Loading Now

বরিশাল বন বিভাগের সাবেক ডিএফও’র বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ!

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

বরিশাল সামাজিক বন বিভাগে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ড. জাহিদুর রহমান মিয়া বরাদ্দ থাকা সত্তে ও কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেননি এমন অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগকে কেন্দ্র করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সরকারি দরপত্র প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অফিসের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ড. জাহিদুর রহমান মিয়া তিন মাস অতিরিক্ত ডিএফওর দায়িত্বে থাকলেও মোট ১০ দিনও বরিশাল অফিসে উপস্থিত ছিলেন না। জরুরি ফাইলে স্বাক্ষরের প্রয়োজন হলে কর্মকর্তাদের পটুয়াখালী অফিসে গিয়ে স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে বিভাগের স্বাভাবিক প্রশাসনিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও এই সময়কালে কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ না থাকায় বিভাগীয় পর্যায়ে প্রশ্ন উঠেছে ইচ্ছাকৃতভাবেই কি কার্যক্রম স্থবির রাখা হয়েছিল?

অনুসন্ধানে জানা যায়, আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগে কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদার গ্লোবাল ফাস্ট সার্ভিসেস লিমিটেড প্রথম দফায় ৬ জন কর্মী নিয়োগ দেয়। পরে অতিরিক্ত ২ জন মালী নিয়োগের জন্য ড. জাহিদুর রহমান মিয়া নিজেই ২৫ নভেম্বর প্রধান বন সংরক্ষকের স্মারক অনুসারে লিখিতভাবে কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব দাখিলের নির্দেশ দেন। নির্দেশ অনুযায়ী ঠিকাদার জামানত জমা দিয়ে ৮ ডিসেম্বর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে গেলে বরিশাল সামাজিক বন বিভাগ তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়।

ঠিকাদারের অভিযোগ, দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অফিসে অবস্থান করেও কোনো কর্মকর্তা নিয়োগপত্র গ্রহণ করেননি। এ সময় প্রধান সহকারী (হিসাব রক্ষক) আলহাজ্ব মো. লুৎফর রহমান একপর্যায়ে অফিস ত্যাগ করে চলে যান এবং ক্যাশিয়ার উ মু সিরাজুল ইসলাম স্পষ্টভাবে জানান- ‌‘ডিএফও স্যারের নির্দেশ ছাড়া কোনো চিঠি রিসিভ করা যাবে না।’

নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দরপত্র অনুযায়ী ২ জন মালী নিয়োগের জন্য প্রস্তাব আহবান করেছিলেন ডিএফও নিজেই। কিন্তু সেই প্রস্তাব জমা দিতে গেলে তিনি মৌখিকভাবে ‘রিসিভ বন্ধ’ করার নির্দেশ দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

গোপন সূত্রের দাবি- নিজের পছন্দের লোক নিয়োগ না হওয়ায় এই প্রশাসনিক কৌশল নেওয়া হয়। ফলে বৈধভাবে নির্বাচিত দুই কর্মী নিয়োগ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। প্রাপ্ত নথি অনুযায়ী, ২৬ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে ৩২ লাখ ৮৫ হাজার ২৭ টাকা মূল্যে ৬টি পদের বিপরীতে গ্লোবাল ফাস্ট সার্ভিসেস লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদিত হয়। পরে প্রধান বন সংরক্ষকের নির্দেশে আরও ২ জন মালী নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয় এবং ১ ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে ৩০ জুন ২০২৬ পর্যন্ত ৭ মাসের জন্য ভেরিয়েশন অর্ডার জারি করা হয়। সবকিছু বৈধ থাকা সত্তে¡ও হঠাৎ করে কাগজ গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করাকে সরকারি ক্রয় বিধিমালা (পিপিআর) অনুযায়ী গুরুতর প্রশাসনিক অনিয়ম হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, ড. জাহিদুর রহমান মিয়া বিগত আড়াই বছর ঝুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগসহ তিনটি বন বিভাগের দায়িত্বে থাকাকালে একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার করেন।

অভিযোগ রয়েছে- ভুয়া জোট পারমিটের মাধ্যমে রিজার্ভ বন থেকে কয়েক লক্ষ ঘনফুট সেগুন কাঠ পাচারে সহযোগিতা এবং প্রতি ঘনফুটে ১৪ টাকা হারে অবৈধ সুবিধা নেওয়ার বিষয়টি (বর্তমানে অনুসন্ধানাধীন)। স্থানীয় পর্যায়ে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে তিনি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী আওয়ামী লীগের বিতর্কিত ঘনিষ্ঠদের ছত্রছায়ায় প্রশাসনিক পদ ব্যবহার করে ঠিকাদারি ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রভাব খাটিয়ে আসছেন। সাম্প্রতিক ঘটনাটি সেই অভিযোগকে আরও জোরালো করেছে।

এ বিষয়ে সদ্য যোগদানকৃত বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জামিল খানের সঙ্গে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক মোহাম্মদ আলীর সাক্ষাৎ হলে তিনি বলেন, আমি নতুন এসেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেব।”

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ড. জাহিদুর রহমান মিয়া বলেন, আমি চিঠি গ্রহণ না করার বিষয়ে কিছু জানি না।”

অন্যদিকে ক্যাশিয়ার উ মু সিরাজুল ইসলাম বলেন, ডিএফও স্যারের নির্দেশ ছাড়া আমরা কিছু রিসিভ করতে পারি না।” দরপত্র আহবানের পর একই নথি গ্রহণে বাধা, অফিসে অনুপস্থিত থেকেও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ন্ত্রণ সব মিলিয়ে আউটসোর্সিং সেবা ক্রয়, আর্থিক লেনদেন ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। সচেতন মহল দ্রুত নিরপেক্ষ ও উচ্চপর্যায়ের তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

 

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED