সিন্ডিকেটের দখলে নতুন টাকার বাজার, আকাশচুম্বী দাম!
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
সারা বছরের মধ্যে বিশেষ করে দুই ঈদে বেড়ে যায় নতুন টাকার চাহিদা। এসকল নতুন নোট সাধারন বাসিন্দারা বেশিরভাগই বিভিন্ন ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করে থাকেন। এর বাইরে কেউ কেউ এই টাকা নতুন টাকার বিক্রেতাদের কাছ থেকে কিনে থাকেন কিছুটা বাড়তি মূল্যে। তবে এবার বাংলাদেশ ব্যাংক শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিযুক্ত নতুন নোট সরবরাহ বন্ধ রাখায় ঈদের আগে রেকর্ড গড়েছে নতুন টাকার দাম। গতকাল শনিবার নগরীর নগর ভবনের পার্শবর্তী নতুন টাকার নোট বিক্রেতাদের কাছে দেখা গেছে এমন চিত্র। এখানে বিক্রেতাদের কাছে এবার ১০ টাকার ১০০টি নতুন নোট বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত। গত ঈদের আগেও ১১৫০ থেকে ১১৮০ টাকায় বিনিময় হয়েছে।
ঈদে ৫, ১০, ২০, ৫০ ও ১০০ টাকার নতুন নোটের চাহিদা থাকে বেশি। এ কারণে এসব নোটের দামও বেশি বলে জানান বিক্রেতারা। নগর ভবনের সামনে নতুন ও ত্রুটিযুক্ত নোটের ব্যবসায়ীরা জানান, গতবার যারা নতুন নোট নিয়ে রেখেছিল, তারাই এখন আমাদের দিচ্ছে। সরবরাহকারীরাই দর নির্ধারণ করে দেয়, আমরা বিক্রি করলে কমিশন পাই। ১০ টাকার একটা বান্ডিল নিতে বাড়তি ৭০০ টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। উচ্চমূল্য হওয়ায় নতুন টাকার বিক্রিও কমেছে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ কিনছেন না।
গতকাল নগরীর বিক্রেতাদের কাছে ১০ টাকার নতুন নোট কিনতে এসেছিলেন শাওন আহাম্মেদ। দরদাম করে প্রতি বান্ডিলে অতিরিক্ত ৪০০ টাকা দিয়ে ৫০ টাকার নতুন নোটের ১০০টির বান্ডিল কিনেছেন। তিনি বলেন, আমার চাহিদা ছিল ১০ ও ২০ টাকার নোটের। কিন্তু প্রতি ১০০টিতে ৭০০ টাকা বেশি চাওয়ায় নিতে পারিনি। তিনি আরও বলেন, প্রতিবারই ১০ থেকে ২০ হাজার টাকার নতুন নোট কিনি। গতবার ২০ হাজার টাকার নোট নিয়েছিলাম অতিরিক্ত ৩ হাজার টাকা দিয়ে। এখন তো দাম অনেক বেশি। পুরাতন টাকা দিয়ে ঈদে চলতে হবে এবার।
তিনি আরও বলেন, অনেকেই দরদাম করে না নিয়ে চলে যাচ্ছেন। অনেকেই বান্ডিল ভেঙে ১০ থেকে ২০টি নোট নিচ্ছেন বাড়তি টাকা দিয়ে। বিক্রেতারা বলেন, তারা সাধারণত বান্ডিল ভেঙে নতুন নোট বিক্রি করেন না। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় এবার করতে হচ্ছে।
বিক্রেতারা জানান, নতুন টাকা নেই আমাদের কাছে। গতবছর অনেক টাকা বিক্রি হয়নি, তার মধ্যে থেকে কিছু বিক্রি করেছি এখন। তিনি বলেন, দাম আরও বাড়বে, এখন ৭০০ টাকা বাড়তি দিলে ১০ টাকার নতুন ১০০টি নোট পাচ্ছেন। আজ চাদরাতে দাম কত টাকায় উঠবে বলতে পারছি না। নতুন টাকার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ২ ও ৫ টাকার নতুন নোটের দাম বেড়েছে দিগুণ। ২ টাকার ১০০টি নোট বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা এবং ৫ টাকার ১০০টি নতুন নোটের বান্ডিল বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। আর ১০০ টাকা মানের নতুন নোট নিতে প্রতি বান্ডিলে (১০ হাজার) গুনতে হচ্ছে ৩০০ টাকা।
উল্লেখ্য, প্রতি বছর দুই ঈদের আগে ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট বাজারে ছাড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও নিজেদের কাছে থাকা নতুন নোট বিনিময় করে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৮০টি শাখা থেকে নতুন নোট বিনিময় করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোও নতুন নোট সংগ্রহ করে ভল্টে রাখে। তবে পরবর্তীতে গত ১০ মার্চ ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জনসাধারণের মাঝে নতুন নোট বিনিময় কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই বিজ্ঞপ্তির কারণে ব্যাংকের ভল্টে আটকে গেছে নতুন নোট, তাই দাম বেড়েছে খোলা বাজারে।
Post Comment