বাজারে ঈদের প্রভাব, মাংসের দামে নৈরাজ্য!
নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
সপ্তাহ ব্যবধানে বরিশালের বাজারগুলোতে গ্রীষ্মকালীন সবজি ও মুরগির বাজার চড়া রয়েছে। সরবরাহ কম এবং মৌসুম শুরু হওয়ায় গ্রীষ্মকালীন সবজির চাহিদা বাড়ায় দাম কয়েক গুন বেশি।
একই সঙ্গে পবিত্র ঈদ-উল ফিতরকে কেন্দ্র করে মুরগি ও গরুর মাংসের দাম বেড়েছে। এজন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকে। তবে এসব বাজারে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে আলু ও পেঁয়াজ। শুক্রবার (২৮ মার্চ) বরিশালের বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজা এখন শেষের দিকে। কয়েকদিন পরেই ঈদ। ফলে বাজারে মাংসের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। আর চাহিদা বাড়লে দাম এমনিতেই একটু বেড়ে যায়।
সরবরাহ ঘাটতি নেই জানিয়ে একাধিক মুরগি ব্যবসায়ীরা বলেন, সব ধরনের মুরগির দামই বেড়ে গেছে। আগে যে দামে আমরা বিক্রি করতাম এখন সে দামে কিনতেই পারি না।
এদিকে ঈদকে কেন্দ্র করে মুরগির বাজারে অস্থিরতা চলছে। এসব বাজারে সোনালি কক মুরগি ৩৪০ টাকায় এবং সোনালি হাইব্রিড ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাল লেয়ার মুরগি ৩৩০০ টাকা, সাদা লেয়ার ৩২০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ২২০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৬৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
হঠাৎ করে মুরগির দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি কমেছে বলে জানিয়েছেন নতুন বাজারে মুরগি বিক্রেতারা। তারা বলেন , গত দুই সপ্তাহ ধরে মুরগির দাম চড়া রয়েছে। সকল ধরনের মুরগি কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে বলে তিনি জানান।
এদিকে বাজার রোডের একাধিক মুরগি ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আপনারা গোড়ায় গিয়ে দেখেন কি কারনে মুরগির দাম বাড়ছে। একটা বাচ্চা কিনতে হয় ৭০/৮০ টাকায় এরপর খামারে বড় করা। সব মিলিয়ে দাম বাড়তি। এতো টাকা দিয়ে কেন আমরা মুরগি কিনে বিক্রি করব। তারপর ও বাধ্য হয়ে মুরগির ব্যবসা করছি। গোড়া ঘর ঠিক করলে সিন্ডিকেট ভেঙে যাবে। বাজার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। পোটরোড বাজারে সকালে বাজার করতে যান আলম খান। দখিনের প্রতিবেদনকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এখনো ঈদ কয়েকদিন বাকি। সাধারণত ঈদের একদিন আগে বিক্রেতারা মাংসের দাম বাড়ান। এই হিসাব করে আজ বাজার করতে এসেছি। এসে দেখি মাংসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা।’
খামারিদের অভিযোগ, একটি মুরগির বাচ্চা বিক্রিতে সরকারের পক্ষ থেকে ৪৯-৫৭ টাকা দাম নির্ধারণ করা থাকলেও উৎপাদক কোম্পানির কাছ থেকে আমাদের সেটি কিনতে হচ্ছে ৭০-১০০ টাকায়। একইসঙ্গে গত ২ মাস ধরে ডিমের দাম কমিয়ে রাখার ফলে অনবরত লোকসানের মুখোমুখি হতে হচ্ছে পোল্ট্রি খামারিদের।
বরিশালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গ্রীষ্মকালীন সব ধরনের সবজি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। গ্রীষ্মকালীন সবজি কোনোটাই ৮০ টাকা দরের নিচে বিক্রি হচ্ছে না। এসব বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি বেগুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১২০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকায়, পটল ১২০ টাকা, ধুন্দুল ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, কচুর মুখী ১২০ টাকা, কচুর লতি ১২০ টাকা, সাজনা ১৮০ টাকা এবং কাঁচামরিচ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।এদিকে পাকা টমেটো কেজিতে ২০ টাকা, লেবুর হালি ৪০ থেকে ৬০ টাকা, গাজর ৪০ থেকে ৫০ টাকা এবং শসা ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মুদি দোকানের পণ্যের দাম আগের মতোই বাড়তি রয়েছে। তবে এখন ভোজ্যতেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। ক্রেতারা সহজেই ভোজ্যতেল কিনে স্বস্তি পাচ্ছেন। তবে চালের বাজার নেই স্বস্তি। বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে চাল। নতুন চাল বাজারে না ওঠা পর্যন্ত এভাবে চলতে থাকবে বলে জানান চাল ব্যবসায়ীরা।
অন্যদিকে চলতি সপ্তাহে মাছের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। এসব বাজারে ৫০০ গ্রামের ইলিশ ১২০০ টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ১৮০০ টাকা, এক কেজি ওজনের ২২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে এক কেজি শিং মাছ চাষের (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকায়, দেশি মাগুর মাছ ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা , মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, চাষের পাঙ্গাস ২০০ থেকে ২৩০ টাকায়, চিংড়ি প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ১২০০ টাকায়, বোয়াল মাছ প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়, বড় কাতল ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, পাবদা মাছ ৪৫০থেকে ৫৫০ টাকায়
Post Comment