Loading Now

ভাইয়ের কারনে কপাল পুড়তে পারে সরোয়ারের

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মজিবুর রহমান সরোয়ার ছিলেন বরিশাল সদর আসন থেকে একাধিক বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য। সাবেক এই সিটি মেয়র দীর্ঘ প্রায় ২০ বছরেরও অধিক সময় নেতৃত্ব দিয়েছেন বরিশাল জেলা ও মহানগর বিএনপির। তবে ২০২১ সালে মহানগরে ফারুক – জাহিদ ও জেলায় নান্টু- মেবুলের কমিটির মধ্য দিয়ে স্থানীয় রাজনীতি থেকে সরিয়ে নেয়া হয় সরোয়ারকে। পরবর্তীতে আবারো কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে সরোয়ার পুরোটাই মাইনাস মিশনে যান স্থানীয় রাজনীতি থেকে।আস্তে আস্তে কমতে থাকে সরোয়ারের স্থানীয় অনুসারীর সংখ্যা।বর্তমানে পদবিহীন কিছু নেতা ও কর্মী ছাড়া সরেয়ারের পাশে নেই স্থানীয় বিএনপির কেউ।এমনকি জেলা ও মহানগরে কোন দলীয় কর্মসূচি থাকলে তাকে দাওয়াত ও দেয়া হয় না।দলীয় গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি নিজ অনুসারীদের নিয়ে একা পালন করেন তিনি। এভাবেই চলছে সরোয়ারের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। কিন্তু ৫ আগস্ট পরিবর্তন ঘটে দেশের সার্বিক পেক্ষাপট। দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর স্বৈরাচারীর তকমা নিয়ে বসে থাকা শেখ হাসিনা ছাত্র জনতার বিরল গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করে পালিয়ে যায় ভারতে।

এতে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরাও পালিয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে দীর্ঘদিনের আওয়ামী দখলকৃত বাস টার্মিনাল- লঞ্চ ঘাট সহ বিভিন্ন অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়ে। বরিশালের রাজনীতিতে নীরব ভূমিকায় থাকা সারোয়ার আর নতুন করে বরিশালে কোন প্রভাব বিস্তার না করলেও তার আপন সহোদর মোশাররফ হোসেন ৫ আগস্টের পরে নগরের নতুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। তার এ ভাইয়ের বিএনপির কোন পদ পদবী না থাকলেও বিএনপির নাম ভাঙিয়ে তিনি দখলে নিয়েছেন বৃহৎ এই প্রতিষ্ঠান।এক্ষেত্রে সরোয়ারের ভাই এই পরিচয়টি মুখ্য হয়ে দাড়িয়েছে সাধারনের নিকট।যদিও সরোয়ার সমর্থকদের দাবী,ভাই কিংবা কোন আত্মীয়ের দায়ভার বহন করবেন না সরোয়ার। আর তার ভাইয়েরা তার নিয়ন্ত্রিত নন।
বরিশাল বিএনপি সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্র জানায়, ৫ আগস্টের পর বরিশালের সাবেক সাংসদ সরোয়ারের ভাই মোশারফ হোসেন নগরীর নতুল্লাবাতে কোন ঘোষণা ছাড়াই মলিক সমিতির কোন পদে না থাকলেও তিনিই এখন নিয়ন্ত্রনকর্তা। জনশ্রুতি রয়েছে মোশারফ হোসেনের কোন বাস ছিল না। নতুন করে একটি বাসের মালিকানা দেখিয়ে আবারো মালিক সমিতি নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন তিনি। বর্তমান সময়ে নতুল্লাবাত বাসস্ট্যান্ড মোশারফের কথাই যেন আইন এমন অবস্থায় পরিণত হয়েছে।পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ ও শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীদের পূর্ণবাসনও করছেন তিনি এমন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ঐ সুত্রের দাবী ২০ থেকে ৩০ জনের মাধ্যমে পুরো বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকা চাঁদা আদায় করছেন তিনি।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বাস মালিক জানান, প্রতিবার একটি বাসের ছেড়ে যাওয়া, কাউন্টার চার্জ, নতুন পরিবহনের অনুমতি, দূরপাল্লার পরিবহনের চাঁদা এবং পার্কিং খাতসহ নানান খাতে প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকা আয় আসে নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে। উত্তোলনকৃত চাঁদার বৃহৎ একটি অংশ পান শীর্ষ নেতারা। অভিযোগ আছে কখনো কখনো পুরোটাই নিয়ে নেন তিনি। যে কারণে বাসস্ট্যান্ডগুলো যার নিয়ন্ত্রণে থাকে তিনি পেয়ে যান আলাদীনের চেরাগ। তাই এর নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন দলের শীর্ষ নেতারা।

 

অপর এক সূত্র জানিয়েছে, আ.লীগ সরকার পতনের পর বিএনপির মজিবর রহমান সরোয়ারের ভাই মোশারফের নেতৃত্বে কাউনিয়া এলাকার রিপন,মোস্তফা যিনি পুর্বে আওয়ামী লীগের মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত অনুসারী ছিলেন, বৈদ্যপাড়া এলাকার শামিমসহ ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি গ্রুপ বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে চাঁদা তুলছে।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিক বলেছেন, বাসস্ট্যান্ড ও বাজারগুলোতে চাঁদা দিতেই হবে। শুধু সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চাঁদা উত্তোলনের মানুষগুলোর পরিবর্তন হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে চাঁদার পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যায়।

এ বিষয়ে আলাপকালে মোশাররফ হোসেন   বলেন, নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ঠিকই তবে তিনি কোনো চাঁদাবাজি করছেন না।

পুলিশ ও সেনাবাহিনী মাঠে রয়েছে তাই কার সাহস চাঁদাবাজি করবে? তিনি বলেন, গত ৪/৫ বছর আগে তার গাড়ি বিক্রি করে দিয়েছিলেন। গত ১৩ আগস্ট নতুন করে সদস্য হবার জন্য বাস ক্রয় করেছেন এবং সদস্য পদ অর্জন করেছেন। এজন্য তিনি মালিক সমিতিকে ১ লাখ টাকা ডোনেশনও দিয়েছেন।কারা চাঁদাবাজি করছে সেটা প্রশাসন তদন্ত করুক।

অন্যদিকে বিএনপি এখন নির্বাচনমুখী।বরিশাল সদর আসন থেকে সংসদ সদস্য প্রার্থী হতে জোড় লবিং চালাচ্ছেন সরোয়ার। কিন্তু দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের গুডলিষ্টে না থাকা এই সরেয়ারের কান্নার কারন হতে পারে তার ভাই মোশাররফ এমনটাই দাবি করেছেন দলটির কেন্দ্রীয় একাধিক সুত্র। কারন মোশাররফের দলীয় কোন পদ নেই। কিন্তু সরোয়ারের ভাই হিসেবে সর্বমহলে পরিচিত। তাই তার নতুল্লাবাত বাস টার্মিনাল সংক্রান্ত বিষয়টি লন্ডনে তারেক রহমানের টেবিলেও পৌঁছে গেছে। সেক্ষেত্রে ভাইয়ের অপকর্মে কপাল পুড়তে পারে সরেয়ারের এমনটাই দাবি ঐ সুত্রের।
এছারাও সম্প্রতি বিএনপি জামাতপন্থী একটি শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিক যেটি তারেক রহমান ও ম্যাডাম জিয়া নিজে পড়েন সেই পত্রিকার পাতায় শিরোনাম হয়েছে মোশাররফ হোসেনের বাস টার্মিনাল কেলেংকারী।এতে বেজায় ক্ষুদ্ধ হন সরোয়ার। ভাইয়ের সাথে ক্ষোভ প্রকাশ করেনও তিনি বলে জানায় সরেয়ারের বাসভবনের একটি সুত্র। পরে চাঁপে পরে ঐ পত্রিকার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে মোশারফ হোসেন।কিন্তু এতেও পার পাবেন কি সরোয়ার এমনটাই প্রশ্ন সর্বমহলে।

এ বিষয়ে জানতে সাবেক সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান সরোয়ারের মুঠোফোন ০১৭১৩৩০….নাম্বারে কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য দেয়া গেল না।

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED