Loading Now

৯ মাস পর খুলছে সেন্টমার্টিনের দুয়ার, বিধি-নিষেধের খড়গে নানা শঙ্কা

অনলাইন ডেক্স ।।

দীর্ঘ ৯ মাস পর অবশেষে খুলছে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ পর্যটন কেন্দ্র সেন্টমার্টিনের দুয়ার। শনিবার (১ নভেম্বর) থেকে দ্বীপটিতে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা। তবে এক ডজন বিধি-নিষেধের খড়গে সেই ভ্রমণ ঘিরে তৈরি হয়েছে নানা শঙ্কা।

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, শনিবার থেকে সেন্টমার্টিন পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হলেও দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসতে হবে, সেখানে রাত্রিযাপন করা যাবে না। গত বছরের মতো এবারও পর্যটকদের মানতে হবে মোট ১২টি নির্দেশনা। কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ-এর জেটিঘাট থেকে সাগরপথে দ্বীপটিতে জাহাজে করে যাওয়া-আসায় সময় লাগে ১৪ ঘণ্টা। সেক্ষেত্রে সন্ধ্যা নামার আগেই যদি ফিরে আসতে হয়, তবে ঘোরাফেরার জন্য হাতে সময় থাকবে না বলেই চলে। ফলে এই জটিল নির্দেশনা মেনে কতজন পর্যটক সেন্টমার্টিনে যাবেন, সেটি বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে সরকারের এমন সিদ্ধান্তের কারণে নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ-এর জেটিঘাট থেকে জাহাজ না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাহাজ মালিকদের সংগঠন সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন।

এ বিষয়ে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘১ নভেম্বর থেকে সেন্টমার্টিনে জাহাজ চালানোর অনুমতি রয়েছে। কিন্তু পর্যটক বা যাত্রী না থাকায় জাহাজ চালানো সম্ভব হচ্ছে না। গত বছরের মতো ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে জাহাজ চালানোর প্রস্তুতি চলছে।’

 

অন্যদিকে পর্যটকরা রাত্রিযাপন করতে না পারলে ব্যবসায়িক দিক দিয়ে ক্ষতির মাঝেই পড়ে থাকবেন সেন্টমার্টিনের হোটেল ও রিসোর্ট মালিকরাও।

এ নিয়ে সেন্টমার্টিন হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি শিবলুল আযম কোরেশী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দ্বীপের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে দ্বীপে পর্যটন খাতের বিনিয়োগ ও স্থানীয়দের জীবন-জীবিকা ঝুঁকিতে ফেলে পরিবেশ রক্ষা ও ভালো পর্যটন আশা করা যাবে না।’

যেসব নির্দেশনা মানতে হবে পর্যটকদের

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বিআইডব্লিউটিএ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া সেন্টমার্টিন দ্বীপে কোনো নৌযান চলাচলের অনুমতি পাবে না। পর্যটকদের অবশ্যই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। সেখানে প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস এবং কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।

দ্বীপে ভ্রমণের সময়সূচি এবং পর্যটক উপস্থিতিও এবার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে। নভেম্বর মাসে পর্যটকরা শুধু দিনের বেলায় ভ্রমণ করতে পারবেন, রাত্রিযাপন করা যাবে না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাত্রিযাপনের অনুমতি থাকবে। ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে। প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারের বেশি পর্যটক দ্বীপে ভ্রমণ করতে পারবেন না।

সেন্টমার্টিনের প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে দ্বীপে রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি বা বারবিকিউ পার্টি করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা ক্রয়-বিক্রয়, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক ও অন্যান্য জীববৈচিত্রের ক্ষতি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এছাড়া সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ যেকোনো মোটরচালিত যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।

S5

নিষিদ্ধ পলিথিন বহন করা যাবে না এবং একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক, যেমন- চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, ৫০০ ও ১০০০ মিলি লিটারের প্লাস্টিক বোতল ইত্যাদি বহন করা যাবে না। এক্ষেত্রে পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক ভারসাম্য, জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও সৌন্দর্য রক্ষায় পর্যটকদের নির্দেশনাগুলো মানতেই হবে। সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।

নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেন্টমার্টিন দ্বীপের নাজুক পরিবেশ ও অনন্য জীববৈচিত্র্য সংরক্ষিত থাকবে এবং দ্বীপটি দায়িত্বশীল ও পরিবেশবান্ধব পর্যটনের উৎকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে উঠবে বলেও আশা করছেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।

তবে এত এত নির্দেশনা, জাহাজ মালিক সংগঠনের জাহাজ না চালানোর ঘোষণা- সব মিলিয়ে দীর্ঘ ৯ মাস পর সেন্টমার্টিন উন্মুক্ত হলেও সেখানে পর্যটকরা যাবেন তো? গেলেও স্বাচ্ছন্দে দ্বীপটিতে ঘুরতে পারবেন না কি না- এমন প্রশ্ন আর শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

তথ্য সূত্র : ঢাকা মেইল,,,,,

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED