Loading Now

মশার যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ নগরবাসী!

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥

নিজের শিশুকে দিনদুপুরে মশারি দিয়ে ঢেকে দিচ্ছেন মা। মসজিদের মুয়াজ্জিন দরজায় দাঁড়িয়ে মশা মারার ব্যাট চালাচ্ছেন। আর সড়কের পাশের চা দোকানগুলোতে দুপুরের পর থেকে জ্বলছে মশা মারার কয়েল। তারপরও মশার জ্বালায় আতঙ্কিত জনজীবন। কোথাও দাঁড়ানো মাত্রই ঝাঁকে ঝাঁকে মশা ঝাপিয়ে পড়ছে শরীরের বিভিন্ন স্থানে। এমনকি নামাজে সেজদারত মুসল্লীর মুখে ঢুকে যাচ্ছে মশা। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের জন্য মশা এখন আতঙ্কের নাম। যদিও এসব মশা থেকে বড় ধরনের রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা কম, তবে শিশুদের জন্য অবশ্যই বিপদজনক বলে জানান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। এতোদিন বরিশাল নগরীর অন্যতম সমস্যা ছিলো বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের অবহেলায় পরে থাকা ফুটপাতগুলো। কোথাও ম্যানহোলগুলোতে ঢাকনা ছিলোনা, সাথে ছিলো খানাখন্দের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ চলাচল।

এ নিয়ে নগরবাসীর অভিযোগে গুরুত্ব দিয়ে সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার রায়হান কাওছার নিজেই নগরীর বিভিন্ন সড়কে ঘুরে ঘুরে দেখেছেন এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। কোথাও নিজে দাঁড়িয়ে থেকে, কোথাও লোক পাঠিয়ে খানাখন্দ সংস্কার ও ম্যানহোলের ঢাকনা লাগানোর ব্যবস্থা করেছেন। একইসাথে চলমান রেখেছেন সড়কে পিচঢালাই কাজ। এ নিয়ে সংকটও কম নয়। অনেক অভ্যন্তরীণ সড়কেই অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করে তবেই কাজ এগিয়ে নিতে হচ্ছে তাকে। কিন্তু সেখানে অবৈধ দখলমুক্ত করার কাজে এসে রাজনৈতিক দলগুলোর কতিপয় নেতারা বাধা সৃষ্টি করছেন বলে জানালেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।

যে কারণে সড়ক নির্মানের কাজে ধীরগতি তৈরি হচ্ছে বলে জানান তারা।

এদিকে নগরীতে মশার উপদ্রব এতোটাই বেড়েছে যে দিনদুপুরে মশারি ছাড়া ঘরে থাকা যায়না। নগরবাসীর অভিযোগ, কার্যকর মশানিধন হচ্ছে না নগরীতে। মাঝেমধ্যে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা ফগার মেশিন চালিয়ে সড়কের পাশের ড্রেনগুলোতে ওষুধ দিচ্ছে বটে তবে তা কোনো কাজে আসেনা বলে জানান নগরবাসীর অনেকেই। এজন্য নগরবাসীর অসচেতনতা এবং সিটি করপোরেশনের গাফিলতি দুটোই দায়ী বলে মনে করেন নগর চিন্তাবিদরা। নগর চিন্তাবিদ কাজী মিজানুর রহমান, পরিবেশ আন্দোলনের নেতা রফিকুল আলম বলেন, নগরীর খালগুলো পরিচ্ছন্ন থাকলে মশার উৎপত্তি অনেক কমে যেত। কিন্তু আমাদের নগরবাসীর অসচেতনতার কারণেই খালগুলো পরিচ্ছন্ন থাকেনা। প্রতিটি বাড়ির পিছনের নর্দমাগুলো পরিষ্কার রাখাতো সিটি করপোরেশনের কাজ না। আবার প্রতিটি বাড়ির পিছনের নর্দমা পরিচ্ছন্ন আছে কিনা সেখানে নিয়মিত মশার ঔষধ ছিটানো হচ্ছে কিনা এসব তদারকি স্থানীয় কাউন্সিলর বা এই মুহূর্তে নির্ধারিত প্রশাসনের কাজ। সিটি করপোরেশনের পর্যাপ্ত ফগার মেশিন নেই। বিগত ১৫ বছর ধরে এ কথা চলমান রয়েছে, তাহলে নগরবাসীর ট্যাক্স কোথায় যাচ্ছে।

মশার জ্বালাতন আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে দাবী করে শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক তানিয়া আফরোজ বলেন, বরিশাল নগরীতে এমনকি আমাদের চেম্বারগুলোতেও মশার জন্য বসা যায়না, এটা সত্যি। যদিও এই মশাগুলো সরাসরি ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়া জাতীয় রোগ বহন করেনা। তবে চুলকানি জাতীয় রোগ ছড়ায়। শিশুদের কামড়ে শরীর ফুলিয়ে দিচ্ছে। কামড়ের স্থানে চুলকানোর কারণে ঘাঁ তৈরি হচ্ছে। তাই শিশুদের খুব সাবধানে রাখতে হবে।
তানিয়া আরো বলেন, একটু বেশি বৃষ্টিপাত হলেই নগরীর এই মশা অনেকটা কমে যাবে।

এ বিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার রায়হান কাওছার বলেন, বিভিন্ন বাধা ও সংকটের অনেক কিছুই ঠিকমতো এগোচ্ছে না মানে এটা নয় যে এগুলো হবেনা। একটু সময় নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ নিতে চাই আমি। সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ চলমান রয়েছে। প্রতিটি ড্রেন নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে। জলাবদ্ধতা দূর হলে মশার বংশবৃদ্ধি দূর হয়ে যাবে।

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED