মাদরাসাছাত্র আল-ইয়াসিন হত্যা মামলায় শিক্ষক রায়হান গ্রেপ্তার
বানারীপাড়া প্রতিনিধি ।।
বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের আউয়ার দারুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসার ছাত্র আল-ইয়াসিন (১৪) হত্যা মামলার আসামী শিক্ষক মো. রায়হান হাওলাদারকে (২৬) গ্রেফতার করা হয়েছে।
রোববার (১৩ এপ্রিল) সকালে বানারীপাড়া থানা থেকে তাকে বরিশাল জেলহাজতে পাঠানো হয়। এর আগে শনিবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর মিরপুর শাহআলী এলাকা থেকে থেকে র্যাব-পুলিশের যৌথ অভিযানে হত্যাকান্ডের প্রায় ৭ মাস পরে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে বানারীপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক চন্দন কুমার রায় জানান।
ইয়াসিন সৈয়দকাঠির আউয়ার দারুল উলুম মাদ্রাসা ও এতিমখানার হেফজ বিভাগের শিক্ষার্থী ছিল। সে একই উপজেলার চাখার ইউনিয়নের বড় চাউলাকাঠি গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে। হেফজ বিভাগের ২৪ পারা পর্যন্ত কোরআন শরিফ আয়ত্ত করেছিল ইয়াসিন। ৩০ পারা শেষ করে মাথায় পাগড়ি নিয়ে হাফেজ হয়ে ফিরে আসবে ছেলে, এ আশায় বুক বেঁধেছিলেন তার মা। কিন্তু ছেলের মৃত্যুতে তাঁর সেই স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে গেল।
মামলা সুত্রে জানা গেছে, গত ১৭ অক্টোবর দুপুরে মাদ্রাসা থেকে ইয়াসিন নিখোঁজ হয়। তার মাকে ফোন করে অধ্যক্ষ আব্দুর রব মিয়া জানান, ইয়াসিনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে নিরীহ ও শান্ত প্রকৃতির ইয়াসিন কাউকে না জানিয়ে কোথাও যায় না। তাই তার নিখোঁজের বিষয়টি প্রথমে মেনে নিতে পারেননি পরিবারের কেউ। পরের দিন বিকেলে আউয়ার এলাকায় কবির মোল্লার স-মিলের উত্তর পাশে খাল থেকে ইয়াসিনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। ইয়াসিনের মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হলে এর প্রতিবাদে তখন এলাকাবাসী মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন।
মামলার বাদী রুম্মানের অভিযোগ, অধ্যক্ষ আব্দুর রব মিয়া মাদ্রাসার আশপাশে খুঁজতে না দিয়ে তাদের ভিন্ন পথে নিয়ে খোঁজার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে খালের মধ্যে ইয়াসিনের লাশ পাওয়া যায়। দাফনের পর মাদ্রাসায় গিয়ে তারা জানতে পারেন, ইয়াসিনের নিখোঁজের বিষয়টি আশপাশের কেউ জানতেন না। মাদ্রাসার অন্য ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, ঘটনার দিন শিক্ষক আহমাদুল্লাহ আহম্মদের নেতৃত্বে ছাত্ররা মাটি এনে মাদ্রাসার উঠানে রাখে। এই কাজ করতে গিয়ে ইয়াসিন ক্লান্ত হয়ে মেঝেতে বসে পড়ে। তখন শিক্ষক রায়হান হাওলাদার ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে এলোপাতাড়ি পেটান। এক পর্যায়ে ছেলেটির বুক, চোখ ও মুখে সজোরে লাথি মারেন তিনি। এতে ইয়াসিন দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে পড়ে অচেতন হয়ে যায়। এরপর তাকে কাঁথা দিয়ে পেঁচিয়ে আব্দুর রব মিয়া, রায়হান হাওলাদার ও আহমাদুল্লাহ আহম্মদসহ কয়েকজন ধরে গুদাম ঘরে রাখেন। পরে রাতে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে খালে ফেলে দেন।
মৃত্যুর ৯ দিন পর তার বড় ভাই আল-রুম্মান (২১) বাদী হয়ে পাঁচজনের বিরুদ্ধে বানারীপাড়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেন- মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুর রব মিয়া (৫৫), তাঁর ছেলে সাইফুল্লাহ (২৪), শিক্ষক মো. রায়হান (২৬) হাওলাদার, আহমাদুল্লাহ আহম্মদ (২৫) ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আলমগীর হাওলাদার (৫৫)। তাদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে ইয়াসিনকে হত্যা ও মরদেহ গুমের উদ্দেশ্যে খালে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। মামলা দায়েরের পর গ্রেফতার এড়াতে আসামীরা আত্মগোপনে চলে যান।
Post Comment