Loading Now

বৈরি আবহাওয়া: জমতে শুরু করেছে কুরবানীর হাট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥

সাধারন মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস সহ অতি সাম্প্রতিক বৈরি আবহাওয়ায় বরিশাল অঞ্চলে এবার একটু বিলম্বেই কুরবানির পশুরহাট জমে উঠছে। ক্রেতা-বিক্রেতার খোঁজে ইজারাদাররা দিন-রাত মাইক নিয়ে শহরে-বন্দরে প্রচারনা চালালেও এতদিন কারোর তেমন পদচারনা ছিলনা। তবে গত শনিবার স্থায়ী হাটগুলোতে সীমিত কিছু পশু ও ক্রেতার আনাগোনা লক্ষ্য করা গেলেও বেচাকেনা ছিল খুবই কম। সবাই আশা করছেন আজ মঙ্গলবার থেকে কুরবানির পশুরহাট জমে উঠবে। প্রণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসেবে এবার বরিশালে চাহিদার তুলনায় ৬০ হাজারেরও বেশী কুরবানির পশু রয়েছে ।

স্থানীয় গবাদী পশুর মাধ্যমে চাহিদা মিটলেও কুরবানির সংখ্যা আগের বছরের চেয়ে কমছে বলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে। ফলে এবার প্রায় ৩ লাখ ৯৫ হাজার কুরবানির পরে ৬০ হাজারেরও বেশী পশু উদ্বৃত্ত থাকছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে গত বছর বরিশাল অঞ্চলে ‘নিরাপদ গবাদিপশুর মাংস উৎপাদনে কুরবানিযোগ্য গবাদিপশুর প্রাপ্যতা’ ছিল ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৪৫৪টি। সম্ভাব্য কুরবানির সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ২৮ হাজার। সেখানে চলতি বছর কুরবানির পশুর সংখ্যা মাত্র সাড়ে ৫ হাজারের মত বৃদ্ধি পেয়ে ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৫৩’তে উন্নীত হয়েছে।

স্থানীয়ভাবে পশুর মাধ্যমে চাহিদা মিটিয়ে বিপুল সংখ্যক গরু, ছাগল, খাশি, ভেড়া ও মহিষ উদ্বৃত্ত থাকলেও গবাদি পশুর দাম নিয়ে উদ্বেগ আছে ক্রেতাদের মাঝে। যদিও সোমবার পর্যন্ত পশুর হাটগুলো ভালভাবে জমে না ওঠায় দাম নিয়ে বাস্তব কিছু বোঝা যাচ্ছিল না। গেলো বছর পশুর দাম অন্তত ১৫-২০ ভাগ বৃদ্ধি পেলেও এবার পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন বাজার পর্যবেক্ষকরা।
২০২০ সালে বরিশালে ৪ লাখ ৯৫ হাজার পশু কুরবানি হলেও ২০২১ সালে তা ৪ লাখ ৬১ হাজারে হ্রাস পায়। তবে ২০২২ সালে পশু কুরবানির সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ৯৯ হাজারে উন্নীত হয়। ২০২৩ সালে সম্ভাব্য পশু কুরবানির সংখ্যা প্রায় ১ লাখ হ্রাস পেয়ে ৪ লাখ ২৪৭-এ নেমে আসে বলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসেবে বলা হয়েছে। সে হিসেবে ২০২৩ সালে প্রায় ৫০ হাজার পশু উদ্বৃত্তের পরে গত বছর কুরবানির পশুর সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৪৫৪ টি।

তবে আসন্ন ঈদ উল আজহায় বরিশালে গত বছরের চেয়ে প্রায় ৩৫ হাজার কম পশু কুরবানির সম্ভাব্য প্রাক্কলন করে মোট চাহিদা নিরুপন করা হয়েছে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৫২২টি। যা ২০২১ সালের পরে সর্বনি¤œ। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এ পরিসংখ্যান অনুযায়ী এবার গত বছরের তুলনায় বরিশালে কুরবানির পশুর সংখ্যা সাড়ে ৬ হাজারের মত বাড়লেও বিগত বছরগুলোর তুলনায় হ্রাস পেতে পারে। তবে পশুর দাম আগের বছরগুলোর তুলনায় কমার কথা বলতে পারছেন না বাজার পর্যবেক্ষকরা।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানের বাইরেও বরিশাল অঞ্চলে গৃহস্থ পর্যায়ে আরো লক্ষাধিক গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া প্রস্তুত রয়েছে।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী বরিশাল অঞ্চলে খামার পর্যায়ে ৩ লাখ ১৬ হাজারেরও বেশী গাভী, ষাড় ও বলদ সহ ২৬ লাখ ২০ হাজার গবাদি পশু এবং ২ লাখ ৮৬ হাজার মহিষ ও প্রায় ১১ লাখ ছাগল ছাড়াও ৭৭ হাজারের মত ভেড়া রয়েছে খামার ও গৃহস্থ পর্যায়ে।

গো-খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি সহ পরিবহন ব্যায় এবং শ্রমিকদের লাগামহীন মজুরী বৃদ্ধির বিরুপ প্রভাব পড়ছে পশুর দামের ক্ষেত্রেও। বরিশালের চরাঞ্চল সহ মূল ভূ-খন্ড থেকে বছরজুড়েই বিপুল সংখ্যক বকনা বাছুর কুষ্টিয়া, মেহরপুর সহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাসমূহে মোটাতাজাকরণের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। বছর ঘুরে সেসব গরুর একটি অংশই আবার এ অঞ্চলের কুরবানির পশুর হাটে ফিরে আসছে বিক্রীর জন্য।

এবারো বরিশাল অঞ্চলে প্রায় ৩শ পাশুর হাট বসছে। ৩ জুন থেকে ৬ জুন রাত পর্যন্ত এ অঞ্চলের প্রায় ৩শ পশুর হাটেই পশু বিক্রী জমজমাট থাকবে। এর বাইরে বরিশালে বেশ কিছু আধা নিবিড় ও আধুনিক খামারি খামার থেকেই পশু বিক্রীর লক্ষ্যে প্রচারনা শুরু করেছেন আরো আগেই। বরিশালের চরমোনাই, কসবা, বোয়ালিয়া বাজার, সুগন্ধিয়ার বাজার, গুয়াচিত্রার বাজার এবং মহানগরীর কাউনিয়া, রুপাতলি সহ বেশ কয়েকটি স্থানে অস্থায়ী পশুর হাট বসছে।

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED