Loading Now

খোকনের অনিয়ম দুর্নীতির পিছনে নাটের গুরু এপিএস রুবেল!

♦রাইসুল ইসলাম অভি :

বরিশাল সিটি করপোরেশনের সদ্য পদচ্যুত মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের একান্ত সহকারী সচিব (এপিএস) রুবেল হাওলাদার। মেয়রের অনিয়ম ও দুর্নীতির পেছনে নাটের গুরু ছিলেন তিনি। তার নির্দেশে বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও কর্মসূচির ব্যয় বাড়াতে ভুয়া ভাউচার তৈরি করা হতো। এসব প্রোগ্রামের টাকা কয়েক গুণ বাড়িয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

একই সঙ্গে কিছু সাংবাদিককে সুবিধা দিয়ে নিজস্ব বলয় তৈরি করে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন। সাবেক মেয়রের এই এপিএসের বিরুদ্ধে রয়েছে এরকম বিস্তর অভিযোগ।বরিশাল সিটি করপোরেশনের একাধিক সুত্র জানায় বিসিসি গঠিত হবার পর এখন পর্যন্ত যত মেয়র এসেছে তাদের সাথে যতজন এপিএস এসেছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালি ছিলেন এই রুবেল হাওলাদার। বরিশাল সিটি করপোরেশনের সদ্য পদচ্যুত মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ যখন নৌকার মনোনয়ন পান তখন এই ছেলের আর্বিভাব ঘটে বরিশাল নগরীতে। তিনি ঢাকা বাংলা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন।বরগুনা এলাকার বাসিন্দা এই রুবেল হাওলাদার বিগত ১ বছরে প্রায় অর্ধকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। মেয়র খোকনের কাছ থেকে প্রাপ্য এপিএস পদটি যেন অনেক টা আলাদীনের চেরাগ ছিল রুবেলের কাছে। মেয়র নির্বাচিত হয়ে খোকন সেরনিয়াবাত অফিসিয়ালি রুবেলকে এপিএস হিসেবে নিয়োগ দেন।এর আগে মেয়রের নির্বাচন এর সময় বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের ও রাজনীতিবিদদের ডোনেশন গ্রহন করতেন রুবেল। যেহেতু এই ছেলে বরিশাল চিনত না সেজন্য নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে নির্মাণাধীন বিল্ডিং, ও রাস্তাঘাটের কাজ লিষ্ট করে নিয়ে আসতেন।পরবর্তীতে কর্পোরেশনের টিম নিয়ে ঐ সকল নির্মাণাধীন বাসায় হানা দিতেন।বিভিন্ন অনিয়ম খুজে বের করতেন এবং পরবর্তীতে কারও কাছ থেকে উপঢৌকন নিয়ে হয়ত থেমে যেতেন আর যাদের কাছ থেকে আসত না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলতেন। বলাবাহুল্য বিসিসির চাকুরী বিধিনুযায়ী এই এপিএস ৯ম গ্রেডের হলেও তার ভয়ে তটস্থ থাকতে হতো ১ ম শ্রেনীর কর্মকর্তা ও নির্বাচিত কাউন্সিলরদের।মেয়রের স্ত্রীর আস্কারায় এই রুবেল বিধান ভেঙে ব্যবহার করতেন কর্পোরেশনের কালো পাজেরো স্পোর্টস গাড়ি যা ব্যবহারের নিয়ম রয়েছে উপসচিব পদমর্যাদার ব্যক্তিদের।
