Loading Now

মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে শীতেও সবজির বাজার চড়া, স্বস্তি নেই মাছে- মাংসে

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

দীর্ঘ দিন ধরে কাঁচাবাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এতদিন ব্যবসায়ীরা বৃষ্টি-বন্যাসহ নানা অজুহাত দেখিয়ে সব ধরনের সবজি বাড়তি দামে বিক্রি করেছেন। বর্তমানে শীতকালীন সবজিতে ভরপুর বরিশালের কাঁচাবাজারগুলো। তবুও আগের চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে প্রায় সব ধরনের সবজি। শীত মানেই সস্তা দামের আশ্বাস, কিন্তু বাস্তবতা- পুরোপুরি উল্টো। ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, শালগম, মুলাসহ অধিকাংশ সবজির দাম ৬০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। একইসঙ্গে কমেনি আলু ও পেঁয়াজের দাম। তবে গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি হচ্ছে মাছ ও মুরগি। শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) বরিশালের বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

আয় না বাড়লেও জীবনযাত্রার ব্যয় প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বাজার কিংবা, মহল্লা, দামের তারতম্য নিয়েও বেজায় অখুশি ক্রেতারা। দামের উত্তাপে ভোক্তার জন্য বরিশালের বাজারের সকালটা শুরু হচ্ছে একরাশ হতাশা নিয়ে। কয়েক সপ্তাহ ধরে বাজারে শীতের নতুন সবজি উঠলেও দাম পড়তির লক্ষণ নেই। ক্রেতারা কিনছেন কম, মুখে হতাশার ছাপ। তাদের অভিযোগ, শীতকালীন সবজির দাম অনেক চড়া। দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই বাজারে। সবজি কিনেই বাজারের সব টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সবজির দাম কমছে না। শুধু তাই নয়, বৃষ্টির কারণে ফসলের ক্ষতি হওয়ায় এ বছর সবজি বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শীতকালীন সবজি শিম মানভেদে কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, টমেটো ৮০/১২০ টাকা, দেশি গাজর ৭০ টাকা ও ইন্ডিয়ান ১৪০ টাকা, মুলা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ফুলকপি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বাঁধাকপি বড় সাইজের ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও লাউ ৬০ থেকে ৮০ টাকা পিস দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি ঝিঙা ৭০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, বরবটি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, বেগুন ১০০ থেকে ৮০ টাকা, কচুর লতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা ও ধুন্দল ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে কাঁচামরিচ প্রকারভেদে ১০০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পেঁপে ২০ থেকে ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০/৫০ টাকা, দেশি শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

এসব বাজারে লেবুর হালি ১০ থেকে ৩০ টাকা, ধনেপাতা ১০০/৮০ টাকা কেজি, কাঁচা কলা হালি ৪০ টাকা ও চাল কুমড়া ৫০ টাকা পিস দরে বিক্রি হচ্ছে।

সবজি ব্যবসায়ী আল আমিন বলেন, পাইকারি পর্যায়ে সবজির দর বেড়েছে। এ কারণে খুচরায় দাম বাড়তি। তবে একাধিক আড়তদার বলেন, এখন উৎপাদন এলাকায় সবজির দাম বেশি। নতুন সবজির ভালো দাম পাচ্ছে কৃষক। এ জন্য বরিশালে দাম বাড়ছে। তার ভাষ্য, গত মাসে বৃষ্টির কারণে ক্ষেতে পানি জমে কিছু গাছ মরে গেছে। কৃষক তা পুষিয়ে নিচ্ছে।

বাজারগুলোতে লাল শাক আঁটি ২০/৩০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৬০ টাকা, পুঁই শাক ৮০০ টাকা, মুলা শাল ২০ টাকা, পালং শাক ২০/৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া আলু মানভেদে ২০/২৫ টাকা, দেশি পেঁয়াজ মানভেদে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

তবে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সবজির দাম না কমার সবচেয়ে বড় কারণ মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য। কৃষকের ক্ষেত থেকে ভোক্তার ঝুড়ি পর্যন্ত সবজি বদলায় কমপক্ষে পাঁচ-ছয় হাত। আর প্রতিটি হাতবদলে বাড়ে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ২০ টাকা। ফলে কৃষক যেমন ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত, তেমনি বাড়িতে দামে পুড়ছেন ভোক্তা। আর এ পুরো সমীকরণে লাভবান হয় শুধুই মধ্যস্বত্বভোগীরা।

এসব বাজারে সোনালি কক মুরগি ২৮০/ ৩০০ টাকা ও সোনালি হাইব্রিড মুরগি ২৫০/২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লাল লেয়ার মুরগি ৩২০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৯০/৩০০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা ও দেশি মুরগি ৫৭০ থেকে ৫৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে ৩০০ গ্রাম ওজনের ১ কেজি ইলিশ ১০০০ টাকা, ৫০০ গ্রামের ১৮০০ টাকা, ৭০০ গ্রামের ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা ও ১ কেজি ওজনের ২৪০০/২৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে ১ কেজি শিং মাছ চাষের (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, দেশি শিং ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা, রুই দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, দেশি মাগুর ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা, বোয়াল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বড় কাতল ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, পোয়া ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০ টাকা, কই ২৫০ থেকে ২৩০ টাকা, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১৩০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি ৫০০ টাকা ও পাঁচ মিশালি মাছ ৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা ও খাসির মাংস ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে দেশি আদা ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, চায়না আদা ২০০ টাকা, রসুন দেশি আকার ভেদে ৭০/১০০ টাকা, ইন্ডিয়ান ১৮০ টাকা, দেশি মশুর ডাল ১৬০/ ১৭০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা ও খেসারির ডাল ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা, হাঁসের ডিম ২১০ টাকা, দেশি মুরগির ডিমের হালি ১১০ টাকা ও সোনালি কক মুরগির ডিমের হালি ৭০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

বাজারগুলোতে মিনিকেট চাল প্রকারভেদে ৮৫ থেকে ৯২ টাকা, স্বর্ণা ৫৫ টাকা ও ২৮ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজি দরে।

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED