Loading Now

বরিশাল ও ভোলার আরটি-পিসিআরের ২টি মেশিনই অচল

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

২০২৩ সাল থেকে করোনা রোগী শনাক্তের জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ এবং ভোলা সদর হাসপাতালে স্থাপিত আরটি-পিসিআর ল্যাবে থাকা মেশিন দুটি চালু করা হয়নি। দুই বছর ধরে মেশিন দুটি চালু না হওয়ায় এখন অচল হয়ে আছে। মেশিন দুটির অভাবে নতুন করে করোনার প্রাদুর্ভাবে সংকট দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা থাকলেও রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন পলিমারেজ চেঞ্জ রি-অ্যাকশন (আরটি-পিসিআর) পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারছে না হাসপাতাল দুটি। এ ছাড়া পরীক্ষার কিট, চিকিৎসক, টেকনিশিয়ান, স্যাম্পল সংগ্রহকারী কিছুই নেই পিসিআর ল্যাব দুটিতে। এসব সমস্যা সমাধান করে কবে নাগাদ ল্যাব দুটিতে করোনার পরীক্ষা শুরু করা যাবে, তাও নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না বরিশাল স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মকর্তারা।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, এখন পর্যন্ত বরিশালে একজন করোনার রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তিনি হোম আইসোলেশনে আছেন। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ এবং ভোলা সদর হাসপাতালের আরটি-পিসিআর ল্যাব দুটির কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে ল্যাবের মেশিন দুটি বন্ধ থাকায় বর্তমানে কী অবস্থায় আছে, তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। ঢাকা থেকে টেকনিশিয়ান পাঠানোসহ প্রয়োজনীয় জনবল পাঠানোর জন্য স্বাস্থ্য দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা এসে মেশিন দুটি বর্তমানে কী অবস্থা আছে বলতে পারবেন।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. শফিকুর রহমান বলেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসায় ২০২৩ সাল থেকে আরটি-পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই আরটি-পিসিআর মেশিন দুটি বন্ধ থাকায় এদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বলা মুশকিল। মেশিন দুটি ‘রিসেট’ দেওয়ার পর বোঝা যাবে এদের অবস্থা।

তিনি আরও বলেন, পরীক্ষার জন্য যে কিটের প্রয়োজন, তা নেই। সহায়তা করার টেকনিক্যাল লোকও নেই। যারা ছিলেন তাদের বিভিন্ন স্থানে বদলি করা হয়েছে। স্যাম্পল সংগ্রহ করার লোক নেই। ল্যাব চালু করতে হলে আগে এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে।

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ফায়জুল বাশার বলেন, আরটি-পিসিআর ল্যাবে যে কোম্পানি মেশিনটি সরবরাহ করেছিল সেখানে চিঠি দিয়েছি টেকনিক্যাল পারসন পাঠানোর জন্য। এ ছাড়া ঢাকা থেকে টেকনিশিয়ান পাঠানোসহ প্রয়োজনীয় জনবল দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে স্বাস্থ্য দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ভোলার জেলার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে স্থাপিত আরটি-পিসিআর ল্যাবটির দরজা বন্ধ রয়েছে প্রায় দুই বছর। ফলে ওই ল্যাবটির ভেতরের পরিবেশ নোংরা হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন ভোলা সদর হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর গত দুই বছরেও ল্যাবটি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হয়নি। ল্যাবের ভেতরে স্যাঁতসেঁতে হয়ে আছে। জাল বুনেছে মাকড়শা। বাসা বেঁধেছে ইঁদুর, তেলাপোকা। যন্ত্রটির ওপর ধুলাবালির আস্তরণ পড়ে ধরেছে মরীচিকা।

ভোলার সিভিল সার্জন ডা. মু. মুনিরুল ইসলাম বলেন, মেশিনটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আমরা সঠিক করে বলতে পারব না। এ জন্য টেকনিশিয়ান পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে। তবে ভোলায় বড় সমস্যা হচ্ছে, এখানে মাইক্রোবায়োলজির চিকিৎসক নেই। করোনার সময়ে ডা. মহসিন নামে একজনকে সংযুক্ত করা হয়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাকে বরিশালে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।

এ ছাড়া ল্যাব পরিচালনার জন্য অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান নেই। স্যাম্পল সংগ্রহ করা হতো স্বাস্থ্য দপ্তরের অন্য একটি প্রকল্পের জনবল দিয়ে। ওই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাদেরও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, এই সমস্যার সমাধান হলে করোনার নমুনা পরীক্ষা চালু করা সম্ভব হবে না। পরীক্ষাব্যবস্থা চালুর আগে এসব সমস্যা দূর করা জরুরি। বিষয়গুলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৮ এপ্রিল দক্ষিণাঞ্চলে সর্বপ্রথম আরটি-পিসিআর ল্যাব চালু করা হয় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে। ল্যাবটিতে দৈনিক ২০০ নমুনা পরীক্ষা করা হতো। ২০২১ সালের জুন মাসের শেষদিকে দ্বীপজেলা ভোলার ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে চালু করা হয় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য দ্বিতীয় পিসিআর ল্যাব। ওই সময় দুই জেলার ল্যাবে প্রতিদিন ৯০০ থেকে ১ হাজার মানুষের করোনার নমুনা পরীক্ষা হতো। এমনকি পার্শ্ববর্তী ঢাকা ও খুলনা বিভাগের কয়েকটি জেলা থেকেও করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য বরিশালের এই দুই ল্যাবে পাঠানো হতো।

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED