বরিশালে চামড়া সংগ্রহ শুরু, মূল্যহীন ছাগলের চামড়া যাচ্ছে মাছের ঘেরে
নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
বরিশালে এবারও ছাগল ও খাসির চামড়া কিনেননি ব্যবসায়ীরা। কয়েক বছর ধরে বিদেশে রপ্তানিযোগ্য এই অর্থকরী পণ্যটি ব্যবসায়ীরা তাদের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন। এতে বিভাগের ছয়টি জেলায় প্রায় ১০ কোটি টাকা অর্থনীতির বাইরে থেকে গেছে।
কোরবানিদাতারা জানান, কম দামে গরুর চামড়া বিক্রি হলেও ছাগলের চামড়া একেবারেই বিক্রি হচ্ছে না। তাই পাইকারি বাজারের এসে ছাগলের চামড়া বিক্রি করতে না পেরে কয়েক বছর ধরে বাধ্য হয়েই কেউ মাটিতে পুঁত ফেলছেন, কেউ বা ফেলে দিচ্ছেন নদীতে, আবার কেউ কেউ মাছের খাদ্য হিসেবে ঘেরে ফেলছেন।
স্থানীয় আড়তদারদের ভাষ্য, ছাগলের চামড়া প্রস্তুত আর সংরক্ষণ করে ঢাকায় পাঠানো পর্যন্ত যা খরচ হয়, ট্যানারি ও পাইকারি আড়তদারা তার অর্ধেক দামও দিতে চায় না। ফলে কয়েক বছর ধরেই ছাগল ও খাসির চামড়া কিনছে না তারা।
বরিশাল হাইড অ্যান্ড স্কিন অ্যাসোসিয়েশন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ছাগল কিংবা খাসির চামড়া কিনে প্রসেস করতে ৫০-৬০ টাকা খরচ হয়। কিন্তু ট্যানারিতে বিক্রি করতে গেলে ২০-৩০ টাকার বেশি পাওয়া যায় না। ফলে ছাগলের চামড়া কেউ কিনছে না। বিক্রেতা আসলে তাদের এই কথা বললে দেখা যায়, তারা চামড়া দোকানের সামনেই ফেলেই চলে যাচ্ছেন। গরু চামড়া প্রসেস শেষে বড় ও ভালমানের ছাগলের চামড়া হয়তো কেউ লবণ মাখিয়ে সংরক্ষণ করতে পারেন। না হলে তা ফেলে দেবেন।’
শনিবার (৭ জুন) বিকেলে বরিশালে পশুর চামড়ার পাইকারি হাট পদ্মাবতী ও পেঁয়াজপট্টি গিয়ে দেখা যায়, ছয়জন ব্যবসায়ী এ বছর কোরবানির চামড়া সংগ্রহ করছেন। এর মধ্যে পেঁয়াজপট্টি এলাকায় পশুর চামড়া ব্যবসায়িক সমিতি হাইড অ্যান্ড স্কিন অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি বাচ্চু মিয়া, পদ্মাবতী এলাকার নাসির উদ্দিন, মো. শাহিন এবং জিল্লুর রহমান মাসুমসহ আরও দুইজন।
সেখানে নগরীসহ বরিশালের বিভিন্ন স্থান থেকে রিকশা, ভ্যান ও ট্রাকে করে চামড়া নিয়ে আসছেন কোরবানিদাতা, মৌসুমি ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন মাদরাসা ও এতিমখানা কর্তৃপক্ষ। সেই চামড়া নেড়েচেড়ে দেখে দরদাম করলেও ছাগল এবং খাসির চামড়া নিয়ে কাউকে কথা বলতে দেখা যায়নি। ফলে ওই চামড়াগুলো আড়তের সামনে ফেলে রেখে গেছেন কোরবানিদাতা এবং মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
নগরীর কাউনিয়া বিসিক রোড এলাকার সাইফুল ইসলাম রিপন বলেন, ‘গত তিন বছর ধরে ছাগল কিংবা খাসির চামড়ার অর্থকরী পণ্যের তালিকা থেকে বরিশালের ব্যবসায়ীরা বাদই দিয়েছেন। এই চামড়ার কোনো মূল্য তাদের কাছে নেই। এর আগে ১০ থেকে ২০ টাকা চেয়ে চিন্তে নেওয়া যেতো। গত চার বছর ধরে ছাগলের চামড়া নিয়ে কেউ কথাই বলছেন না। এ বছর কিনবে জানালে দোকানের সমানেই ফেলে এসেছি।’
নগরীর নগরেরপুল এলাকার রিয়াজুল কারীম বলেন, ২০ হাজার টাকার মূল্যের খাসির চামড়াটি বিক্রি জন্য পদ্মবতীতে গিয়েছিলাম। বিক্রি করতে না পেরে সেটি কীর্তনখোলা নদীতে ফেলে দিয়েছি।
এদিকে মৌসুমি চামড়া বিক্রেতা জিল্লুর রহমান মাসুম জানান, বেশিরভাগ চামড়াই এবার মাদ্রাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে দান করেছেন কোরবানি দাতারা। কিন্তু চামড়া আড়তদারদের কাছে গিয়ে ভালো দাম পাচ্ছেন না তারা। প্রকারভেদে চামড়া ৫০০-৬০০ টাকা দরে কিনে নিচ্ছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
যদিও ভালোমানের ও লবণ দেওয়া চামড়া ১০০০ থেকে ১২০০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। তবে এবারও অনাগ্রহ রয়েছে ছাগলের চামড়ায়। এবার ছাগলের চামড়ার বিনিময়ে তেমন টাকা দিতে চাচ্ছেন না আড়তদাররা।
আড়তদাররা বলছেন, ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে তাদের পূর্বের বকেয়া রয়েছে। মালিকরা তাদের বকেয়া পরিশোধ করছেন না। ফলে অর্থ সংকটে নগদ মূল্যে চামড়াও তেমনভাবে সংগ্রহ করতে পারছেন না। তারপরও এ বছর বরিশাল মহানগরীতে ৫০ হাজার পিস চামড়া সংগ্রহ করা যাবে বলে আশা করেন ব্যবসায়ীরা।
উজিরপুর উপজেলার হারতা এলাকার স্কুলশিক্ষক আসাদুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, আমাদের এই এলাকার কোরবানিদাতারা ছাগলের চামড়া বিক্রি করতে না পেরে বেশির ভাগই মাছে ঘেরে ফেলে দিয়েছেন।
বরিশাল হাইড অ্যান্ড স্কিন অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি বাচ্চু মিয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘জাপানসহ বেশ কিছু দেশে ছাগলের চামড়াজাত পণ্যের বিপুল চাহিদা থাকলেও অযত্নে-অবহেলায় সেই সম্ভাবনা কাজে লাগানো পারেছে না সরকার। এছাড়া ট্যানারি ও ঢাকার পাইকারি আড়তে ছাগল ও খাসির চামড়ার সঠিক দাম না পাওয়ায় বরিশালের ব্যবসায়ীরা কিনছে না।’
তিনি বলেন, গরুর চামড়া নিয়ে আসলে আমরা কাউকে ফেরত দিইনি। গত কয়েক বছর ধরে ছাগলের চামড়ার কোনো মূল্য ওঠে না বরিশালের বাজারে। তার পরও অনেকেই ছাগলের চামড়া নিয়ে আসছেন। আমি ফেরত নিয়ে যেতে বলি, কিন্তু বেশিরভাগেই ফেরত না নিয়ে ফেলে রেখে যাচ্ছেন।
Post Comment