সহজ হচ্ছে ভাড়াটিয়াদের ভোটদান!
অনলাইন ডেক্স ।।
চাকরি, ব্যবসা বা জীবিকার প্রয়োজনে অনেক নাগরিক স্থায়ী ঠিকানা থেকে দূরে অবস্থান করায় ভোটদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে। এবার সে বঞ্চনার অবসান হতে যাচ্ছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভাসমান ভোটারদের জন্য ভোটার এলাকা পরিবর্তনের প্রক্রিয়া সহজ করার উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বর্তমানে ভোটার এলাকা পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন হয় বাড়ির মালিকের দেওয়া বিদ্যুৎ বিল বা বাড়িভাড়ার চুক্তিপত্রের অনুলিপি। কিন্তু বাস্তবে অনেক ভাড়াটিয়াই এসব কাগজ সংগ্রহ করতে পারেন না। এই জটিলতা দূর করতে নতুন একটি প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছেন ইসির কর্মকর্তারা।
প্রস্তাব অনুযায়ী, যদি কোনো নাগরিক নতুন এলাকায় ভোটার হতে চান, তবে সেই এলাকার দুজন ভোটার তাকে শনাক্ত করে স্বাক্ষর দেবেন। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট ইসি কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সত্যতা যাচাই করবেন। যাচাইয়ে তথ্য সত্য প্রমাণিত হলে ওই নাগরিকের ভোটার এলাকা পরিবর্তন করা হবে। কমিশনের অনুমোদন পেলে প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন করা হবে।
এ ব্যাপারে ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, “গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে অনেক নাগরিক ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। এবার আমরা চাই সবাই যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে। এর জন্য ভোটার এলাকা পরিবর্তনের প্রক্রিয়া সহজ করার পরিকল্পনা চলছে।”
ইসির এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশে এমন ভোটার আছে যারা ভোট দিতে চায়। কিন্তু চাকরি বা অন্য ব্যবসার কাজে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস করে থাকেন। যার ফলে ভোটের দিন ভোটার এলাকাতে যাওয়া সম্ভব হয় না। এছাড়া ভোটার এলাকা পরিবর্তন করাটা এনআইডি সংশোধনের চেয়ে তুলনামূলক জটিল। তাই বেশিরভাগ নাগরিকই ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে আগ্রহী হন না। ফলে ভোটারের একটি বড় অংশ ভোটদান থেকে বিরত থাকেন। এরকম ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতেই ভোটার এলাকা পরিবর্তনের প্রক্রিয়াকে আরও কীভাবে সহজ করা যায় সেটার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ভোটার এলাকা পরিবর্তন কার্যক্রম সহজ করার বিষয়ে জানতে চাইলে এ এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, “গত পনের বছরে নানা কারণে বিপুল পরিমাণ নাগরিক ভোটার এলাকার পরিবর্তে করে অন্য এলাকায় বসবাস করছেন। এখন যদি তাদের এনআইডিতে ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার সুযোগ না দেওয়া হয় তাহলে তারা তো ভোট দিতে পারবে না। আর এ কারণেই ভোটার এলাকা পরিবর্তনের যে প্রক্রিয়া তা আরেকটু সহজ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।”
“নানা কারণে ভোটার এলাকায় বসবাস না করে অন্য কোনো এলাকায় গিয়ে বসবাস করছে, এমন বিপুল সংখ্যক ভোটারকে ভোটের আওতায় আনার জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে” বলেন তিনি।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, “ভোটার এলাকা পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ঝামেলায় পড়ে যারা ভাড়া থাকেন তারা। কারণ তারা যখন ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে আসেন ওই সময় তাদের কাছে ভাড়ার চুক্তিপত্র বা বিদ্যুৎ বিলের কাগজ চাওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু বাস্তবতা হলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভাড়ার চুক্তিপত্র করা হয় না, আবার অন্য দিকে বাড়ির মালিকরা বিদুৎ বিলের কাগজ দিতে চান না। এতে করে যারা ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে চায় তারা আর করতে পারে না।”
“এসব এক্ষত্রে আমরা একটি প্রস্তাব করেছি। যেখানে বলা হয়েছে- কোনো নাগরিক ভোটার এলাকা পরিবর্তন করে অন্য যে এলাকার ভোটার হতে চাইবেন সে এলাকার দুজন ভোটার তাকে শনাক্ত করে সাক্ষ্য দেবেন যে তিনি এ এলাকায় বসবাস করেন। আর যে দুজন লোক সাক্ষ্য দেবেন তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইসি কর্মকর্তা যোগাযোগ করে সত্যতা যাচাই করবেন। সত্যতা পেলে ভোটার এলাকা পরিবর্তন করে দেবেন। এ রকম করে আমরা এটি সহজ করার চেষ্টা করছি। কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে এ পরিকল্পা বাস্তবায়ন করা হবে।”
আইনে কোনো পরিবর্তন আনা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটি আইনগত কোনো পরিবর্তন নয়। এনআইডি কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) কমিশন নির্ধারণ করে থাকে। সেই এসওপিগুলো আমরা সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছি। যার মধ্যে ভোটার এলাকা পরিবর্তনের বিষয়টি আছে। আর এর জন্য আইন সংশোধনের প্রয়োজন নেই।”
ভাসমান ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে ইসির নতুন উদ্যোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রধান ও জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “এমন ভোটারের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। আমাদের যদি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাটা কার্যকর করতে হয়, গ্রহণযোগ্যতা করতে হয়, তাহলে সবার ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আর নির্বাচন কমিশন এভাবে যদি করে তাহলে নির্বাচন কমিশনের এ উদ্যোগ ইতিবাচক বিষয়।”
বর্তমানে ভোটারের এলাকা পরিবর্তনে যে নিয়ম মানতে হয়
একজন ভোটারকে ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার জন্য সংশ্লিষ্ট থানা বা উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে আবেদন করতে হয়। আর আবেদনের সঙ্গে সঠিক ঠিকানার স্বপক্ষে বাড়ির দলিল/টেলিফোন, গ্যাস বা পানির বিল/বাড়ি ভাড়ার চুক্তিপত্র রশিদের সত্যায়িত অনুলিপি জমা দিতে হয়। এরপর কর্মকর্তা কাগজপত্র দেখে তা অনুমোদন বা বাতিল করেন।
ভোটার তালিকায় স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তনে যে নিয়ম
ভোটার তালিকায় স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন বা সংশোধন করতে হলে সংশ্লিষ্ট ভোটারকে স্থায়ী ঠিকানা (বিভাগ, অঞ্চল, জেলা, উপজেলা, পোষ্ট অফিস ও পোস্ট কোড, ইউনিয়ন/ওয়ার্ড, বাসা/হোল্ডি, গ্রাম/রাস্তা,মৌজা/মহল্লা) লিপিবদ্ধপূর্বক যদি তিনি বর্তমান ঠিকানার ভোটার হন, তাহলে সংশোধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
NID Portal (Services.nidw.gov.bd)-এ ভোটারগণের স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তনের সুযোগ আছে। যদি বর্তমান ঠিকানার ভোটারগণ স্থায়ী ঠিকান পরিবর্তনের আবেদন করতে চান সেক্ষেত্রে NID Portal (Servicesnidw.gov.bd) এর Other information option-এ গিয়ে স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। NID Portal (Services.nidw.gov.bd)-এ আবেদনের ধরণ “Other info Correction” অপশন হতে ঠিকানা পরিবর্তন করা যাবে। NID Portal (Services.nidw.gov.bd)-এ দাখিলী আবেদন উপজেলা নির্বাচন অফিসার নিষ্পত্তি করবেন। যদি ভোটার স্থায়ী ঠিকানার ভোটার হন তাহলে ভোটার NID Portal (Services.nidw.gov.bd) এর মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন না। আবেদন করলে তার বর্তমান ঠিকানা পরিবর্তন হয়ে যাবে। স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করতে হলে উপজেলা নির্বাচন অফিস হতে প্রথমে ভোটারকে স্থানান্তরের আবেদনের মাধ্যমে বর্তমান ঠিকানায় ভোটার করতে হবে। তারপর স্থায়ী ঠিকানার পরিবর্তনের আবেদন করবেন।
সর্বশেষ হালনাগাদ অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ২৭৪ জন। এছাড়া চলতি সপ্তাহে ৪৪ লাখ নতুন ভোটার যুক্ত করে একটি সম্পূরক ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে ইসি।
Post Comment