলীগের অনেক সন্ত্রাসের গোপন তথ্য এবং অস্ত্রের সন্ধান পাওয়া যাবে।এমনকি মিলতে পারে মোস্ট ওয়ান্টেড সাদিক আবদুল্লাহর সন্ধানও।
রাজিব হোসেন : ছিলেন ৬ মাসের কাউন্সিলর।নগরের একটি এলাকার তরুন এই জনপ্রতিনিধি তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের রুপ তুলে ধরে ১৯ জুলাই। তিনি নিজে বিএনপির সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার কে কুপিয়ে জখম করে। এছাড়াও সাদিক আবদুল্লাহর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অন্যতম মাস্টার মাইন্ড এই রাজিব। তাকে আটক করতে পারলে পাওয়া যাবে অনেক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের গোপন তথ্য।
রইস আহমেদ মান্না :বরিশাল শ্রমিক লীগের সাধারন সম্পাদক। নিজে চৌমাথা,নতুল্লাবাতে প্রকাশ্যে একাধিক ব্যক্তিকে কুপিয়ে জখম করেছেন।কথিত আছে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরে ৯ এমএম পিস্তল কোমরে নিয়ে আন্দোলন চলাকালে ঘুরতেন এই নেতা। সাদিকের চার খলিফার একজন এই মান্না। তাকে আটক করতে পারলে অনেক গোপন তথ্য পাওয়া যাবে।
আতিকুল্লাহ মুনিম: সাদিক আবদুল্লাহর চার খলিফার একজন মুনিম। ছাত্র আন্দোলনের সময় কুপিয়ে জখম করেছেন একাধিক ব্যক্তিকে।মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে দাবরিয়ে বেড়াতেন এই ছাত্রলীগ নেতা।
অসীম দেওয়ান: সদ্য পদচ্যুত মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের ডানহাত এবং চাঁদাবাজির ক্যাশিয়ার এই অসীম নতুল্লাবাত বাস টার্মিনালের শ্রমিকদের নামিয়ে দিয়েছিলেন ছাত্রদের আন্দোলন দমাতে। বরিশালের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান দের মেয়রের নামে ফোন করে ধমকানো ছিল অসীম দেওয়ানের প্রধান কাজ।
পিছিয়ে ছিলেন না নারী নেত্রীরাও: এবারের আন্দোলনে সাদিক আবদুল্লাহ ও তার দলবল ভুমিকা রাখলেও নারীদের অর্থাৎ মহিলা আওয়ামী লীগের নেতাদের মাঠে কম নামিয়েছিল। তবে খোকন ও জাহিদ ফারুক শামীম পন্থী নারীনেত্রীরা আন্দোলন জমাতে মেয়র পত্নী লুনা আবদুল্লাহর নেতৃত্বে একাধিক মিছিল সভা করেন। তাদের টার্গেট ছিল শোডাউন দিয়ে কমিটি বাগিয়ে নেয়া ও লুনা আবদুল্লাহকে বরিশাল আওয়ামী লীগে প্রতিষ্ঠিত করা।
এদের মধ্যে অন্যতম ছিল প্যানেল মেয়র কোহিনুর বেগম ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ইসরাত জাহান লাভলি। এরা বিভিন্ন জায়গায় ফোন করে ধমকানো হতে বিভিন্ন এলাকায় নারীদের সংঘটিত করে মিছিল সমাবেশ করাতো।
৫ আগষ্টের পরে কেটে গেছে অনেক টা সময়। কিন্তু এখনও বহাল তবিয়তেই আছেন আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।এদের ধরতে প্রশাসন কেন এত কার্পণ্য করছে তা বোধগম্য নয় কারো কাছে। তবে নতুন পুলিশ কমিশনার যোগদানের পর পাল্টাবে অনেক পরিস্থিতি এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।
Post Comment