হিজলায় দরিদ্রদের চাল নিয়ে নেতাদের কাড়াকাড়ি
হিজলা প্রতিনিধি ।।
বরিশালের হিজলা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দরিদ্রদের মধ্যে মানবিক সহায়তা কর্মসূচির (ভিজিএফ) আওতায় চাল বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। ইউপি থেকে রসিদের (স্লিপ) মাধ্যমে প্রতি পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। কিন্তু উপজেলার বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনের নেতারা সেই স্লিপের ভাগ চাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কোনো কোনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজেকে রক্ষায় রাজনৈতিক দলের নেতাদের চাপে দাবি করা চালের স্লিপ দিতে বাধ্য হয়েছেন। ফলে বরিশালের মেঘনাঘেরা হিজলা উপজেলায় প্রকৃত দুস্থদের আসন্ন ঈদের চাল পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ঈদের সময় ঘনিয়ে এলেও আজ শনিবার পর্যন্ত অনেকে এখনো চাল পাননি।
জানা গেছে, হিজলার বরজালিয়া ইউপিতে ৪ হাজার ৭০০ স্লিপের মধ্যে প্রায় ৩ হাজার বিএনপি, জামায়াত এবং ইসলামী আন্দোলনের নেতাদের বণ্টন করে দিতে হয়েছে। উপজেলা বিএনপির ৩ নেতা আব্দুল গাফফার তালুকদার, মনির দেওয়ান, আলতাফ হোসেন খোকনের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন ইউনিয়নে পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের চাপ দিয়েছেন।
বরজালিয়া ইউপির চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে ৪ হাজার ৭০০ জনকে চাল দেওয়ার জন্য স্লিপ দেওয়া হয়েছে। চাল বিতরণ চলমান রয়েছে। তবে অনেক রাজনৈতিক দল রয়েছে। সমন্বয় করেই কাজ করতে হচ্ছে।’
হরিনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির স্থানীয় নেতারা প্রথমে এখানে ৩ হাজার স্লিপ চান। এরপর তা কমিয়ে ১ হাজার ৮৫০টি দাবি করা হয়। এরপর জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী আন্দোলনের নেতারাও তাঁদের কর্মীদের জন্য স্লিপ দাবি করায় বিপাকে পড়তে হয়েছে।
হরিনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আলতাফ সরদার বলেন, আমি ৩৭০০ স্লিপ পেয়েছি। এখন পর্যন্ত বিতরণের সুরাহ করা যায়নি। সব দলের নেতারা তাঁদের অনুসারীদের জন্য স্লিপ চাচ্ছেন।’
এদিকে মেমানিয়া ইউপিতে সব দলের সমন্বয়ে দেড় হাজার স্লিপ দাবি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে বিএনপির ৩ নেতার প্রতিনিধি এবং জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনের নেতারা তাঁদের অনুসারীদের জন্য চাল দাবি করেছেন।
মেমানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন হাওলাদার বলেন, ‘চাল বিতরণ শুরু করতে পারিনি। আমার ইউপিতে ৩ হাজার ৭৪২ জনকে চালের স্লিপ বরাদ্দ পেয়েছি। যাঁরাই স্লিপ পাবেন, তাঁদের সশরীরে এসে চাল নিতে হবে।’
একই অবস্থা গুয়াবাড়িয়া, হিজলা গৌরবদী ইউনিয়ন পরিষদের। এসব ইউপির চেয়ারম্যান ও সচিবদের স্থানীয় নেতারা চালের স্লিপের জন্য চাপ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল গাফফার তালুকদার বলেন, ‘ঈদের চালের স্লিপ নেতারা চেয়েছেন এমনটি আমার জানা নেই। বরং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সভায় বলা হয়েছে, যারা প্রকৃত দুস্থ তাঁদের মাঝে চাল বিতরণ করতে হবে। আমি অনেককে জিজ্ঞাসা করেছি, তাঁরা বলেননি যে চালের স্লিপ কেউ চেয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদে আমার কোনো প্রতিনিধি নেই। এটা গুজব।’
হিজলা উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক নুরল আমিন বলেন, ‘এটা তো করছেই। রাজনৈতিক নেতাদেরও ভাগ দিয়েছে। আমাদের কী দেয়? দেখা গেছে ২ হাজার স্লিপ আসছে, আমাদের ২০০ দিয়েছে। রাজনৈতিক নেতারা অর্ধেকের বেশি নিচ্ছেন। শক্তির ওপর নির্ভর করে চেয়ারম্যানরা রাজনৈতিক নেতাদের স্লিপ দিয়েছেন।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইলিয়াছ হোসেন বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদে চালের স্লিপ পেতে নেতাদের চাপ দেওয়ার অভিযোগ জানা নেই। চেয়ারম্যানেরাও আমাকে জানাননি।’
Post Comment