বাজারে গিয়ে ক্রেতাদের উদ্বেগ কমছে না
নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
বরিশালের বাজারে পণ্যের দাম নিয়ে ক্রেতাদের উদ্বেগ বাড়ছে। সবজির দাম তুলনামূলক স্থিতিশীল থাকলেও চাল, তেল, মুরগী ও মাছের বাজারে দাম ঊর্ধ্বমুখী। এতে ডিম-সবজির স্বস্তি অনেকটাই ফিকে হয়ে যাচ্ছে সাধারণ ভোক্তাদের কাছে। নতুন আলুর দাম কমলেও পুরাতন আলুর দাম অপরিবর্তিত। এলাচ, জিরা ও গোলমরিচের মতো মসলার দাম বেড়ে ক্রেতাদের কষ্ট বাড়িয়েছে। এদিকে সরবরাহ বাড়ায় সপ্তাহ ব্যবধানে বাজারে কমতে শুরু করেছে ডিমের দাম। শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) বরিশালের বেশকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
বাজারে উঠতে শুরু করেছে শীতকালীন শাক-সবজি। দোকানগুলোতে শীতের সবজির পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। এতে বাজারে কমতে শুরু করেছে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা অস্থিরতা। সপ্তাহ ব্যবধানে হাতেগোনা কটি ছাড়া বেশিরভাগ সবজির দাম কমেছে ১০-৩০ টাকা পর্যন্ত। তবে টমেটোর মতো সবজির দাম এখনও চড়া। বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে উঠতে শুরু করেছে শীতের সবজি; সরবরাহও ভালো। সামনে কোনো সংকট না হলে দাম হাতের নাগালে চলে আসবে।
বাংলা বাজারের সবজি বিক্রেতা আরিফ বলেন, সরবরাহ বাড়ায় বাজারে কমতে শুরু করেছে শীতের সবজির দাম। ঘন কুয়াশ কিংবা ঘূর্ণিঝড়ের কোনো প্রভাব না পড়লে, সামনে দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই; বরং আরও কমবে।
বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ৬০-৮০ টাকা, করলা ৬০-৭০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, মুলা ৩০-৪০ টাকা, লতি ৮০ টাকা, কহি ৬০ টাকা, ধুন্দুল ৫০ টাকা ও পটোল ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি পেঁপে ২০-৩০ টাকা ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। ফুলকপি ৩০-৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ টাকা এবং লাউয়ের জন্য গুনতে হচ্ছে ৫০-৭০ টাকা। এদিকে, নিম্নমুখী শাকের বাজার দাম কমেছে কাঁচা মরিচেরও।
বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে সরবরাহ বেড়েছে কাঁচা মরিচের। এতে পাইকারি ও খুচরা উভয় পর্যায়েই কমেছে দাম।
এদিকে, বাজারে অভিযান চালানো, সভা-সেমিনার করা, আমদানি শুল্ক হ্রাস ও আমদানির অনুমতিসহ নানা নাটকীয়তার পর স্বস্তি ফিরেছে ডিমের বাজারে; বিক্রি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, উৎপাদক পর্যায় থেকে কম দামে ডিম কিনতে পারলে পাইকারি ও খুচরা বাজারেও নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করা সম্ভব হবে।
ডিম বিক্রেতা তারেক বলেন, পাইকারি পর্যায়ে কম থাকলে ও সরবরাহ বাড়লে, খুচরা বাজারেও ডিমের দাম কমবে। সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রির চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে প্রতিদিনই ডিমের দাম উঠা- নামা করছে। এক শ্রেনির ডিম ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ডিমের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। এতে বিপাকে পরতে হচ্ছে আমাদের মতো খুচরা ব্যবসায়ীদের।
ক্রেতারা বলছেন, ডিম ও সবজির দাম কমায় স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে বাজারে। মনিটরিং অব্যাহত রাখলে দাম আরও কমে আসবে।
এদিকে হঠাৎ করে মাছ ও মুরগি কপালে ফেলছে চিন্তার ভাঁজ। উভয় পণ্যের দামই বাজারে ঊর্ধ্বমুখী। ব্যবসায়ীদের মতে, বাজারে সরবরাহ কমায় বাড়ছে এগুলোর দাম। এসব বাজারে ব্রয়লার মুরগি ১৯০ টাকা, সোনালি কক ৩২০ টাকা, সোনালি হাইব্রিড ২৯০ টাকা, দেশি মুরগি ৫২০ টাকা, লেয়ার লাল মুরগি ৩০০ টাকা এবং সাদা লেয়ার ২৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চালের বাজারেও অস্থিরতা। মিনিকেট চাল ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে, সয়াবিন তেল সরকার নির্ধারিত ১৫৭ টাকার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। মসলার বাজারেও এলাচ, জিরা এবং লবঙ্গের দামে নতুন করে ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে মুরগির বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে বলে জানালেন বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী রফিক।তিনি বলেন, প্রতিদিনই খাদ্যের দাম বাড়ছে এ কারণে পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াচ্ছে আমাদেরও দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এখন বিয়ে আর পিকনিকের সিজন চলছে। তাই চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। বিয়ে আর পিকনিকের চাপ কমলে দামও হাতের নাগালে চলে আসবে। তবে বাজারে অপরিবর্তিত আছে গরু ও খাসির মাংসের দাম।
অন্যদিকে, বাজারগুলোতে চলতি সপ্তাহে মাছের দাম চড়া দেখা গেছে। সব ধরনের মাছের দাম কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে।
এদিকে সুশীল সমাজের একাধিক ব্যক্তির সাথে বাজারদরের বিষয় আলাপকালে তারা বলছেন, বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুব একটা স্বাভাবিক না। তার প্রভাব পরেছে নিত্যপণ্যের বাজারে। ৫ আগস্টের পর অন্তর্বর্তী সরকার বাজারদর কিছু টা নিয়ন্ত্রণে আনলেও সিন্ডিকেটের বেড়া জালে ঢাকা পরেছে বাজারদর। বাজারে পণ্যের দামের এ ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। স্থিতিশীল বাজার নিশ্চিত করতে প্রয়োজন কার্যকর পদক্ষেপ।
Post Comment