হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্সচালকদের দুগ্রুপে সংঘর্ষ, আতঙ্কে রোগীর মৃত্যু
গৌরনদী প্রতিনিধি ।।
বরিশালের গৌরনদী উপজেলা হাসপাতালের মধ্যে জরুরি বিভাগের সামনে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সচালকদের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়গ্রুপের অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে এ হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র হাসপাতালজুড়ে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে প্রায় আধা ঘণ্টা চিকিৎসাসেবা বন্ধ ছিল। এসময় আগত এক রোগী আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন থেকে হাসপাতাল কম্পাউন্ডে যত্রতত্রভাবে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স পাকিং করে রাখার কারণে আগত রোগী ও তাদের স্বজনদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিষয়টি জানতে পেরে হাসপাতালে সদ্য যোগদান করা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তিনটি করে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সগুলো হাসপাতাল কম্পাউন্ডে রাখার নির্দেশ প্রদান করেন। এবং বাকিসব বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতালের বাইরে রাখতে বলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বেলা ১টার দিকে স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্স মালিক জাবেদ সেলিম অপর অ্যাম্বুলেন্স মালিক জামাল সিকদারকে তার দুইটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে একটি ভিতরে রাখতে বলেন। এনিয়ে উভয়েরমধ্যে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। বিষয়টি মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে সেলিম এবং জামালের সমর্থকরা হামলা ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এসময় হাসপাতালের অভ্যন্তরের জরুরি বিভাগের সামনে উভয়গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালীন আগত রোগী ও তাদের স্বজনেরা এলোমেলো ছোটাছুটি শুরু করেন। একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায় চিকিৎসাসেবা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সংঘর্ষ চলাকালীন হাসপাতালে আগত এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। মৃত হাফিজুর রহমান (৬০) উপজেলার দিয়াশুর গ্রামের নুর মোহাম্মদ আকনের ছেলে। কর্তৃপক্ষ রোগী মৃত্যুর বিষয়টি স্বীকার করলেও বলছে, হাসপাতালে আনার আগেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।
হামলায় আহত জাবেদ সেলিমের ভাই সালাম বেপারি জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নির্দেশ অন্যসব অ্যাম্বুলেন্স চালকদের জানাতে গেলে পরিকল্পিতভাবে জামাল সিকদার এবং তার ছেলেরা হামলা চালিয়ে সেলিমকে বেধম মারধর করেছেন। হামলার খবর পেয়ে তিনি (সালাম) ও তার স্বজন ইলিয়াস সরদার ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তাদের ওপরও হামলা চালিয়ে আহত করা হয়। গুরুতর আহত জাবেদ সেলিমকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তবে হামলা চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জামাল সিকদারের ছেলে সাইদ সিকদার। তার দাবি, লোকজন নিয়ে সেলিম অশ্লীল ভাষায় তাদের গালিগালাস করেছেন। এর প্রতিবাদ করায় হামলা চালিয়ে তাকেসহ তার বাবা জামাল সিকদার, ভাই শাহাদাত সিকদার এবং হেলপার রাহাত ঘরামীকে মারধর করে আহত করেছেন।
গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. শাহতা জারাব সালেহিন বলেন, ‘হাসপাতালের মধ্যে হামলা ও সংঘর্ষ চলাকালীন তাৎক্ষণিক বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করা হয়। রোগীদের শতভাগ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসনকেও জানানো হয়েছে। এই ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
গৌরনদী মডেল থানা পুলিশের ওসি মো. তরিকুল ইসলাম জানান, ‘খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
Post Comment