ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা, দুশ্চিন্তায় ভোক্তা
অনলাইন ডেক্স ।।
ভোজ্যতেলের দাম আবারও বাড়ানোর তোড়জোড় চলছে। বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয়ের অজুহাতে দেশের বাজারে আরেক দফা দাম বাড়াতে চান ব্যবসায়ীরা। আগামীকাল রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এবিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের মূল্য হ্রাস-বৃদ্ধি থাকলেও বাংলাদেশে তার প্রভাব সব সময় উল্টোভাবে পড়ে। এতে করে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমছে না, বরং দিন দিন বাড়ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১ হাজার ২০০ ডলার ছুঁয়েছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে ১৮-২০ শতাংশের মতো তেলের দাম বেড়েছে। দাম বৃদ্ধির প্রবণতা রয়েছে পাম অয়েলেরও। যে কারণে এই দাম সমন্বয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বিপণনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন এ দফায় সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম লিটারে ১০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে ১ হাজার ২০০ ডলার কাছাকাছি। সুতরাং দাম সমন্বয় করা প্রয়োজন।
কয়েকজন ভোক্তার সঙ্গে কথা বললে তারা বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তারা বলছেন, বর্তমানে ভোক্তারা যে দামে ভোজ্যতেল কিনছেন, সেটিই বিশ্ববাজারের তুলনায় অনেক বেশি বলে অভিযোগ রয়েছে। সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে যখন দাম কিছুটা কমে তখন দেশীয় বাজারে তার প্রভাব পড়ে না। বরং ব্যবসায়ীরা নানা যুক্তিতে বারবার দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের কষ্ট বাড়াচ্ছেন।
বক্তারা বলছেন, বাজারে নিত্যপণ্যের প্রায় সবকিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী। এর মধ্যে ভোজ্যতেলের দাম বাড়লে এটি হবে ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’র মতো অবস্থা।
ঢাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বোতলজাত সয়াবিন তেল বর্তমানে ১৮৯ টাকা এবং পাম তেল ১৬৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রস্তাবিত ১০ টাকা বাড়ানো হলে সেটি দাঁড়াবে প্রায় ২০০ টাকায়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দাম সমন্বয়ের নামে ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের অসহায় পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছেন। একদিকে টিসিবি সীমিত পরিসরে ভর্তুকি মূল্যে তেল বিক্রি করছে, অন্যদিকে খোলা বাজারে একের পর এক দাম বাড়ানো হচ্ছে।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন সাধারণত এ ধরনের পর্যালোচনাগুলো করে থাকে। পর্যালোচনা শেষে ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। এই মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর যে প্রস্তাব দিয়েছেন সেটা আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় অনেক বেশি। এটা আমরা পর্যালোচনা করছি, তারপর তাদের সঙ্গে সভা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এর আগে গত ১২ আগস্ট পাম তেলের দাম ১৯ টাকা কমিয়ে লিটারপ্রতি ১৫০ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। তবে সয়াবিন তেলের দাম তখন অপরিবর্তিত থেকে ১৮৯ টাকা ছিল। এরও আগে এপ্রিল মাসে সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয় ১৮৯ টাকা ও পাম তেল ১৬৯ টাকা।
এদিকে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে সয়াবিন, সানফ্লাওয়ার, পাম ও ভুট্টার তেল আমদানিতে এক শতাংশ উৎসে কর বসিয়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, এ ব্যবস্থাও ভোজ্যতেলের বাজারে প্রভাব ফেলছে।
ভোক্ততে নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি এএইচএম শফিকুজ্জামান বলেন, ‘আসলে যেকোনো পণ্যের মূল্য নির্ধারণের নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া আছে। ব্যবসায়ীরা ভোজ্যতেলের দাম বাড়ালে তারা সেই প্রক্রিয়ায় আসতে হবে। আমাদের প্রতিনিধিরাও থাকবেন। তবে কথা হলো বিশ্ববাজারের মূল্যের সঙ্গে তাদের আমদানি খরচসহ আনুষাঙ্গিক বিষয়াদি যুক্ত করলে তাদেরও পোষাতে হবে। তাদের না পোষালে তারা এলসি বন্ধ করে দেবে। সংকট সৃষ্টি হবে। তবে দাম বাড়লে ভোক্তাদের ওপর তো একটা বিরূপ প্রভাব পড়বেই।’
বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশির ভাগ পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এর মধ্যে ভোজ্যতেলের দাম বাড়লে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ সৃষ্টি হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে মানুষের অনেক প্রত্যাশা। বাজার দর নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে রাজনৈতিকভাবেও প্রভাব পড়বে। সরকারের ওপর অনাস্থা তৈরি হতে পারে।’
তথ্যসূত্র : ঢাকা মেইল,,,
Post Comment