Loading Now

হঠাৎ বিস্ফোরক হাথুরু, ‘বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার সময় জীবননাশের শঙ্কায় ছিলাম’

স্পোর্টস ডেক্স ।।

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে বাংলাদেশে ক্ষমতার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুতে পরিবর্তন আসে। যার ধারাবাহিকতা ছিল ক্রীড়াঙ্গেনেও। সেই পরিবর্তনের ধারায় বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচের চাকরি হারান চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। তার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ বাতিল করে দেয় বিসিবির বর্তমান কমিটি।

এরপরই বাংলাদেশ ছেড়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যান হাথুরু। তবে আজ (রোববার) হঠাৎ করেই হাথুরুসিংহে স্বীকার করেন, বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার সময় তিনি জীবননাশের শঙ্কায় ছিলেন। বাংলাদেশে তখন যে অবস্থা ছিল এবং নিরাপত্তার অভাবের কারণে এমনটা মনে করেছিলেন তিনি। নিরাপত্তার অভাবে তিনি নাকি আক্ষরিক অর্থেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। যে কারণে দ্রুত ঢাকা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ক্রিকবাজ জানিয়েছে এ খবর।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নতুন কমিটি দায়িত্ব নেয়ার পর আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে হাথুরুসিংহেকে সাময়িক বরখাস্ত করে। এরপরই তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যান। পরে, বিসিবি তাকে বরখাস্ত করে। ওই সময় হাথুরুসিংহে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলি অস্বীকার করলেও রবিবার কোড স্পোর্টের সাথে কথা বলার আগ পর্যন্ত তিনি তার সাথে আসলে কী ঘটেছিল তা নিয়ে কখনও কথা বলেননি।

হাথুরু বলেন, ‘বিসিবির সিইওর (প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন) আমার প্রতি শেষ পরামর্শ ছিল, আমার চলে যাওয়া উচিত। বোর্ডের কাউকে কিছু বলার দরকার নেই।’

 

সিইও তাকে কী বলেছিলেন, সেটাও জানান হাথুরু। ‘(সিইও বলেন) আপনার কি যাওয়ার টিকিট আছে?’ এটা আসলে আমার জন্য একটি সতর্কতা সংকেত ছিল। তখনই আমি কিছুটা শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম’- কোড স্পোর্টে রোববার (২০ এপ্রিল) এভাবেই হাথুরুসিংহেকে উদ্ধৃত করা হয়েছে।

‘সাধারণত বাংলাদেশে চলাচল করার সময় আমার সাথে একজন ড্রাইভার এবং একজন বন্দুকধারী থাকতেন। তিনি (সিইও) বললেন, তুমি কি আজ তোমার বন্দুকধারী এবং ড্রাইভারকে সঙ্গে নেবে? আমি বললাম, না। আমার কাছে শুধু ড্রাইভার ছিল।’

এরপর হাথুরু বলেন, ‘আমি সরাসরি ব্যাংকে গিয়েছিলাম। বাংলাদেশ ছাড়ার জন্য টাকা তুলতে চেয়েছি। আমি যখন ব্যাংকে ছিলাম তখন টিভিতে একটি ব্রেকিং নিউজ ছিল; একজন খেলোয়াড়কে লাঞ্ছিত করার অপরাধে চণ্ডিকাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।’

চণ্ডিকা আরও যোগ করেন, ‘যখন এ খবর এল, তখন ব্যাংক ম্যানেজার বললেন, কোচ, আমাকে তোমার সাথে যেতে হবে। লোকেরা তোমাকে রাস্তায় দেখাটা তোমার জন্য নিরাপদ নয়।’

‘এরপরই আমি আমি আতঙ্কিত হয়ে উঠি এবং সিদ্ধান্ত নিই, যেভাবেই হোক বাংলাদেশ থেকে আমাকে বেরিয়ে যেতে হবে। এক বন্ধু আমাকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের মাঝরাতের ফ্লাইট ধরার জন্য বিমানবন্দরে নিয়ে গিয়েছিল। এ সময় আমি একটি টুপি এবং একটি হুডি পরে এসেছি শুধু। তবে কোনো নিরাপত্তা ছিল না।’

হাথুরু বলেন, ‘বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার সময় তারা আমাকে বিমানবন্দরে গ্রেপ্তারও করতে পারত। এর আগে এমন একটা ঘটনা ঘটেছে, যেখানে আগের সরকারের একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। ওই সময় রানওয়েতে বিমানটি থামিয়ে তারা তাকে লাথি মেরে ফেলে দিয়েছিল (এ ঘটনা হাথুরুর নিজের বলা। তবে এমন কিছু ঘটেনি)। ওসব ঘটনা তখন আমার মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল। এরপর প্রবেশপথে এক্স-রে মেশিনে, বিমান বাহিনীর একজন কর্মকর্তা আমাকে বললেন; দুঃখিত কোচ, আমি খুব দুঃখিত যে আপনি চলে যাচ্ছেন (তিনি খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন)। তখন আমি আমার জীবনের ভয়ে ভীত ছিলাম এবং তিনি আমাকে বলছিলেন যে, আমি তাদের দেশের জন্য কিছু করেছি।’

চেন্নাইতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের বিশ্বকাপের ম্যাচের সময় ডাগআউটে স্পিনার নাসুম আহমেদকে চড় মারার কথা জোরালোভাবে অস্বীকার করেন হাথুরু। তবে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, সে সম্পর্কে হাথুরু জানান, তিনি মাঠে ব্যাটারদের জন্য গ্লাভস নিয়ে যেতে ডাগআউটে পিছনে বসে নাসুমকে পিঠে টোকা দিয়েছিলেন।

যদিও হাথুরুসিংহের কাছে কখনও বিসিবির পক্ষ থেকে তার বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়নি। এমনকি নাসুমও এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন। হাথুরু বলেন, ‘এটাই সবকিছু কারণ এটাই আমার ক্যারিয়ার। এখন তারা আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে অভিযোগ এনে আমার ক্যারিয়ার নষ্ট করে দিয়েছে।

‘আমি কখনও কোনও খেলোয়াড়ের সাথে ঝগড়া করিনি। আমি আমার খেলোয়াড়দের প্রতি আবেগ প্রকাশ করি না। হয়তো হতাশা থেকে আমি ডাস্টবিনে কিক দিয়েছি- যে কোনও কোচের ক্ষেত্রেই এমনটা হয়; কিন্তু যে ঘটনার কথা বলা হচ্ছে, তা একেবারেই আলাদা। এটা আমার উপর চাপ সৃষ্টি করেছে। আমি জানি না, অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত আমি কত সুযোগ মিস করেছি (অভিযোগের জবাব দেয়ার জন্য), অনেক সুযোগ হয়েছে। এটা মূলত তারা আমার চুক্তি থেকে বাদ দেয়ার জন্য করছে। বিষয়টা পুরোপুরি নতুন সভাপতির পূর্বপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত ছিল।’

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED