শীতজনিত রোগে ছয়দিনে চিকিৎসা নিয়েছে ১২’শ শিশু
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
শীত বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে শুরু করেছে শিশু রোগীর সংখ্যাও। বিশেষ করে নিউমোনিয়া ব্রঙ্কিওলাইটিস, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়া এবং শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত শিশুদের ভর্তি বেড়েছে শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুটি শিশু ওয়ার্ডে। ওই সকল রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ জন শিশু ভর্তি হচ্ছে।
শিশু ওয়ার্ডে দায়িত্বরত একাধিক নার্স বলেন, নবজাতক থেকে শুরু করে শিশু ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। তবে বেশীরভাগ রোগী আসছে গ্রামাঞ্চল থেকে। এ কারনে ৪১ বেডের বিপরীতে ভর্তি রয়েছে প্রায় ৩শ রোগী। বেড সংকট প্রকট আকার ধারন করায় একটি বেডে দুইজন এবং কোন কোন বেডে তিজন শিশু রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে কিছু রোগী রয়েছে যারা বেশী নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত। তাদের জন্য বেশী সময় ধরে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। এরা গ্রামে বসে বিভিন্ন ফার্মেসী থেকে ওষুধ নিয়ে রোগ থেকে মুক্তির চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে হাসপাতালে এসেছেন। অথচ তারা যদি আগেভাগে হাসপাতালে আসতো তাহলে বেশীদিন চিকিৎসা দিতে হতো না। এ কারনে তারা বারবার রোগীদের অবহিত করছেন শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগ হলেই সাথে সাথে চিকিৎসক অথবা হাসপাতালে এসে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করার জন্য। হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২১ ডিসেম্বর থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল ১ হাজার ২২৮ শিশু। বর্তমানে দুটি ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে প্রায় ৩শ রোগী।
শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন সানজিদার মা বলেন, তারা ঝালকাঠির কাঠালিয়া থেকে এসেছেন। ৪ বছরের শিশুর জ্বর কোনভাবেই কমছে না। গ্রাম্য চিকিৎসক থেকে শুরু করে ফার্মেসী থেকে ওষুধ নিয়েছেন তাতে কাজ হয়নি। উপায়ন্তর না পেয়ে শিশুকে নিয়ে শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। তিনদিনের চিকিৎসায় সে অনেকটা ভালো। দ্ইু /একদিনের মধ্যে হাসপাতাল ছাড়তে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি। একই কথা জানালেন শিশু ইউনিটে ভর্তিকৃত একাধিক রোগীর অভিভাবক।
অভিভাবক আবু মুসা বলেন, ঘর থেকে নামলেই টাকার প্রয়োজন। এ কারনে আমাদের চেষ্টা থাকে গ্রাম্য চিকিৎসক ও ফার্মেসীর ওষুধের উপর। যখন সেখানকার ওষুধ কাজ করে না তারপর উপজেলা হাসপাতালে যাই। সেখানে দেখার পর অভিভাবকদের মনে ভয় ঢুকিয়ে দেয় ‘শিশুর অবস্থা খারাপ বলে’।
অবশেষে তাদের পরামর্শে বরিশালে শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসতে বাধ্য হন বলে জানান তিনি। হাসপাতালে আসার পর চিকিৎসা এবং কিছু ওষুধ পেয়েছেন। যা হাসপাতালে নেই তা বাইরে থেকে ক্রয় করেছেন। তবে পূর্বের চেয়ে অনেক ভালো চিকিৎসা পাওয়ার কথা জানালেন তিনি।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. একেএম মশিউল মুনীর বলেন, শীতের কারনে ঠান্ডাজনিত রোগে বেশী আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা। প্রতিদিন গড়ে ৫০-৬০ জন শিশু হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। সেই অনুপাতে বেড না থাকায় একই বেডে একাধিক শিশু রেখেও চিকিৎসা দেয়া হয়। তবে চিকিৎসায় কোন ধরনের গাফলতি হচ্ছে না বলে দাবি করেন পরিচালক।
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক মিলন হাওলাদার বলেন, আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত দুই দিন ধরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে স্থির রয়েছে। তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আরো বলেন, শনিবার মাঝরাত থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত মাঝারী থেকে ঘণ কুয়াশা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আগামী ৫ দিন অব্যাহত থাকবে। এছাড়া বৃষ্টিপাত এবং শৈত্য প্রবাহের সম্ভাবনা আগামী ৫ দিনে নেই বলে জানান তিনি।



Post Comment