২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা: মা ইলিশ রক্ষায় এবার মেঘনায় ড্রোন বসিয়ে পাহারা
নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
মা ইলিশ রক্ষায় নদ-নদীতে মাছ ধরার ওপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শুরু হচ্ছে। ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে এই সময়ে যৌথ বাহিনীর মাধ্যমে মাছ ধরা রোধ করাই মৎস্য অধিদপ্তরের মূল উদ্দেশ্য। তবে ইলিশের খনি হিসেবে পরিচিত বরিশালের হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার ৮২ কিলোমিটার মেঘনা নদী নিয়ন্ত্রণে এবার ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করবে প্রশাসন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিশাল মেঘনা নদীতে মাছ ধরা বন্ধ রাখতে নৌ পুলিশ ও হিজলা মৎস্য কর্মকর্তার উদ্যোগে ড্রোন উড়িয়ে নজর রাখা হবে। মা ইলিশ নিধনকারীদের ধরতে মেঘনা নদীতে নজরদারির জন্য অন্তত চারটি ড্রোন ব্যবহার করা হবে। ড্রোন যেখানে ইলিশ ধরার তথ্য দেবে, সেখানে দ্রুত স্পিডবোট নিয়ে অভিযান চালানো হবে। এছাড়া অভিযান পরিচালনার জন্য জেলায় ৩০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিত করে হিজলা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম বলেন, এবার দিনের বেলা জেলেদের নদীতে নামতে দেওয়া হবে না। রাতেও তাদের অভিযান চলবে। কিন্তু বিশাল মেঘনার ৮২ কিলোমিটার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। কোস্ট গার্ড, নৌ পুলিশ ও র্যাব তাদের সঙ্গে যৌথ অভিযানে থাকবে। সেনাবাহিনী প্রস্তুত থাকবে অভিযানে অংশ নেওয়ার জন্য। এছাড়া বিশাল মেঘনা নজরে রাখার জন্য এবার ড্রোন দিয়ে পাহারা দেওয়া হবে। অন্তত চারটি ড্রোন বসিয়ে যেখানে ইলিশ ধরা হবে, সেখানে স্পিডবোট নিয়ে অভিযান চালানো হবে।
মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ওমর সানি বলেন, আমরা মা ইলিশ রক্ষায় সচেতনতা সভা করেছি। দুটি স্পিডবোট দিয়ে অন্য বাহিনীর সঙ্গে যৌথ অভিযান চলবে। দরকার হলে সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে অভিযান চালানো হবে। থাকবেন তিনজন ম্যাজিস্ট্রেটও।
বরিশাল নৌ পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ইমরান হোসেন মোল্লা বলেন, হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় ড্রোন দিয়ে নজর রাখা হবে।
এদিকে এতসব কঠিন পদক্ষেপের কারণে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জেলার ৭৯ হাজার জেলে। তারা অভিযোগ করেছেন, সময়মতো এবং পর্যাপ্ত চাল তারা পান না। সেই সঙ্গে মহাজনের দাদনের চাপও তাদের রয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ জানান, ইলিশসমৃদ্ধ ৫৯টি ইউনিয়নের টাস্কফোর্সের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে এবং ৬৬ হাজার ৫২৪টি জেলে পরিবারকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হবে।
তবে মেহেন্দীগঞ্জের জেলে সুলতান বলেন, ২৫ কেজি চাল দিয়ে প্রায় এক মাস সংসার চালানো কঠিন। এই বেকার সময়ে সরকারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা উচিত। সদর উপজেলার জেলে ইউনুস মিয়াও একই কথা বলছেন। তিনি বলেন, তারা আইন মানতে প্রস্তুত, কিন্তু এই সময়ে জীবনধারণের জন্য খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করার দাবি তার।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় তারা মৎস্য পল্লিগুলোয় প্রচার এবং মৎস্যজীবী, আড়তদার ও বরফকলের মালিকদের নিয়ে সভা করেছেন। ৫৯টি ইলিশসমৃদ্ধ ইউনিয়নের টাস্কফোর্সের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ মেহেন্দীগঞ্জ ও হিজলায় মা ইলিশ রক্ষায় কোস্ট গার্ডসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযানে থাকবে। দুষ্কৃতকারীদের ঠেকাতে মেঘনা নদীতে নজর রাখার জন্য ড্রোন ব্যবহার করা হবে। নৌ পুলিশও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেসব স্থান থেকে জেলেরা নদীতে নামার চেষ্টা করবেন, সেখানে অভিযান চালাবে।
রিপন কান্তি জানান, মা ইলিশ নিধনকারীদের বিচারে ৩০ জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জেলায় ৭৯ হাজার জেলে রয়েছেন। এর মধ্যে ৬৬ হাজার ৫২৪ জেলে পরিবারকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে।
ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্যাহ জানান, এত চেষ্টার পরও জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষায় সফলতা আসছে না। তার মতে, গত বছর প্রায় ৪০ হাজার টন ইলিশ কম উৎপাদন হয়েছিল এবং এবারও উৎপাদন কমবে।
Post Comment