নগরীর বিভিন্ন চলমান উন্নয়ন কাজের পরিদর্শন করতেন এপিএস রুবেল। আবার সেগুলো নিজের আজ্ঞাবহ ক্যামেরাম্যনকে দিয়ে মেইল পাঠানো হত পত্রিকার কার্যালয়গুলোতে।কিছু মিডিয়া আবার তার সেই ছবি অনেক বড় করে কাভারেজ দিত।কিন্তু জনপ্রশাসন বিশ্লেষক ড. ইকরাম চৌধুরীর মতে একজন মেয়রের এপিএস সাংবিধানিক কোন পদ নয়।তিনি কখনো এ ধরনের ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবেন না এবং যদি কেউ এই ক্ষমতা অপব্যবহার করার মামলা করে সেজন্য জেল জরিমানার শিকার হতে হবে তাকে।বরিশাল সিটি করপোরেশনের একাধিক কাউন্সিলর জানান, আমরা জনপ্রতিনিধি, অথচ ঐ ছেলে এমন ব্যবহার করত যেন সে নিজেই মেয়র।রাত বিরাতে ফোন করে ঠুনকো বিষয়ে নোট নিতে বলত।আবার কোন কাজের কৈফিয়ত চাইত।কথিত রয়েছে নগর ভবনের অনেক কর্মকর্তা কর্মচারীদের ফোনে গালিগালাজ করতো এই এপিএস রুবেল।
মেয়রের নামে বিভিন্ন স্থান থেকে উঠাতো বিটমানি।কর্পোরেশনের আয় বর্ধক জায়গা থেকে উতকোছ নিত এই এপিএস।
কর্পোরেশনের মেয়রের ব্যায় নামে বিভিন্ন ভুয়া ভাউচার তৈরি করে অর্থ আত্নসাত করতো রুবেল আর তার এই কাজে সহযোগিতা করতেন বাজেট কাম হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মশিউর রহমান। যদিও মশিউর রহমান এর সাথে এ বিষয়ে আলাপ করলে তিনি জানান রুবেলের কৃতকর্মের দায়ভার তিনি নিবেন না আর যা হয়েছে তা মেয়রের গ্রীন সিগনালের জন্যই হয়েছে। তিনি একজন অধিন্যাস্ত কর্মচারী মাত্র।
সিটি করপোরেশনের একজন কর্মকর্তা জানান, নগর ভবনের এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে রুবেল হাওলাদার পদচারণা করেননি।বিভিন্ন ভাউচার বিল পরিশোধ করতে তার অনুমোদন লাগত।
অভাবনীয় গনঅভ্যুত্থানে বিদায় নিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার।একে একে গা ঢাকা দিয়েছেন শেখ পরিবারের সদস্যরাও।সরকার পতনের ১ দিন আগেই গা ঢাকা দিয়েছেন অর্থাৎ ৪ আগষ্ট রাতেই বরিশাল ছেড়ে আত্নগোপন এ গেছেন সাবেক মেয়র খোকন ও তার স্ত্রী এবং পুত্র। একই সাথে বরিশাল ছেড়েছেন তাদের অপকর্মের নাটের গুরু এপিএস রুবেল হাওলাদার। বরিশালের তথাকথিত সুশীল ও কিছু সুবিধা ভোগী লীগ নেতারা ভালো মানুষ আখ্যা দিয়েছিল এই লুটপাট খোকন সেরনিয়াবাত কে। তাহলে এই ভালো মানুষ কেনই বা পাললো সরকার পতনের আগেই? কিংবা কেন ফিরে এলো না ৫ আগষ্টের পরে?কেন চলে গেল আত্নগোপনে? প্রবল জনরোষে গণধোলাইয়ের ভয়ে নাকি ৮ মাস করা সীমাহীন অত্যাচার দুর্নীতির ফলে জেল জুলুমের ভয়ে?জানতে হলে চোখ রাখুন দখিনের প্রতিবেদনে। তবে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বরপুত্র এই এপিএস রুবেল হাওলাদার যেন পালাতে না পারে সেজন্য আমাদের সজাগ থাকতে হবে। মিস্টি চেহারার অন্তরালের এই বানর, মিস্টার ১পার্সেন্ট রুবেল কোথায় আছে কেউ জানলে অবশ্যই তথ্য দিন আমাদের। তবে রুবেলের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পর্কে জানতে রুবেলের মুঠোফোন নাম্বার এ ফোন দেয়া হলে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন (০১৭২৬….)বন্ধ পাওয়া যায়। একই সাথে হোয়াটসঅ্যাপ এ ম্যাসেজ দিলেও তিনি কোন সাড়া দেন নি।

 

Post Comment

YOU MAY HAVE MISSED