Loading Now

ব্যভিচার গর্হিত অপরাধ

অনলাইন ডেক্স ।।

ইসলামে ব্যভিচার গর্হিত অপরাধ বলে বিবেচিত। এ ধরনের অপকর্মের অপরাধীরা যেমন আখিরাতের জীবনে কঠিন সাজার সম্মুখীন হবে, তেমন দুনিয়ার জীবনেও তাদের কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

সাহাবা আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ইমান হচ্ছে একটি সুন্দর পোশাক। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন তাকে তা পরিয়ে দেন।
কিন্তু যখন কেউ ব্যভিচার করে, আল্লাহ তখন তার শরীর থেকে ইমানের পোশাক খুলে নেন। রায়হাকি, আবু দাউদ, তিরমিজি ও হাকেম।
রসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘হে মুসলিম সম্প্রদায়! তোমরা ব্যভিচার থেকে পরহেজ কর। কেননা এর ছয়টি খারাপ পরিণতি রয়েছে।

যার তিনটি ইহলোকে ও তিনটি পরলোকে সংঘটিত হবে। ইহলোকের তিনটি হচ্ছে তার চেহারার সৌন্দর্য লোপ পায়, তার আয়ু হ্রাস পায় এবং চিরকাল সে দরিদ্রতার ভিতর থাকবে। পারলৌকিক তিনটি হচ্ছে-সে আল্লাহর অসন্তুষ্টি, কঠিন হিসাব ও জাহান্নামের শাস্তির সম্মুখীন হবে। ’ -ইবনে জাওজি।

রসুল (সা.) বলেন, ‘ইবলিশ শয়তান তার শিষ্যবাহিনীকে পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়ার সময় বলে দেয়, তোমাদের মধ্যে যে কোনো মুসলমানকে পথভ্রষ্ট করতে পারবে, তার মাথায় আমি নিজ হাতে মুকুট পরিয়ে দেব এবং সে আমার কাছে সর্বোচ্চ মর্যাদাবান বিবেচিত হবে। দিনের শেষ ভাগে সবাই ফিরে এসে ইবলিশের কাছে তাদের সারা দিনের কৃতকর্মের হিসাব দিতে থাকে। কেউ বলে আমি অমুকের পেছনে লেগে থেকে প্ররোচনার মাধ্যমে তার স্ত্রীকে তালাক দিতে বাধ্য করেছি। ইবলিশ বলে, তোমার এ কাজ তো তেমন কিছুই নয়, সে আর এক রমণীকে বিয়ে করে নেবে। এরপর আর একজন বলে, আমি সারা দিন অমুকের পেছনে লেগে থেকে নানা প্ররোচনার মাধ্যমে তার ভাইয়ের সঙ্গে বিরোধ বাধিয়ে দিয়ে এসেছি। ইবলিশ বলে, তোমার এ কাজ তো তেমন কিছুই নয়, অচিরেই তারা নিজেদের মধ্যে মীমাংসা করে নেবে। এরপর আর একজন বলে, আমি সারা দিন প্ররোচনার মাধ্যমে অমুককে ব্যভিচারে লিপ্ত করিয়েছি। ইবলিশ এবার খুশি হয়ে বলে, হ্যাঁ, তুমি একটা কাজের কাজ করেছ। এরপর ইবলিশ তার মাথায় মুকুট পরিয়ে দেয়। ’

আর এক হাদিসে রসুল (সা.) বলেন, ‘যে লোক মদপানে অভ্যস্ত অবস্থায় মারা যায়, আল্লাহ তাকে গাওতাত নামক নহরের পানি পান করাবেন। গাওতাত হচ্ছে, জাহান্নামে ব্যভিচারিণীদের যোনিপথ থেকে নির্গত দূষিত রক্ত ও পুঁজের প্রবহমান ঝরনাধারা। ’ আহমদ, আবু ইয়ালা, ইবনে হিব্বান, হাকেম। অন্যত্র রসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে শিরক করার পর অবৈধ নারীর গুপ্তাঙ্গে বীর্যপাতের চেয়ে জঘন্য কবিরা গুনাহ আর নেই। ’ আহমদ, তাবারানি।

ব্যভিচার থেকে বাঁচতে দৃষ্টি ও লজ্জাস্থানের হেফাজতের বিকল্প নেই। মহান আল্লাহ বলেন, ‘মোমিনদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে ও তাদের যৌনাঙ্গের সুরক্ষা করে। এবং মোমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে ও তাদের যৌনাঙ্গের সুরক্ষা করে। ’ সুরা নুর, আয়াত ৩০-৩১। ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যভিচারী যদি বিবাহিত হয়, তাহলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া এবং যদি অবিবাহিত হয়, তাহলে তাকে এক শবার বেত্রাঘাত করাই হলো একমাত্র শাস্তি। নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে একই বিধান প্রযোজ্য।

হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণিত হাদিসে তিনি বলেন, ‘আমি আল্লাহর নবীকে এ কথা বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন মানবজাতিকে খালি পায়ে, উলঙ্গ ও খতনাবিহীন অবস্থায় একত্র করা হবে। আমি আরজ করলাম, ইয়া রসুলুল্লাহ! এ অবস্থায় তো নারী-পুরুষ পরস্পরের দিকে তাকাবে। তিনি বললেন, হে আয়েশা! সেদিনকার অবস্থা এত ভয়াবহ হবে যে পরস্পরের দিকে তাকানোর কোনো কল্পনাই করবে না। ’ বুখারি, মুসলিম। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণিত হাদিসে তিনি বলেন, ‘একদা রসুলুল্লাহ (সা.) এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন- ‘যেদিন জমিন তার যাবতীয় খবর বলে দেবে। ’ এরপর হুজুর (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা বলতে পার জমিনের সংবাদগুলো কী কী? সাহাবিরা আরজ করলেন আল্লাহ ও তাঁর রসুলই কেবল জানেন। আমরা জানি না। হুজুর (সা.) বললেন, জমিনের সংবাদ হলো জমিনের ওপর নারী-পুরুষ যা কিছু ভালোমন্দ কাজ করেছে, কিয়ামতের দিন জমিন তার সাক্ষ্য দেবে। জমিন বলবে, আমার বুকের পর অমুক অমুক দিনে অমুক লোক এ কাজ করেছে। হুজুর (সা.) বললেন, এ-ই হলো জমিনের সংবাদ দান। ’ আহমাদ, তিরমিজি। অর্থাৎ দুনিয়ায় যারা ব্যভিচারসহ অপকর্মে লিপ্ত হবে, আখিরাতে তা কোনোভাবে গোপন রাখা সম্ভব হবে না। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবর ও হাশরের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার তৌফিক দান করুন।

তথ্য সূত্র : বাংলা নিউজ,,,,

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED