অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শাটডাউন: ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ শিক্ষার্থীদের অবস্থান
নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
নয় দফা দাবিতে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শাটডাউন করে প্রতিকী প্রতিবাদ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ।
শনিবার (২৪ মে) সকাল ৯ টা থেকে বেলা ১ টা পর্যন্ত কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি ও প্রতিকী প্রতিবাদ করে। এছাড়াও তারা তাদের দাবির পক্ষে গণসাক্ষর কর্মসূচি পালন করে।
শিক্ষার্থীরা জানায়, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করার কারণে কয়েকদিন আগে ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থী ধ্রুবজিৎ কর্মকারকে বহিস্কার করা হয়। এরপর সে আত্মহত্যা করে। কম্পাইন্ড সিস্টেমে পরীক্ষার কারণে সে চাপ সামাল দিতে না পেরে এমন কাজ করেছে বলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মনে করে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ২০১৬ সালের পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত প্রযুক্তি ইউনিটের অধীন সকল কলেজ ও ইনস্টিটিউটে বিদ্যমান “কম্বাইন্ড পরীক্ষা পদ্ধতি” সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে গভীর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এছাড়া গুণগত শিক্ষা ও মূল্যায়ন নিশ্চিত না হওয়ায় এবং এই কম্বাইন্ড একাডেমিক সিস্টেমের জটিলতার কারণে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে একাডেমিক ও মানসিক ভোগান্তির শিকার হয়ে আসছে।
বিশেষত প্রশ্নপত্র প্রণয়নে অবহেলা এবং অযৌক্তিক মডারেশনের ফলে প্রায়শই সিলেবাসের বাইরে থেকে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয় এবং ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব সৃস্টি করছে।
এই সকল সমস্যা বিদ্যমান পদ্ধতির ব্যর্থতার বাস্তব প্রতিফলন। এই ভোগান্তি নিরসনের লক্ষ্যে বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ৯টি দাবি উত্থাপন করা হয়েছে।
দাবিগুলো হলো: স্ব-স্ব-প্রতিষ্ঠানের স্ব-স্ব ডিপার্টমেন্টের জন্য আলাদা আলাদা পরীক্ষা কমিটি গঠন করতে হবে। যেখানে প্রতি বর্ষের জন্য আলাদা কমিটি এবং প্রতি বর্ষের জন্য একজন সভাপতি নির্ধারিত থাকা।
প্রতিটি কমিটি চার সদস্যবিশিষ্ট হবে।যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একজন সভাপতি, স্ব-স্ব-প্রতিষ্ঠান থেকে দুইজন অভ্যন্তরীণ সদস্য এবং অধিভুক্ত অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে একজন সদস্য থাকবে। সকল সদস্য অবশ্যই সংশ্লিষ্ট বিভাগের হতে হবে।
পরীক্ষার সময়সূচি স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানভিত্তিক আলাদা হতে হবে।এক্ষেত্রে একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নির্ধারিত ১৪ (চৌদ্দ) সপ্তাহ শ্রেণি কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর ১৪ দিনের ছুটি রেখে পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু করতে হবে। ব্যবহারিক পরীক্ষা তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষ হওযার পর এক সপ্তাহের মধ্যে সম্পন্ন করা।
প্রশ্নপত্র মুদ্রণ ও উত্তরপত্র মূল্যায়ন স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান থেকেই পরিচালিত হতে হবে এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কোর্স সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ছাড়াও অন্য শিক্ষকদের উপস্থিত রাখা।
গ্রেডিংয়ে স্বচ্ছতা ও নিশ্চয়তা নিশ্চিত করা।শিক্ষকদের আচরণে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে এবং প্রশ্নপত্র অবশ্যই পাঠ্যসূচির সীমার মধ্যে হওয়া। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও ফলাফল সংরক্ষণে গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ট্যাবুলেশন ও গ্রেডিং কার্যক্রম স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হতে হবে, যাতে খুব অল্প সময়ের মধ্যে ফলাফল নিশ্চিত কর সম্ভব হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউট পর্যায়ে একজন পরীক্ষা সমন্বয়ক নিয়োগ দিতে হবে, যিনি এই সকল কার্যক্রমের সুষ্ঠু সমন্বয় নিশ্চিত করবেন।
এসময় বক্তব্য রাখেন কলেজের শিক্ষার্থী সীমান্ত, শাওন মাহমুদ, শাওলী ঘোষ, শুভ, ফাহিম ভূইয়া প্রমুখ।
তারা বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিযারিং কলেজ এবং ইনস্টিটিউটের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে একমাত্র বাস্তবসম্মত সমাধান হলো স্বতন্ত্র পরীক্ষা পদ্ধতি এবং একাডেমিক স্বকীয়তা এক্ষেত্রে, উপরোক্ত দাবিগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে লিখিত সিদ্ধান্ত প্রদান না করা হলে, বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীরা পরবর্তী কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।
উল্লেখ্য, লিখিত সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সকল প্রকার একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য সম্পূর্ণরূপে বন্ধ (শাটডাউন) ঘোষণা করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
Post Comment