Loading Now

শিশুকে দত্তক নিয়ে যৌনাঙ্গে অস্ত্রোপচার, টার্গেট দেহ ব্যবসা

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

অভিযোগ তদন্তে গিয়ে খোদ বাদী পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব নারীর ভয়ংকর রূপ উন্মোচন করল বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ। শহরের ১০ নং ওয়ার্ডের আমবাগান ক্লাব রোডের বাসিন্দা অ্যাডলিন বিশ্বাস নামের এই নারী ১২ বছর বয়সি কিশোরীকে মেয়ে হিসেবে দত্তক নিয়ে নির্যাতন করাসহ যৌন নিগ্রহ চালিয়ে আসছিলেন। এবং তার আপন ছোট ভাই ‘হোয়াইট হাউজ’ নামক একই ভবনের বাসিন্দা ত্রিশোর্ধ্ব জনি বিশ্বাসও অনাথ মেয়েটিকে বছরের পর বছর যৌন নিপিড়ন করেন। পরিশেষে যৌনাঙ্গে অস্ত্রোপচার করে দেহব্যবসা করানোর চেষ্টা করা হলে নভেম্বর মাসের শেষের দিকে মেয়েটি বাসা থেকে পালিয়ে যায়। পলাতক কিশোরীকে উদ্ধারে আইনে সহযোগিতা চেয়ে সংশ্লিষ্ট কোতয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেন নিপিড়ক অ্যাডলিন। সেই সাধারণ ডায়েরি অনুসন্ধানে গিয়েই পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় এবং এর নেপথ্যের অপরাধমূলক কাহিনী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বাকরুদ্ধ করে।

পুলিশ জানায়, শহরের ১০ নং ওয়ার্ডের আম বাগান ক্লাব রোডের অভিজাত পরিবারের সন্তান অ্যাডলিন বিশ্বাস অনাথ শিশুটিকে রাষ্ট্রীয় আইন মেনে দত্তক নেন এবং তাকে সন্তানের মতো পড়ালেখা করিয়ে মানুষ করার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই শিশুটিকে দিয়ে বাসার কাজ করানো শুরু করেন এবং কর্মে ভুলত্রুটি হলে মারধর করাসহ ফেলে দেওয়া খাবার খাওয়ানো হয়। শিশুটি ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠতে থাকে এবং তাকে দিয়ে বাসার গৃহপরিচারিকার কাজ করানো হয়। অ্যাডলিন বিশ্বাস একদিকে এভাবে নিপিড়ন চালাতেন অন্যদিকে তার আপন ভাই একই ভবনের বাসিন্দা জনি বিশ্বাস কিশোরীকে যৌন হয়রানি করতেন।

পুলিশের ভাষায়, অ্যাডলিন বিশ্বাস কিশোরীর জীবন শেষ করে দিয়েছেন, তিনি মেয়েটির সাথে পতিতালয়ের সর্দারনীর মত আচরণ করেন। অন্ত:সত্ত্বা হওয়ার ঝামেলা এড়াতে শিশুটির যৌনাঙ্গে অস্ত্রোপচার করেছেন এবং তাকে দেহব্যবসায় বাধ্য করা হচ্ছিল। ভয়ে শিশুটি নভেম্বর মাসের শেষের দিকে বাসা থেকে পালিয়ে যায়।

কোতয়ালি থানাধীন স্টিমারঘাট ফাঁড়ি পুলিশের ইনচার্জ গোলাম মো. নাসিম জানান, মেয়েটি নির্যাতনের ভয়ে পালিয়ে অ্যাডলিনের বাসার কাজের বুয়ার ঝুমুর বেগমের কাছে আশ্রয় নেয়। সর্দারনী অ্যাডলিনের করা সাধারণ ডায়েরি তদন্তে গিয়ে রোববার মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে একদিন বাদে সোমবার কিশোরীকে বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে হাজির করলে বিচারক ২২ ধারায় তার বক্তব্য নোট করেন। এবং এই ঘটনায় অ্যাডলিন এবং তার ভাই জনি বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করতে বলেন। ভালো রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শিশুকে দত্তক নিয়ে এই ধরনের পৈশাচিক কায়দায় যৌন নিগ্রহ করার ঘটনায় স্বয়ং আদালতও ক্ষুব্ধ হন।

এসআই নাসিম জানান, আদালতের নির্দেশে গতকাল সোমবার রাতে অভিযুক্ত অ্যাডলিন বিশ্বাস এবং তার ভাই জনিকে গ্রেপ্তারে আমবাগনের বাসায় অভিযান চালানো হয়। কিন্তু আগেভাগে টের পেয়ে জনি পালিয়ে গেলেও অ্যাডলিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এবং রাতেই তার বিরুদ্ধে কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশের এসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তা মো. মাজেদুল ইসলাম বাদী হয়ে শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা করেন। সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ অ্যাডলিনকে মঙ্গলবার আদালতে সোপর্দ করলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।

শহরের অভ্যন্তরের একটি বাসায় মেয়ে শিশুকে এই ধরনের যৌন নিপিড়নের ঘটনা খোদ পড়শিদের হতবাক করে দিয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, অ্যাডলিন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মেয়ে, আমবাগান এলাকায় তার বাড়িটি নির্জন স্থানে এবং চারদিকে উঁচু দেয়াল ঘেরা। সঙ্গত কারণে এই ভবনে কি হয় তা পড়শিদের অজানারই কথা।

বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশের ওসি আল-মামুন উল ইসলামও শিশু নির্যাতনের এই ঘটনাকে বর্বরতা এবং বিকারগ্রস্ত মানুষের কাজ বলে অবিহিত করেন। এবং ঘটনার সাথে জড়িত সকলকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার তৎপরতার কথা জানান।’

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED