Loading Now

বিদ্যুৎ ঘাটতিতে বরিশালের জনজীবন অতিষ্ঠ!

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥

শরতে তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের ৬ ডিগ্রী ওপরে উঠে যাবার মধ্যেই বুধবার সকালের পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় বরিশালে প্রায় ৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে জনজীবন সিক্ত হলেও বঙ্গোপসাগরের সুস্পষ্ট লঘুচাপ অস্বস্তি বাড়াচ্ছে। লঘুচাপটি নিন্মচাপে পরিনত হবার সম্ভাবনার কথাও বলেছে আবহাওয়া বিভাগ। মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতের পরে মাঝারী বৃষ্টিপাতে জনজীবনে কিছুটা স্বস্তি এলেও বুধবার দিনভরই মেঘলা আকাশ জনমনে অস্বস্তিও বাড়িয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় বরিশাল সংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি বুধবার সকালে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিনত হলেও এটি নিন্মচাপের পরিনত হবারও আভাস দিয়েছে আবাহাওয়া বিভাগ। লঘুচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করায় বরিশাল সংলগ্ন দেশের উপকূলভাগ সহ পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকার ওপর দিয়ে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি সহ দমকা ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাবার আশংকার কথাও বলেছে আবহাওয়া বিভাগ। বরিশালের পায়রা বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত এবং সবগুলো নদীবন্দরকে ১নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরা নৌকা ও ট্রলারসমূহকে উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলেছে আবহাওয়া বিভাগ।

অপরদিকে গত সপ্তাহ খানেক ধরে দু:সহ তাপ প্রবাহের মধ্যেই চহিদার ২০-২৫ ভাগ বিদ্যুৎ ঘাটতিতে বরিশাল ও সন্নিহিত এলাকার জনজীবনে সীমাহীন দুর্ভোগ অব্যাহত রয়েছে। একাধিক উৎপাদন ইউনিট বন্ধ থাকার রেশ ধরেই গত সপ্তাহ খানেক ধরে বরিশাল অঞ্চলেও বিদ্যুৎ ঘাটতি জনজীবনে নতুন দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। পল্লী এলাকায় সন্ধ্যার আগেই লোডশেডিং-এর খড়গ নেমে এলেও বরিশাল মহানগরীতে রাত ১১টা থেকে ভোররাত পর্যন্ত একের পর এক এলাকা অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে। এমনকি যেসব লোকায় পুজামন্ডপ নেই, সেখানে লোডশেডিং এর মাত্রা আরো বেশী। ঘুটঘুটে অন্ধকারের সাথে দু:সহ গরমে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ অব্যাহত থাকলেও তা থেকে সহসা উত্তরনের কোন খবর দিতে পারেনি পিডিবি ও পিজিসিবি সহ বিতরণ কোম্পানী ওজোপাডিকোর দায়িত্বশীল মহল।

আবহাওয়া বিভাগের মতে, শরতের এ সময়ে বরিশালে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পারদ ৩১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে থাকার কথা। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুর ৩টায় বরিশাল মহানগরীতে তাপমাত্রার পারদ ৩৭ ডিগ্রী ছুঁয়ে যায়। স্বাভাবিকের সাড়ে ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস ওপরে তাপমাত্রার সাথে অব্যাহত বিদ্যুৎ ঘাটতি জনজীবনকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। মৌসুমী বায়ু বরিশাল সহ সন্নিহিত এলাকায় কম সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারী অবস্থায় থাকলেও গত ২৪ ঘন্টায় পরিস্থিতি বিপরীতমুখি হয়েছে। মৌসুমী বায়ু বরিশাল সহ মূল ভুখন্ডে উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।

আবহাওয়া বিভাগের হিসেবে, সেপ্টেম্বর মাসে বরিশালে সর্বোচ্চ স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকার কথা ৩১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সেখানে গত কয়েকদিন ধরে তা ৩৬ ডিগ্রীতে উঠে যাবার পরে মঙ্গলবার দুপুরে সাম্প্রতিক সব রেকর্ড ভঙ্গ করে ৩৭ ডিগ্রীতে উঠে যায়। এমনকি সকালে সর্বনিন্ম স্বাভাবিক তাপমাত্রা ২৫.৩ ডিগ্রীর স্থলে প্রায় ২৮ ডিগ্রীতে উঠে যাচ্ছে।
এ অবস্থাতেই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উত্তর বঙ্গোপসাগরে নতুন করে একটি লঘুচাপ সৃষ্টির পরে বুধবার সকালে তা সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিনত হয়েছে। এটি নিন্মচাপে পরিনত হবার আশংকার কথাও বলেছে আবহাওয়া বিভাগ।

এদিকে শরতের দু:সহ গরমের সাথে বিদ্যুৎ ঘাটতি বরিশাল ও সন্নিহিত এলাকার সুস্থ সামাজিক অবস্থাকে চরমভাবে বিপন্ন করে তুলেছে। প্রখর রোদের সাথে অস্বাভাবিক গরমে কৃষক সহ কৃষি শ্রমিকরা মাঠে পর্যন্ত নামতে পারছে না। অথচ এ অঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন রোপন শেষে পূর্ণ পরিচর্যার সময় চললেও এতদিন নজিরবিহীন তাপ প্রবাহে কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা মাঠেই নামতে পারেননি। প্রখর রোদের সাথে অস্বাভাবিক তাপ প্রবাহে জেলেরা নদ-নদীতে নৌকা ভাসাতেও চরম বিপত্তিতে পড়ছেন।

গতবছর নভেম্বর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বরিশালে বৃষ্টিপাতের ব্যাপক ঘাটতির পরে মে ও জুনমাসে স্বাভাবিকের বেশী বৃষ্টি হয়েছে। এমনকি গত জুনমাসে স্বাভাবিক ৪৬৫ মিলিমিটারের স্থলে ১২.৩% বেশী, ৫২৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল বরিশালে। অথচ এ সময়ে সারাদেশে সামগ্রিক বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল স্বাভাবিকের ১৯.৩% কম। এমনকি জুলাই মাসে বরিশালে স্বাভাবিকের প্রায় ৭০% বেশী বৃষ্টি হয়েছে। আবার ভাদ্রের আগষ্টে বরিশালে বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল সাড়ে ১২% কম। আবাহাওয়া দপ্তর সেপ্টেম্বরে বরিশালে স্বাভাবিক ৩২৮ মিলিমিটারের স্থলে ৩৫০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়ে রাখলেও মাসের প্রথম ২৯ দিনে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ১৫৮ মিলিমিটার। এরসাথে মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আরো প্রায় ৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও ঘাটতির পরিমান স্বাভাবিকের প্রায় ৪৮ শতাংশ।

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED