Loading Now

শিশু পাচার এবং যৌনতার শিকার শিশুদের সুরক্ষায় অবহিত করন সভা

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ শিশু পাচার এবং যৌনতার শিকার শিশুদের সুরক্ষা শক্তিশালী করুন প্রকল্পের অবহিত করন সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ রবিবার দুপুরে বরিশাল জেলা প্রশাসকের সন্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেনের। এসময় উপস্থিত ছিলেন অতি:পুলিশ সুপার মোঃ আলাউল হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক লুসিকান্ত হাজং, ডেপুটি সিভিল সার্জন সব্যসাচী দাস।
এছাড়াও সরকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। দাতা সংস্থা ফ্রিডম ফান্ড এর সহায়তায় উন্নয়ন সংগঠন রূপান্তর এর বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প সম্পর্কে সভায় আলোকপাত করেন রূপান্তর এর পরিচালক শাহাদত হোসেন বাচ্চু। সভায়া বলা হয় মানব পাচার বিশ্বব্যাপী সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত একটি ঘৃণ্য অপরাধ। পাচারের শিকার শিশু ও নারীর মানবাধিকার নানাভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। দারিদ্র্য, বেকারত্ব, কর্মসংস্থানের সংকট আর উন্নত জীবনের আশায় থাকা নারী, শিশু ও বিভিন্ন বয়সি মানুষকে পাচার করার ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। এখানে দারিদ্র্য ও কর্মসংস্থানের ব্যাপক সংকট থাকায় অশিক্ষিত ও স্বল্পশিক্ষিত নারী, পুরুষ ও শিশুরা প্রলোভনে পড়ে পাচারকারীদের চক্রান্তের শিকার হয়। প্রেম, বিয়ে কিংবা বিদেশে চাকরি দেওয়ার আকাশকুসুম প্রলোভন দেখিয়ে দালালরা পাচারের ফাঁদ পাতে। ভিকটিমের সঙ্গে প্রতারণা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, যৌন হয়রানি ও মুক্তিপণ আদায় পাচারের অন্যতম কারণ। খাদ্য ও চিকিৎসাসেবা থেকে ভিকটিম বঞ্চিত থাকে। তাদের শ্রমদাসে বাধ্য করা হয়।

বর্তমান সময়ে মানব পাচারকে নব্য দাসপ্রথার সঙ্গেও তুলনা করা হচ্ছে। নারী ও শিশু পাচার এক ধরনের সহিংসতা, যা মানবসভ্যতার প্রতি উপহাস। বর্তমান সময়ে বিশ্বজুড়ে মানব পাচার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তার সাথে বাংলাদেশও এর প্রভাব পরেছে।

তাই এ সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া ছাড়া জনগণকে রক্ষা করা কঠিন। বাংলাদেশে মানব পাচার রোধে বেশ কিছু আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০’ (সংশোধিত ২০০৩)। এ আইনের ৫ ও ৬ ধারায় নারী ও শিশু পাচারের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এর বাইরেও পাচার প্রতিরোধে ‘অনৈতিক পাচার প্রতিরোধ আইন, ১৯৩৩’ নামে একটি আইন রয়েছে। কিন্তু পরবর্তীকালে দেখা যায়, এসব আইনের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এর প্রয়োজনীয়তা থেকেই ২০১২ সালের মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনটির সৃষ্টি।

মানব পাচারের নানা ধরন ও কারণ দেখা যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারী, পুরুষ স্বেচ্ছায় পাচার হয়ে সংবাদের শিারোনাম হচ্ছে। এক্ষেত্রে সব পাচারের মামলাকে দালাল কর্তৃক পাচার হিসেবে ধরা যায় না। আবার প্রকৃতভাবে যেসব নারী-পুরুষ নানাভাবে নির্যাতন ও প্রলোভনের কারণে পাচারের শিকার হয়, সেসব ঘটনার মামলাগুলো সঠিকভাবে তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতায় বছরের পর বছর আটকে থাকে। এসব বিষয় খেয়াল রাখতে বলা হয়।

এদিকে শিশু পাচার রোধে অবিলম্বে সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ না নিলে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন উপস্থিত সকলে । সভায় আরও বলা হয় আইন, নীতি এবং অনুশীলনে অনেক অগ্রগতি অর্জন করা সত্ত্বেও শিশু পাচার বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ অপরাধের মাত্রার সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিক্রিয়াগুলো যথেষ্ট দ্রুত গতিতে কার্যকর হচ্ছে না। পাচারকারীরা দ্রুত নিজেদের অভিযোজন করছে। প্রযুক্তিগত অগ্রগতিকে কাজে লাগিয়ে দুর্বলতার পূর্ণ সুযোগ নিচ্ছে। অন্যদিকে প্রতিক্রিয়াগুলো সেই তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে। তাই শিশু পাচার রোধে জরুরি এবং সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপগুলো বিলম্ব ছাড়াই বাস্তবায়ন করা উচিত। এছাড়া সভায় শিশু পাচার প্রতিরোধে আইন ও করণীয় সার্বিক বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED